OrdinaryITPostAd

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শাস্তি ও সমালোচনা

বর্তমান বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যপক ব্যবহারের মাধ্যমে এর সুফল ভোগের পাশাপাশি এর অপপ্রয়োগও ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে।আর এসব অপপ্রয়োগ রোধ করার লক্ষ্যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয় ২০১৮ সালে।ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাস্তির বিধান করা হয়েছে যাতে অপরাধী বার বার একই অপরাধ না করতে পারে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে শাস্তির কথা উল্লেখ থাকলেও বর্তমানে সেটার খুব বেশি প্রয়োগ চোখে পড়ে না।তাছাড়া ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কার্যকরের পর থেকে অনেকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও কথা বলার স্বাধীনতা লোপ পেয়েছে।এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীন শাস্তির বিধান এবং ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা সম্পর্কে আলোকপাত করা হবে। 


আর্টিকেলের সূচিপত্র(যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)

  1. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শাস্তি সমূহ।
  2. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা 
  3. প্রশ্ন-উত্তর সেকশন 
  4. লেখকের মন্তব্য 

১.ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীন শাস্তিসমূহ|ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শাস্তি ও সমালোচনা

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন,২০১৮'র ১৭ থেকে ৩৮ধারা পর্যন্ত অপরাধ ও দন্ডের বিধান বর্ণিত হয়েছে।

ধারা ১৭ অনুসারে-

কেউ যদি ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে কাউকে ভয়ভীতি দেখায় অথবা রাষ্ট্রের ক্ষতি করে তাহলে তা হবে অ-জামিনযোগ্য অপরাধ।এই অভিযোগে শাস্তির বিধান হলো-কারো বিরুদ্ধে দোষ প্রমাণিত হলে তার ১৪ বছরের কারাদণ্ড অথবা ১ কোটি টাকা জরিমানা অথবা উভয় দন্ড হতে পারে।

ধারা ১৮ অনুসারে-

ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস, কম্পিউটার সিস্টেমে বেআইনি প্রবেশ করলে বা সহায়তা করলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড। ১০ লাখ টাকা জরিমানা।

ধারা ১৯ অনুসারে-

বেআইনি ভাবে যদি কোন ব্যক্তি কম্পিউটার বা কম্পিউটার সিস্টেম হতে উপাত্ত,উপাত্ত ভান্ডার,তথ্য বা উদ্ধৃতাংশ বা কোন উপাত্তের অনুলিপি সংগ্রহ করে তাহলে সর্বোচ্চ সাত বছরের কারাদণ্ড জরিমানা ১০ লক্ষ টাকা।

ধারা ২০ অনুসারে-

কম্পিউটার সোর্স কোড পরিবর্তন,ধ্বংস করলে সর্বোচ্চ ৩ বছরের কারাদণ্ড, ৩ লাখ টাকা জরিমানা।

ধারা ২১ এ বলা হয়েছে-

(১)যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো প্রকার প্রপাগান্ডা ও প্রচারণা চালান বা উহাতে মদদ প্রদান করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১(এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, বা ৩(তিন) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন

ধারা ২২ এ বলা হয়েছে-

যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করিয়া জালিয়াতি করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫(পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭(সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘‘ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক জালিয়াতি’’ অর্থ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক বিনা অধিকারে বা প্রদত্ত অধিকারের অতিরিক্ত হিসাবে বা অনধিকার চর্চার মাধ্যমে কোনো কম্পিউটার বা ডিজিটাল ডিভাইসের ইনপুট বা আউটপুট প্রস্তুত, পরিবর্তন, মুছিয়া ফেলা ও লুকানোর মাধ্যমে অশুদ্ধ ডাটা বা প্রোগ্রাম, তথ্য বা ভ্রান্ত কার্য, তথ্য সিস্টেম, কম্পিউটার বা ডিজিটাল নেটওয়ার্ক পরিচালনা।

ধারা ২৩ এ বলা হয়েছে- 

(১) যদি কোনো ব্যক্তি ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যম ব্যবহার করিয়া প্রতারণা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭(সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘‘ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা’’ অর্থ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে অথবা অনুমতি ব্যতিরেকে কোনো কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম, ডিজিটাল নেটওয়ার্কে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের কোনো তথ্য পরিবর্তন করা, মুছিয়া ফেলা, নূতন কোনো তথ্যের সংযুক্তি বা বিকৃতি ঘটানোর মাধ্যমে উহার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাস করা, তাহার নিজের বা অন্য কোনো ব্যক্তির কোনো সুবিধা প্রাপ্তির বা ক্ষতি করিবার চেষ্টা করা বা ছলনার আশ্রয় গ্রহণ করা।

ধারা ২৪ এ বলা হয়েছে- 

(১) যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার প্রোগ্রাম, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, কোনো ডিজিটাল ডিভাইস, ডিজিটাল সিস্টেম বা ডিজিটাল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করিয়া-

(ক) প্রতারণা করিবার বা ঠকাইবার উদ্দেশ্যে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচয় ধারণ করেন বা অন্য কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত কোনো তথ্য নিজের বলিয়া প্রদর্শন করেন, বা

(খ) উদ্দেশ্যমূলকভাবে জালিয়াতির মাধ্যমে কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির ব্যক্তিসত্তা নিম্নবর্ণিত উদ্দেশ্যে নিজের বলিয়া ধারণ করেন,

(অ) নিজের বা অপর কোনো ব্যক্তির সুবিধা লাভ করা বা করাইয়া দেওয়া,

(আ) কোনো সম্পত্তি বা সম্পত্তির স্বার্থ প্রাপ্তি,

(ই) অপর কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিসত্তার রূপ ধারণ করিয়া কোনো ব্যক্তি বা ব্যক্তিসত্তার ক্ষতিসাধন,

তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫(পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ধারা ২৫ এ বলা হয়েছে- 

(১) যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে,-

(ক) ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে, এমন কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ করেন, যাহা আক্রমণাত্মক বা ভীতি প্রদর্শক অথবা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো ব্যক্তিকে বিরক্ত, অপমান, অপদস্থ বা হেয় প্রতিপন্ন করিবার অভিপ্রায়ে কোনো তথ্য-উপাত্ত প্রেরণ, প্রকাশ বা প্রচার করেন, বা

(খ) রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বা সুনাম ক্ষুণ্ণু করিবার, বা বিভ্রান্তি ছড়াইবার, বা তদুদ্দেশ্যে, অপপ্রচার বা মিথ্যা বলিয়া জ্ঞাত থাকা সত্ত্বেও, কোনো তথ্য সম্পূর্ণ বা আংশিক বিকৃত আকারে প্রকাশ, বা প্রচার করেন বা করিতে সহায়তা করেন,

তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৩ (তিন) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ধারা ২৬ এ বলা হয়েছে- 

যদি কোনো ব্যক্তি আইনগত কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে অপর কোনো ব্যক্তির পরিচিতি তথ্য সংগ্রহ, বিক্রয়, দখল, সরবরাহ বা ব্যবহার করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘‘পরিচিতি তথ্য’’ অর্থ কোনো বাহ্যিক, জৈবিক বা শারীরিক তথ্য বা অন্য কোনো তথ্য যাহা এককভাবে বা যৌথভাবে একজন ব্যক্তি বা সিস্টেমকে শনাক্ত করে, যাহার নাম, ছবি, ঠিকানা, জন্ম তারিখ, মাতার নাম, পিতার নাম, স্বাক্ষর, জাতীয় পরিচয়পত্র, জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন নম্বর, ফিংগার প্রিন্ট, পাসপোর্ট নম্বর, ব্যাংক হিসাব নম্বর, ড্রাইভিং লাইসেন্স, ই-টিআইএন নম্বর, ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল স্বাক্ষর, ব্যবহারকারীর নাম, ক্রেডিট বা ডেবিট কার্ড নম্বর, ভয়েজ প্রিন্ট, রেটিনা ইমেজ, আইরেস ইমেজ, ডিএনএ প্রোফাইল, নিরাপত্তামূলক প্রশ্ন বা অন্য কোনো পরিচিতি যাহা প্রযুক্তির উৎকর্ষতার জন্য সহজলভ্য।

ধারা ২৭ এ বলা হয়েছে- 

যদি কোনো ব্যক্তি—

(ক) রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা এবং জনগণ বা উহার কোনো অংশের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করিবার অভিপ্রায়ে কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে বৈধ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন বা বে-আইনি প্রবেশ করেন বা করান, বা

(খ) কোনো ডিজিটাল ডিভাইসে এইরূপ দূষণ সৃষ্টি করেন বা ম্যালওয়্যার প্রবেশ করান যাহার ফলে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে বা গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হন বা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়, বা

(গ) জনসাধারণের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ও সেবা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসসাধন করে বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে, বা

(ঘ) ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক, সংরক্ষিত কোনো তথ্য-উপাত্ত বা কম্পিউটার ডাটাবেইজে প্রবেশ বা অনুপ্রবেশ করেন বা এমন কোনো সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত বা কম্পিউটার ডাটাবেইজে প্রবেশ করেন যাহা বৈদেশিক কোনো রাষ্ট্রের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা জনশৃংখলা পরিপন্থি কোনো কাজে ব্যবহৃত হইতে পারে অথবা বৈদেশিক কোনো রাষ্ট্র বা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুবিধার্থে ব্যবহার করা হইতে পারে,

তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি সাইবার সন্ত্রাসের অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ধারা ২৮ এ বলা হয়েছে- 

(১) যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করিবার বা উস্কানি প্রদানের অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যাহা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ২০ (বিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ধারা ২৯ এ বলা হয়েছে- 

(১) যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে Penal Code (Act XLV of 1860) এর section 499 এ বর্ণিত মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তজ্জন্য তিনি অনধিক ৩ (তিন) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ধারা ৩০ এ বলা হয়েছে- 

(১) যদি কোনো ব্যক্তি—

(ক) কোনো ব্যাংক, বিমা বা অন্য কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা মোবাইল আর্থিক সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হইতে কোনো ইলেকট্রনিক বা ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করিয়া আইনানুগ কর্তৃত্ব ব্যতিরেকে ই-ট্রানজেকশন করেন, বা

(খ) সরকার বা বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক, সময় সময়, জারিকৃত কোনো ই-ট্রানজেকশনকে অবৈধ ঘোষণা করা সত্ত্বেও ই-ট্রানজেকশন করেন,

তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ব্যাখ্যা।- এই ধারার উদ্দেশ্য পূরণকল্পে, ‘‘ই-ট্রানজেকশন’’ অর্থ কোনো ব্যক্তি কর্তৃক তাহার তহবিল স্থানান্তরের জন্য কোনো ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে কোনো সুনির্দিষ্ট হিসাব নম্বরে অর্থ জমা প্রদান বা উত্তোলন বা উত্তোলন করিবার জন্য প্রদত্ত নির্দেশনা, আদেশ বা কর্তৃত্বপূর্ণ আইনানুগ আর্থিক লেনদেন এবং কোনো ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর।

ধারা ৩১ এ বলা হয়েছে- 

(১) যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যাহা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় বা ঘটিবার উপক্রম হয়, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১০ (দশ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ধারা ৩২ এ বলা হয়েছে- 

(১) যদি কোনো ব্যক্তি Official Secrets Act, 1923 (Act No. XIX of 1923 এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ডিজিটাল মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ২৫ (পঁচিশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয়বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১(এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ধারা ৩৩ এ বলা হয়েছে- 

(১) যদি কোনো ব্যক্তি কম্পিউটার বা ডিজিটাল সিস্টেমে বে-আইনি প্রবেশ করিয়া সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কোনো আর্থিক বা বাণিজ্যিক সংস্থার কোনো তথ্য-উপাত্তের কোনোরূপ সংযোজন বা বিয়োজন, স্থানান্তর বা স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করেন বা করিতে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এর অধীন কোনো অপরাধ সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৫ (পাঁচ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১০ (দশ) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(৩) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি অনধিক ৭ (সাত) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১৫ (পনেরো) লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

ধারা ৩৪ এ বলা হয়েছে- 

(১) যদি কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং করেন, তাহা হইলে উহা হইবে একটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ১৪ (চৌদ্দ) বৎসর কারাদণ্ডে, বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

(২) যদি কোনো ব্যক্তি উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত অপরাধ দ্বিতীয় বার বা পুনঃপুন সংঘটন করেন, তাহা হইলে তিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে, বা অনধিক ৫ (পাঁচ) কোটি টাকা অর্থদণ্ডে, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।

 ব্যাখ্যা।— এই ধারায় ‘‘হ্যাকিং’’ অর্থ—

(ক) কম্পিউটার তথ্য ভাণ্ডারের কোনো তথ্য বিনাশ, বাতিল, পরিবর্তন বা উহার মূল্য বা উপযোগিতা হ্রাসকরণ বা অন্য কোনোভাবে ক্ষতিসাধন; বা

(খ) নিজ মালিকানা বা দখলবিহীন কোনো কম্পিউটার, সার্ভার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশের মাধ্যমে উহার ক্ষতিসাধন।

ধারা ৩৫ এ বলা হয়েছে- 

(১) যদি কোনো ব্যক্তি এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করেন, তাহা হইলে উক্ত ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে একটি অপরাধ।

(২) অপরাধ সংঘটনে সহায়তা করিবার ক্ষেত্রে, মূল অপরাধটির জন্য যে দণ্ড নির্ধারিত রহিয়াছে, কোনো ব্যক্তি সেই দণ্ডেই দণ্ডিত হইবেন।

ধারা ৩৬ এ বলা হয়েছে-

(১) কোনো কোম্পানি কর্তৃক এই আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে, উক্ত অপরাধের সহিত প্রত্যক্ষ সংশ্লিষ্টতা রহিয়াছে কোম্পানির এইরূপ প্রত্যেক মালিক, প্রধান নির্বাহী, পরিচালক, ম্যানেজার, সচিব, অংশীদার বা অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী বা প্রতিনিধি উক্ত অপরাধ সংঘটন করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন, যদি না তিনি প্রমাণ করিতে সক্ষম হন যে, উক্ত অপরাধ তাহার অজ্ঞাতসারে হইয়াছে বা উক্ত অপরাধ রোধ করিবার জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।

(২) উপ-ধারা (১) এ উল্লিখিত কোম্পানি আইনগত ব্যক্তি সত্তা বিশিষ্ট সংস্থা হইলে, উক্ত ব্যক্তিকে অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা ছাড়াও উক্ত কোম্পানিকে আলাদাভাবে একই কার্যধারায় অভিযুক্ত ও দোষী সাব্যস্ত করা যাইবে, তবে উহার উপর সংশ্লিষ্ট বিধান মোতাবেক কেবল অর্থদণ্ড আরোপযোগ্য হইবে।

 ব্যাখ্যা।—এই ধারায়—

(ক) ‘‘কোম্পানি’’ অর্থে কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান, অংশীদারি কারবার, সমিতি, সংঘ বা সংগঠনও অন্তর্ভুক্ত;

(খ) বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে, ‘‘পরিচালক’’ অর্থে উহার কোনো অংশীদার বা পরিচালনা বোর্ডের সদস্যও অন্তর্ভুক্ত।

ধারা ৩৭ অনুসারে-

কোনো ব্যক্তি ধারা ২২ এর অধীন ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক জালিয়াতি, ধারা ২৩ এর অধীন ডিজিটাল বা ইলেকট্রনিক প্রতারণা এবং ধারা ২৪ এর অধীন পরিচয় প্রতারণা বা ছদ্মবেশ ধারণের মাধ্যমে অপর কোনো ব্যক্তির আর্থিক ক্ষতিসাধন করিলে, ট্রাইব্যুনাল, সৃষ্ট ক্ষতির সমতুল্য অর্থ বা তদ্‌বিবেচনায় উপযুক্ত পরিমাণ অর্থ ক্ষতিপূরণ হিসাবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিকে প্রদানের জন্য আদেশ দিতে পারিবে।

ধারা ৩৮ অনুসারে-

তথ্য-উপাত্ত প্রাপ্তির বন্দোবস্ত করিবার কারণে কোনো সেবা প্রদানকারী এই আইন বা তদ্‌ধীন প্রণীত বিধির অধীন দায়ী হইবেন না, যদি তিনি প্রমাণ করিতে সক্ষম হন যে, সংশ্লিষ্ট অপরাধ বা লঙ্ঘন তাহার অজ্ঞাতসারে ঘটিয়াছে বা উক্ত অপরাধ যাহাতে সংঘটিত না হয় তজ্জন্য তিনি যথাসাধ্য চেষ্টা করিয়াছেন।

ধারা ৪০ এ অপরাধের তদন্তের মেয়াদ সম্পর্কে বলা হয়েছে।ধারা ৪০ এ বলা হয়েছে- ৪০। (১) তদন্তকারি অফিসার—

(ক) কোনো অপরাধ তদন্তের দায়িত্ব প্রাপ্তির তারিখ হইতে ৬০ (ষাট) দিনের মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করিবেন;

(খ) দফা (ক) এর অধীন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তদন্ত কার্য সম্পন্ন করিতে ব্যর্থ হইলে তিনি, তাহার নিয়ন্ত্রণকারি অফিসারের অনুমোদন সাপেক্ষে, তদন্তের সময়সীমা অতিরিক্ত ১৫ (পনেরো) দিন বৃদ্ধি করিতে পারিবেন;

(গ) দফা (খ) এর অধীন নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কোনো তদন্ত কার্য সম্পন্ন করিতে ব্যর্থ হইলে তিনি উহার কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া বিষয়টি প্রতিবেদন আকারে ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করিবেন, এবং ট্রাইব্যুনালের অনুমতিক্রমে, পরবর্তী ৩০ (ত্রিশ) দিনের মধ্যে তদন্ত কার্যক্রম সম্পন্ন করিবেন।

(২) উপ-ধারা (১) এর অধীন তদন্তকারি অফিসার কোনো তদন্ত কার্য সম্পন্ন করিতে ব্যর্থ হইলে ট্রাইব্যুনাল তদন্তের সময়সীমা, যুক্তিসঙ্গত সময় পর্যন্ত, বৃদ্ধি করিতে পারিবে।


২.ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সমালোচনা|ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শাস্তি ও সমালোচনা 

বর্তমান বিশ্বে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার ঊর্ধ্বমুখি।আর এই ঊর্ধ্বমুখি ব্যবহারের ফলে ডিজিটাল মাধ্যমেগুলোতে মানুষ বেশ আসক্ত। এই আসক্তি থেকে অনেকে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে বিভিন্ন অপরাধের সাথে যুক্ত হচ্ছে। এমনকি অনেক মানুষ এখন নিরাপদভাবে ডিজিটাল মাধ্যমগুলো ব্যবহার করতে পারছে না শুধুমাত্র এসব গুটিকয়েক অপরাধীর জন্য। তারা বিভিন্ন সময়ে মানুষের প্রোফাইল বা কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশ করে ব্যক্তিগত তথ্য অপহরণসহ বিভিন্ন অপরাধ করে যাচ্ছে। ২০১৮ সালে তাদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করা হয়। কিন্তু ২০২২ সালে এসেও মানুষ অপরাধ করে যাচ্ছে। ৪ বছর পূর্বে আইন তৈরি করেও এটার বাস্তব প্রয়োগ খুব বেশি চোখে পড়ে না। 

কথা বলার বা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা সকল নাগরিকেরই আছে।কিন্তু ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মানুষের সেই ভাব প্রকাশের অধিকার মাঝে মাঝে ক্ষুন্ন করছে।একটি রাষ্ট্রের উন্নয়নের জন্য রাষ্ট্রের সমালোচনা খুবই প্রয়োজন। কারণ একটি রাষ্ট্র পরিচালনার সময় সরকার বিভিন্ন ভুল করতে পারে আর সেই ভুল সংশোধন করার জন্য সমালোচনার দরকার এতে রাষ্ট্রের ও রাষ্ট্রের মানুষের  উন্নতি বই অবনতি হয় না।কিন্তু বর্তমানে দেখা যাচ্ছে রাষ্ট্রের কোন বিষয় নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কেউ কিছু লিখতে বা বলতে পারছে না কারণ ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তাকে সেটা করতে বাধা দিচ্ছে। একজন মানুষের এই ভাব প্রকাশের অধিকার ক্ষুন্ন করার দিকটি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের একটি উল্লেখযোগ্য খারাপ দিক।

যদি এই আইনকে তুচ্ছ না ভেবে কঠোর প্র‍য়োগ করা যায় তাহলে একমাত্র ডিজিটাল মাধ্যমে ঘটিত অপরাধের হার কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।সাথে প্রত্যেক নাগরিকের ভাব প্রকাশের অধিকার বলবৎ রাখতে হবে। 

আরও পড়ুনঃ জীবন নিয়ে উক্তি

৪.প্রশ্ন-উত্তর সেকশন|ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শাস্তি ও সমালোচনা 

প্রশ্নঃআমলযোগ্য অপরাধ কী? 

উত্তরঃ যে সকল অপরাধ করলে পুলিশ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে সেসকল অপরাধ আমলযোগ্য অপরাধ বলে পরিচিত।

প্রশ্নঃঅ-আমলযোগ্য অপরাধ কী? 

উত্তরঃযে সকল অপরাধ করলে পুলিশ গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার করতে পারে না সেসকল অপরাধ অ-আমলযোগ্য অপরাধ নামে পরিচিত। 

প্রশ্নঃpenal কোড কী?

উত্তরঃpenal code বা দণ্ডবিধি হলো সেসকল কোড যেটা দ্বারা ফৌজদারি অপরাধ শনাক্ত করা হয়।

প্রশ্নঃহ্যাকিং এর শাস্তি কী?

উত্তরঃ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১৫ লক্ষ টাকা জরিমানা বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হতে পারে।

৫.লেখকের মন্তব্য|ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের শাস্তি ও সমালোচনা 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন,২০১৮ মূলত তৈরি করা হয়েছে যাতে বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষ নিরাপদভাবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করতে পারে।কিন্তু এই আইনটির সুষ্ঠু প্রয়োগ আমাদের দেশে লক্ষনীয় নয়।অনেকে অপরাধ করেও আইনের আওতায় আসছে না।যেটা দেশের জন্য অকল্যাণই বটে।

বাংলাদেশের প্রত্যেক মানুষের সুষ্ঠু ও নিরাপদভাবে ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করার একমাত্র পাথেয় হলো ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর কঠোর প্রয়োগ।  



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url