জীবনের এই লক্ষ্য হতে পারে বিভিন্ন রকম। কারো জীবনের লক্ষ্য ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করা, কারো জীবনের লক্ষ্য শিক্ষক হওয়া, কারো লক্ষ্য উদ্যোক্তা হওয়া আবার কেউ বা চায় পাইলট কিংবা নাবিক হতে। সমাজ-সংস্কৃতি ও আশেপাশের চাহিদা অনুযায়ী একেকজনের জীবনের লক্ষ্য হতে পারে একেক রকম। তবে মানুষ হিসেবে জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত একজন ভালো মানুষ হিসেবে বেড়ে ওঠার নিরন্তর প্রচেষ্টা।
অর্থাৎ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে বেঁচে থাকতে দুনিয়ায় কেউ আসে নাই। আত্মকেন্দ্রিকতা জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না। তাহলে জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?
আমরা জানি মানুষ সামাজিক জীব। সমাজে বেঁচে থাকার পরিক্রমায় মানুষের মানুষকে প্রয়োজন হয়। এজন্য মানুষের সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে হয়। মানুষের সাথে মিলেমিশে বসবাস করতে হলে অবশ্যই সমাজের মানুষদের সাহায্য করতে হবে, বিনয়ী আচরণ করতে হবে - একজন ভালো মানুষের যে গুণগুলো থাকা উচিত তা আয়ত্ত্ব করতে হবে। সুতরাং আমাদের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত হবে এরকম একজন ভালো মানুষ হওয়ার চেষ্টা করা এবং এধরণের গুণ গুলো আয়ত্ত্ব করে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনে তা প্রয়োগ করা।
মানুষ মাত্রই কল্পনাপ্রবণ। মানুষ বাঁচে স্বপ্নে। কল্পনায় আপনি হয়তো সুখ স্বপ্নে বিভোর থাকেন — এবারের পরীক্ষায় আমি যদি প্রথম স্থান অধিকার করে ফেলতে পারতাম। আমি যদি অমুক প্রতিযোগিতায় জিততে পারতাম। আমি যদি বড় হয়ে ডাক্তার হতে পারতাম, অনেক টাকা-পয়সা কামাই করে গাড়ি বাড়ির মালিক হতে পারতাম। কিংবা আমি যদি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারতাম! আপনি একবারে অনেকগুলো স্বপ্ন দেখতে পারেন কিন্তু একসাথে সবগুলো স্বপ্নের পরিণতি সম্ভব হয় না কখনো। আপনার দেখা স্বপ্নগুলো থেকে আপনি যখন কোনো কিছু করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন সেটাই হলো লক্ষ্য। অর্থাৎ স্বপ্নকে কাজে পরিণত করাটাই হলো লক্ষ্য।
যেমন আপনি হয়তো ভাবছেন, "ইশ, আমি যদি এবারের পরীক্ষায় প্রথম হয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিতে পারতাম!" এটা হলো আপনার স্বপ্ন। কিন্তু আপনি দিন-রাত পড়ালেখার পিছনে নিজেকে উৎসর্গ করে দিয়ে প্রথম হওয়ার চেষ্টা করছেন — এটা হলো আপনার লক্ষ্য। এখন আপনি শুধু স্বপ্ন দেখবেন নাকি জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত তা ঠিক করে কাজে লেগে যাবেন সে সিদ্ধান্ত আপনার হাতে।
আবার আপনি কেবলই স্বপ্ন দেখতে পারেন যে আপনি এভারেস্টের চূড়ায় বাংলাদেশের পতাকা হাতে নিয়ে গর্বিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছেন। নতুন নতুন মাইলফলক রচনা করছেন। কিন্তু আপনি যখনই এটাকে আপনার জীবনের লক্ষ্য বানিয়ে ফেলবেন তখন দেখা যাবে যে আপনি স্বপ্নে বিভোর না থেকে পর্বত আরোহন করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আমরা সবাই স্বপ্ন দেখি কারণ স্বপ্ন দেখতে পরিশ্রমের প্রয়োজন হয় না তবে স্বপ্নগুলোকে বাস্তবায়ন করতে গেলে বিস্তর খাটাখাটুনি করতে হয়। যা সবাই পারে না। আপনি যদি স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান অবশ্যই আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে।
লক্ষ্য ও স্বপ্নের পার্থক্য করতে গিয়ে আমরা দেখেছি স্বপ্নকে ধরতে গেলে অবশ্যই লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হবে। কারণ জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত তা না জানলে আপনি কাঙ্ক্ষিত গন্তব্যে কখনও পৌঁছাতে পারবেন না। লক্ষ্য নির্ধারণের পেছনে যদিও মূল কারণ এটাই এছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে—
আমরা যা হতে চাই অর্থাৎ আমাদের জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত তা সম্পর্কে আমাদের একটি স্বচ্ছ ধারণা থাকতে হবে। সেই সাথে লক্ষ্য পূরণের জন্য আমাদের সাধ্য থাকতে হবে। ম্যাকক্লিল্যান্ড তাঁর অ্যাচিভমেন্ট মোটিভেশন থিওরিতে বলেছেন, আমাদের লক্ষ্য ও চাহিদা সে পর্যন্তই থাকা উচিত যে পর্যন্ত আমরা পৌঁছাতে পারব। কাল্পনিক বা অসম্ভব কোনো লক্ষ্য ও চাহিদা আমাদের থাকা উচিত নয়।
মূল্যবান এই কথাটিকে বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। আমাদের সমাজে আজকাল আমরা দেখতে পাচ্ছি মানুষের চাহিদা তার সক্ষমতার চেয়ে বেশি। টাকা-পয়সা এবং ক্ষমতা এখন সবাই চায়। মানুষ ভাবে এ দুটোর মালিক হতে পারলে দুনিয়ায় তারা যা ইচ্ছা করতে পারবে। কিন্তু একেকজনের চিন্তাভাবনা, লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একেকরকম হওয়া উচিত। সবাই যখন ছক বেঁধে একই রকম চিন্তাভাবনা করবে তখন ব্যক্তিগত স্বকীয়তা হারিয়ে যাবে। সুতরাং আমাদের লক্ষ্যের একটি বড় উদ্দেশ্য হওয়া উচিত এমনকিছু যা আমরা অনৈতিক উপায় অবলম্বন ছাড়াই নিজের চেষ্টা দ্বারা অর্জন করতে পারব। সেই সাথে লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমে ভূমিকা রাখতে পারব মানব কল্যাণেও।
জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত তা জানার পর প্রথম কাজ হলো জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা। জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রভাবক হলো বিশ্বাস। আপনার নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখতে হবে যে আপনাকে দিয়ে এই কাজটি হবে, আপনি পারবেন। আত্মবিশ্বাস না থাকলে আপনি কখনও নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না। আবার একই সাথে যে কোনো ধরণের দুর্ঘটনার সম্মুখীন হবার মানসিকতাও থাকতে হবে। কারণ আমরা সবসময় যা চাই তা পাই না। আপনি হয়তো লক্ষ্যের পেছনে অবিরাম ছুটেছেন, পরিশ্রম করেছেন কিন্তু দিন শেষে গিয়ে দেখলেন আপনি কাজটিতে সফল হননি। ব্যর্থতা দেখে কখনও হাল ছেড়ে দেয়া যাবে না। নতুন উদ্যম নিয়ে নতুন পরিকল্পনা করতে হবে। আগেরবার যে পথে হেঁটেছেন এবার সেটা থেকে ভিন্ন কোনো পন্থা অবলম্বন করুন তবুও হাল ছাড়বেন না। বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গদের জীবনীর দিকে তাকালে আপনি সহজেই নিজের জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ এবং পরবর্তী পদক্ষেপগুলো সহজেই নিতে পারবেন।
৭. লক্ষ্য ও পরিকল্পনা | জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত?
জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত তা আপনি জানেন, এখন আপনার প্রথম কাজ হবে পরিকল্পনা করা। অর্থাৎ লক্ষ্য নির্ধারণ করার পর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো পরিকল্পনা করা। পরিকল্পনা ছাড়া কোনো কাজ সম্পন্ন করা সম্ভব নয়। প্রথমে আপনি আপনার কল্পনাগুলো গুছিয়ে নিয়ে ভেবে ফেলুন আপনার জীবনের লক্ষ্য কী এরপর আপনার ইচ্ছার ক্ষেত্রে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কোনো মানুষের সাথে কথা বলুন। পরামর্শ নিন। কাজের ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ আপনার কাজের পথকে আরও সহজ করে দিবে। ছোট্ট একটি উদাহরণ দিচ্ছি – ধরুন আগামী মাসে আপনার সেমিস্টার ফাইনাল। আপাতত আপনার লক্ষ্য হলো সিলেবাস শেষ করা। প্রথমেই আপনি আপনার পড়ার টেবিল গুছিয়ে ফেলুন। হাতের কাছে প্রয়োজনীয় বইগুলো রেখে দিন। যাতে বইগুলোর দিকে তাকালে মনে হয় আপনার কিছু একটা পড়তে হবে। মানসিক প্রস্তুতি নেয়া হয়ে গেলে আপনি দেখুন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনগুলো, যেগুলো শেষ করতে না পারলেই নয় সেগুলো আগে শেষ করুন। সবকিছু ছোট ছোট করে ভাগ করে নিন। বিগত বছরের প্রশ্ন দেখুন। এভাবে আস্তে আস্তে আপনি ছোট ছোট গোল সেট করে পুরো কাজ করে ফেলতে পারবেন। এখানে অভিজ্ঞ কারো পরামর্শ নিতে চাইলে আপনার সিনিয়রদের সাথে কথা বলুন, নোটস নিন।
অর্থাৎ পরিকল্পনার শুরুটা হবে ছোট-খাটো কাজ দিয়ে। এটাকে হাতি খাওয়ার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। অর্থাৎ কেউ যদি আপনাকে হাতির মতো বড় কিছু একটা খেয়ে শেষ করতে বলে আপনি তৎক্ষনাৎ সেটা শেষ করতে পারবেন না। আপনাকে আস্তে আস্তে শেষ করতে হবে।
৮. জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কিত গল্প | জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত
একবার ডায়োজিনাস আলেকজান্ডার দ্য গ্রেটকে জিজ্ঞেস করলেন, “বাপু, তোমার ভবিষ্যত পরিকল্পনা কী?”
আলেকজান্ডার বললেন, “সমস্ত গ্রীস নিজের আয়ত্তে আনা।
– তারপর?
– সমস্ত এশিয়া মাইনর নিজের আয়ত্তে আনা।
– তারপর– সমস্ত পৃথিবী নিজের আয়ত্তে আনা।
নাছোড়বান্দা ডায়োজিনাস লেগে থাকেন, “তারপর?”
– তারপর আর কী! বাড়িতে বসে বসে বিশ্রাম নেবো!
ডায়োজিনিস তখন মিটিমিটি হাসেন, বললেন, “হে হে, সে কাজটি এখন করলেই তো পারো!”
ডায়োজিনাসের বক্তব্যের সারকথা আলেকজান্ডার তখন বুঝলেন না। বুঝলেন এসে মৃত্যুশয্যায়। কাছের মানুষদের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন মৃত্যুর পর তার তিনটি ইচ্ছে পূরণ করতে হবে। ১. তার শবাধার বহন করবে চিকিৎসকরা, ২. সারাজীবনে অর্জিত সব ধনসম্পদ শবাধার নেয়ার সময়ের পথিমধ্যে ছিটিয়ে রাখতে হবে এবং ৩. শবাধারে নেয়ার সময় তার হাত দুটো বাইরে বের করে রাখতে হবে।
তার এহেন অদ্ভুত ইচ্ছার কথা শুনে সেনাপতি অবাক হয়ে পেছনের কারণ জানতে চাইলেন।
আলেকজান্ডার অশ্রুমাখা কণ্ঠে জবাব দিলেন, "প্রথমত আমি মানুষকে জানাতে চাই মৃত্যুর সময় হলে চিকিৎসকদের সাধ্য নেই মৃত্যুর দুয়ার থেকে কাউকে ফিরিয়ে আনা। দ্বিতীয়ত আমি দুনিয়ায় যা অর্জন করেছি তার কিছুই সাথে নিয়ে যেতে পারছি না। এবং তৃতীয়ত আমি দুনিয়ায় খালি হাতে এসেছি, ফিরছিও খালি হাতেই।"
পৃথিবীর সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হচ্ছে সময় ও জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে মানুষের জন্য কিছু করা। এবং মানুষের জীবনের লক্ষ্য এই দুটি দর্শনকে ঘিরেই হওয়া উচিত। এ বিষয়টি আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট জীবনের অন্তিম লগ্নে উপলব্ধি করেছিলেন; কিন্তু তখন করার কিছুই ছিল না।
এভাবে আমরা বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের জীবনী পড়লে হয়তো বুঝতে পারব জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত। বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত। পড়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের মনোজগতের প্রসারণ ঘটাতে পারি। ফলশ্রুতিতে জীবনের লক্ষ্য অর্জন আরও সহজ হয়ে ওঠে।
৯. ইসলামের দৃষ্টিতে জীবনের লক্ষ্য | জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত
আমরা জানি জীবনে চলার ক্ষেত্রে প্রত্যেক মানুষেরই কিছু না কিছু লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে। স্কুল পড়ুয়া একজন ছাত্রকে জিজ্ঞেস করলে সে হয়তো বলবে তার লক্ষ্য একটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া। একই প্রশ্নের উত্তরে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ছাত্র হয়তো উত্তর দেবে তার জীবনের লক্ষ্য এখন পাড়ালেখা শেষ করে চাকরী করা কিংবা গবেষণা করা। আবার একজন ব্যবসায়ীর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকে ব্যবসায়ে ক্রমাগত আরো ভালো করা। একজন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের উদ্দেশ্য থাকে রাজনীতির মাঠে নিজের প্রভাব বজায় রাখা।
এতোক্ষণ ধরে জানলাম দুনিয়ার জন্য আমাদের জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত বা কীরকম হওয়া উচিত। এখন জানব ইসলাম এ ব্যাপারে কী বলেছে।
জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য কী হবে, সে ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন,
“নিশ্চয় আল্লাহ মুমিনদের কাছ থেকে তাদের জীবন ও সম্পদ কিনে নিয়েছেন (এর বিনিময়ে) যে, তাদের জন্য আছে জান্নাত। তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে, অতঃপর তারা মৃত্যুবরণ করে। আর নিজ প্রতিজ্ঞা পালনে আল্লাহর চেয়ে শ্রেষ্ঠতর কে আছে? সুতরাং তোমরা যে সওদা করেছ, সে সওদার জন্য আনন্দিত হও। আর সেটাই তো মহাসাফল্য- (সুরা তওবা : ১১১)।”
অর্থাৎ ইসলাম অনুযায়ী একজন মানুষের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহ তায়ালার ইবাদত করা। আল্লাহ তায়ালা মানুষকে সৃষ্টি করেছেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করার জন্য। মুসলিমদের জন্য ইবাদত একটি মৌলিক ফরজ। আমরা মোটাদাগে ইবাদত বলতে কেবল বুঝি নামায আদায়, রোযা রাখা, হজ্ব্ পালন, যাকাত দেয়া - এসব। কিন্তু ইবাদতের ক্ষেত্র এতো ছোট নয়। ইবাদত বলতে যা কিছু ভালো তার সবকিছুকেই বোঝায়। আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য যা করা হবে তাই ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। এটা হতে পারে সবসময় সত্য বলা, মিথ্যাকে এড়িয়ে চলা, এতিম-মিসকিনদের সাহায্য করা, সবাইকে ভালো কাজের আদেশ এবং খারাপ কাজে নিষেধ করা, মানব কল্যাণে কাজে লাগে এরকম কিছু করা – যেমন: মানুষের সেবা করা, অক্ষরজ্ঞানহীন মানুষকে শিক্ষা দান করা প্রভৃতি।
ইসলাম অনুযায়ী একজন মানুষের জীবনের লক্ষ্য হওয়া উচিত আল্লাহর ইবাদত করা। এই ইবাদতের তর্জমা করলে আমরা যা দেখি তাতে জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত তা আমরা বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করতে পারি।
১০. লক্ষ্য ছাড়া জীবন যেরকম | জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত
লক্ষ্য ছাড়া জীবন যেনো গন্তব্যহীন নৌকার মতো। গন্তব্য না থাকলে যেমন জানা যায় না নৌকা কোথায় যাবে তেমনই জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত তা না জানলে জীবনের কোনো মানে খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। তখন পাল খাটিয়ে নদীর মাঝে ইতস্তত ছুটে বেড়ানো ছাড়া আর কিছুই সম্ভব হবে না। তীরের মাটিতে থাকা শত শত সুযোগ কেবল গন্তব্য না থাকার কারণেই হাতছাড়া হতে থাকবে। আপনার জীবনে যখন কোনো লক্ষ্য থাকবে না তখন কিছু করার তাগিদ আপনি অনুভব করবেন না। ফলশ্রুতিতে চারপাশ হয়ে উঠবে বিষাদময়। অপরদিকে আপনার জীবনে যখন লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকবে— ব্যস্ততার যাঁতাকল শেষে যে প্রশান্তি আসবে তা আপনাকে এনে দিবে স্বর্গীয় সুখ।
১১.গুণীজন কহেন | জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত
জীবনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ বিভিন্ন কথা বলে গেছেন। উক্তিগুলো হয়তো আপনার আত্মবিশ্বাসকে আরেকটু দৃঢ় করবে –
০১. “কখনো কি ভেবেছ, কিছু মানুষ কেন যা চায়, তাই পায়; আর কিছু মানুষ অনেক কষ্ট করার পরও কিছুই পায়না? এর কারণ লক্ষ্য। কিছু লোকের লক্ষ্য আছে, কিছু লোকের নেই। লক্ষ্য থাকলে অর্জন করতে পারবে – লক্ষ্য না থাকলে কিছুই পাবে না”
—আর্ল নাইটেঙ্গেল (পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট এক্সপার্ট)
০২. “যদি সুখী হতে চাও, তবে এমন একটি লক্ষ্য ঠিক করো, যা তোমার বুদ্ধি আর শক্তিকে জাগ্রত করে, এবং তোমার মাঝে আশা আর অনুপ্রেরণা সৃষ্টি করে”
– এ্যান্ড্রু কার্নেগী (সর্বকালের সেরা উদ্যোক্তাদের একজন)
০৩. “ পৃথিবীতে যারাই বিশাল অর্জন করেছে, তাদের সবারই একটি বিশাল লক্ষ্য ছিল। তাদের চোখ ছিল এমন লক্ষ্যের দিকে – যার অবস্থান অনেক উঁচুতে; এমন লক্ষ্য যাকে ছুঁতে পারা অসম্ভব বলে মনে হত”
– অরিসন মার্ডেন (সাকসেস ম্যাগাজিনের প্রতিষ্ঠাতা, ও বিশ্বখ্যাত মোটিভেশনাল লেখক)
০৪. “লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আমাদের পরিকল্পনা-দিয়ে-তৈরী গাড়িতে চড়তে হবে। এটার ওপর আমাদের পূর্ণ ভাবে বিশ্বাস রেখে নাছোড়বান্দার মত এগিয়ে যেতে হবে। এটা ছাড়া সাফল্যের আর কোনও পথ নেই”
– পাবলো পিকাসো (ইতালিয়ান চিত্রশিল্পী, সর্বকালের সেরাদের একজন)
০৫. “সাফল্য হল সফলতার সাথে নিজের ঠিক করা লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা”
– আর্ল নাইটেঙ্গেল (সর্বকালের সেরা পার্সোনাল ডেভেলপমেন্ট এক্সপার্টদের একজন)
০৬. “গ্রেট হতে হলে তোমাকে এমন লক্ষ্য ঠিক করতে হবে, যা তোমার সাধ্যের বাইরে। তোমার লক্ষ্য যদি খুব বেশি চিন্তা ও পরিশ্রম ছাড়া অর্জন করা সম্ভব হয়, তবে তুমি তোমার সত্যিকার প্রতিভা ও ক্ষমতাকে কাজে লাগাওনি”
– স্টিভ গ্রেভি (বেসবল গ্রেট)
০৭. “তোমার স্বপ্ন ও লক্ষ্যের কথা কাগজ কলমে লেখার মাধ্যমে তুমি যা হতে চাও, তা হওয়ার পথে প্রথম পদক্ষেপ নেবে”
– মার্ক ভিক্টর হ্যানসেন (বেস্ট সেলিং লেখক ও মোটিভেটর)
০৮. “জীবনের লক্ষ্য না থাকার সবচেয়ে বড় সমস্যাটি হল, তুমি সারা জীবন মাঠের ভেতরে দৌড়েও গোল দিতে পারবে না”
– বিল কোপল্যান্ড (বিখ্যাত লেখক ও ইতিহাসবিদ)
৯. “জীবনকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে ভালো একটি উপায় হল, একটি লক্ষ্য পূরণের পর আরও বড় লক্ষ্য ঠিক করা”
– মাইকেল কর্ডা (সফল লেখক ও ঔপন্যাসিক)
১০. “সব সফল মানুষেরই লক্ষ্য থাকে। গন্তব্য না জানলে যেমন সেখানে পৌঁছানো যায় না, একজন মানুষ কি করতে চায় অথবা কি হতে চায় – তা না জানলে তা করার বা হওয়ার কাজ শুরু করতে পারে না”
– নর্মান ভিনসেন্ট পীল (লেখক ও ‘পজিটিভ থিংকিং’ ধারণার একজন প্রবর্তক)
১১. “লক্ষ্যের সম্ভাবনা অসীম। ঘটার আগে মানুষের ধারণাও থাকে না একটি লক্ষ্যের ওপর বিশ্বাস তাকে কতটা অনুপ্রাণিত, সাহসী আর সফল করতে পারে”
– জিম রন (সফল উদ্যোক্তা, মোটিভেটর, ও লেখক)
১২. “নির্দিষ্ট ভাবে লক্ষ্য ঠিক করতে পারা মানেই সেই লক্ষ্য অর্ধেক পূরণ হয়ে গেছে”
– জিগ জ্যাগলার (সেলস্ এক্সপার্ট ও লেখক)
১৩. “তুমি যদি লক্ষ্য ঠিক করে নিজের সবকিছু দিয়ে তার পেছনে ছোটো, এক সময়ে তোমার অর্জন দেখে তুমি নিজেই অবাক হয়ে যাবে”
– লেস ব্রাউন (লেখক ও মোটিভেটর)
১৪. “আমার মনে হয় সত্যিকার লক্ষ্য সব সময়ে কঠিন হওয়া উচিৎ। এটা এমন হওয়া উচিৎ যা, তোমাকে পরিশ্রম করতে বাধ্য করে”
– মাইকেল ফেলপ্স (সর্বকালের সফলতম অলিম্পিক সাঁতারু)
১৫. “লক্ষ্য পূরণ না করতে পারা যতটা না বেদনার, জীবনে কোনও লক্ষ্য না থাকাটা তারচেয়ে বেশি দু:খজনক”
– বেনজামিন মায়াস (মানবাধিকার কর্মী, সিভিল রাইটস মুভমেন্ট এর সহপ্রতিষ্ঠাতা)
১৬. “লক্ষ্য ছাড়া জীবন কাটানো একটা সময় পর্যন্ত হয়তো আনন্দের, কিন্তু সেটা খুবই অল্প সময়ের জন্য। আমার মনেহয়, যারা বড় অর্জন করে, যারা নেতৃত্ব দেয়, এবং যারা অন্যদের অনুপ্রাণিত করে – তাদের সবারই জীবনে নির্দিষ্ট লক্ষ্য থাকে”
– সেথ গোল্ডিন (সফল উদ্যোক্তা, লেখক ও মোটিভেটর)
১৭. “আকাশ কেন লক্ষ্যের সীমা হবে? – আকাশের ওপারেও নিশ্চই কিছু আছে!”
– সংগৃহীত
১৮. “আমি একদিন আমার লক্ষ্য অর্জ করবোই। কারণ তুমি বলেছ আমি পারবো না”
– সংগৃহীত
১৯. “সাফল্য তাদের জন্য, যাদের লক্ষ্য আছে এবং সেই লক্ষ্যের পেছনে চুপচাপ অক্লান্ত পরিশ্রম করার গুণ আছে”
– ড. থায় পোহ চিয়া (সিঙ্গাপুরিয়ান রাজনীতিবিদ)
১২.লেখকের মন্তব্য | জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত
সর্বোপরি আমরা বলতে পারি যে লক্ষ্য ছাড়া জীবন হয়তো কেটে যাবে তবে সে জীবনের কোনো অর্থ থাকবে না। জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত তা সঠিকভাবে জেনে পূরণের লক্ষ্যে কাজ করে যেতে হবে। পথিমধ্যে পাহাড়সম বাঁধাও আসতে পারে তবে আমাদের ধৈর্য্য নিয়ে সেগুলোর মোকাবিলা করতে হবে। জীবনের লক্ষ্য কী হওয়া উচিত তা জানা থাকলে যে কোনো বাঁধা আমরা অতিক্রম করতে পারব। গুরুত্বপূর্ণ যে কথাটি মাথায় রাখতে হবে তা হলো সবকিছুর আগে মানসিক প্রশান্তি এবং সন্তুষ্টি। মানসিক প্রশান্তি অর্জন করতে মেনে চলুন ধর্মীয় অনুশাসন। আপনি যদি মুসলিম হয়ে থাকেন তাহলে নিয়মিত নামায আদায় করুন, কুরআন অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা করুন। ইসলাম ব্যতীত অন্যান্য ধর্মের অনুসারী হলে সে ধর্মের নির্দেশনা মেনে চলুন। নিজে ভালো থাকলে তবেই আপনি আশেপাশের মানুষকে ভালো রাখতে পারবেন। তাই সবার আগে আপনার জীবনের লক্ষ্য হবে নিজেকে ভালো রাখা, নিজেকে নিয়ে ভাবা।
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url