OrdinaryITPostAd

যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম

যোনীতে চুলকানি নারীদের একটি সেনসিটিভ সমস্যা।এটি খুবই কমন একটি অসুখ। মেয়েরা ৫ থেকে শুরু করে ৬০ বছর বয়সের যে কোন সময় এই সমস্যায় পড়তে পারে। গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে যে প্রত্যেক ৪ জন মহিলার মধ্যে ৩ জনেরই জীবনের কোন না কোন সময় একবার হলেও এই সমস্যায় ভুগে থাকেন। তাই যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম জানা সব মেয়েদেরই প্রয়োজন।আজকের আর্টিকেলে আমরা মেয়েদের ভ্যাজাইনাল ইআিং বা যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব।যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম জানতে তাই আর্টিকেলটি পড়ুন।



অনুচ্ছেদ সূচি ( যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)

  1. যোনিতে চুলকানি হওয়ার কারণ 
  2. যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধের নাম
  3. যোনিতে চুলকানি প্রতিরোধ 
  4. লেখকের মন্তব্য

১.যোনিতে চুলকানি হওয়ার কারণ | যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম

যোনিতে চুলকানি কেন হয় তা জানলে আমরা যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম সম্পর্কে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারব।কেননা কারণ চিহ্নিত করতে পারলে চিকিৎসা ও রোগমুক্তি অনেক সহজ হয়।

যোনিতে চুলকানি অনেক কারণেই হতে পারে। যেমন:

  • ছত্রাকের সংক্রমণ: যোনিতে ব্যকটেরিয়া ও ছত্রাক সংক্রমণের ফলে চুলকানি হতে পারে।বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই যোনিতে ব্যকটেরিয়া সংক্রমণ ( ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজাইনোসিস) ও ছত্রাকজনিত ইনফেকশন (ঈস্ট ইনফেকশন) এর কারণে চুলকানি হতে পারে। যোনি এবং যোনির চারদিকে ভীষণ চুলকানি, সাদা ও দুর্গন্ধযুক্ত স্রাব যাওয়া  ছত্রাক সংক্রমণের লক্ষ্মণ।
  • সেক্সুয়াল ট্রান্সমিটেড ডিজিজ: যৌন সংক্রমক রোগ যেমন ক্ল্যামাইডিয়া,গনোরিয়া,ট্রাইকোমোনিয়াসিস ইত্যাদি কারণে যোনিতে চুলকানি হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কনট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের তথ্য মতে, প্রায় ৩.৭ মিলিয়ন লোক এই সমস্যায় ভোগে; যাদের মধ্যে ৩০ ভাগ নারী। চুলকানি, জ্বালাপোড়া, স্রাবে পরিবর্তন ইত্যাদি এই রোগের লক্ষণ।
  • হরমোনের পরিবর্তন: মাসিক দীর্ঘস্থায়ী বন্ধ হয়ে যাওয়া বা মেনোপজের পর যোনিতে চুলকানি হতে পারে। হরমোনের পরিবর্তনের কারণে এই সমস্যা হয়। এসময় ইস্ট্রোজেন হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয় ফলে যোনির মিউকোসাল লাইন পাতলা হয়ে যায় এবং জ্বালাপোড়া ও চুলকানির সৃষ্টি করে।
  • যোনির ইরিটেশন বা অস্বস্তি: সিনথেটিক অন্তর্বাস ব্যবহারের কারণে অনেক সময় যোনিতে অস্বস্তিভাব তৈরি হয়। এতে যোনিতে চুলকানি হয়। এ ছাড়া অনেক সময় বেশি ক্ষারযুক্ত সাবান ব্যবহারের কারণেও এই সমস্যা হতে পারে।বিভিন্ন কসমেটিকস যেমন ডিওডোরেন, ক্রিম ইত্যাদি ব্যবহারের কারণে এলার্জিক রিয়েকশন দেখা দেয় এবং যোনিতে ইরিটেশন বা জ্বালাপোড়াভাব ও চুলকানি হতে পারে।
  • জরায়ুমুখের ক্যানসার: জরায়ুমুখের ক্যানসারের কারণে অনেক সময় যোনিতে চুলকানির সমস্যা হতে পারে। যোনিতে চুলকানির জন্য এই কারণটা যদিও দূর্লভ তবুও এসব উপসর্গ দেখা দিলে সাবধান হতে হবে কেননা এটা ক্যানসারও হতে পারে।

২.যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধের নাম | যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম 

অনেক মেয়ে সাধারণত যোনিতে চুলকানির মতো সমস্যায় পড়লে ডাক্তারের কাছে যেতে দ্বিধায় ভোগে অথবা সংকোচের কারণে কারো সাথে এই বিষয় শেয়ার করতে পারে না। তাদের জন্য আমরা যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম উল্লেখ করব যেটা ব্যবহার করলে এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। 

যোনিতে চুলকানি হলে সাধারণত ক্রিম বা অয়েন্টমেন্ট জাতীয় ঔষধ পরামর্শ করে থাকেন চিকিৎসকরা।নিচে কিছু ঔষধের নামসহ বিস্তারিত বলা হলো:
  1. Clobestasol Cream/ Ointment : এটি ত্বকের ফোলাভাব, চুলকানি, জ্বালাপোড়া ও প্রদাহ নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়। এই ক্রিম এলার্জিজনিত কারণে ত্বকে হওয়া প্রদাহ,চুলকানি এবং জ্বালাভাব কমিয়ে অস্বস্তি দূর করে আরাম প্রদান করে এবং রোগমুক্তিতে সাহায্য করে। এটা ক্রিম এবং অয়েন্টমেন্ট হিসেবে বাজারে পাওয়া যায়।এই ক্রিম ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। ত্বকে ম্যাসেজ করে দিনে ২/৩ তিনবার ব্যবহার করতে হবে। চিকিৎসক  সাধারনত এটি ৪ সপ্তাহ অথবা এর অধিক সময় ধরে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
  2. Hydrocortisone Cream : ডার্মাটাইটিস, এলার্জি, স্ত্রীপ্রজননতন্ত্রের বাহিরের ত্বকে   চুলকানি সহ বেশ কিছু ত্বকের সমস্যায় ক্রিমটি ব্যবহার করা হয়।এই ঔষধটি প্রেসক্রিপশন ছাড়াও ক্রয় করা যায়।তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ ব্যবহার করা উচিত নয়। এটি ত্বকে ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই ভালো করে হাত ধুয়ে নিতে হবে এবং আক্রান্ত জায়গা ভালোভাবে পরিষ্কার করে শুকিয়ে নিয়ে তারপর ব্যবহার করতে হবে।দিনে ৪ বার এটি ব্যবহার করতে হবে।
  3. Metronidazole Vaginal Gel : এটি এক ধরনের এন্টিবায়োটিক যা ব্যাকটেরিয়াল ইনফেকশন ( ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস) এর চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত এটি ব্যবহার করা উচিত নয়।এই ওষুধটি শুধুমাত্র যোনিতে ব্যবহারের জন্য,মুখ বা  শরীরের অন্য কোথাও ব্যবহার করা যাবে না।এই জেলের সাথে একটি এপ্লিকেটর দেওয়া থাকে যার সাহায্যে যোনির ভিতরে এটি ব্যবহার করা হয়। ব্যবহারের পূর্বে অবশ্যই হাত ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে,এরপর এপ্লিকেটরে প্রয়োজন মতো জেল নিয়ে তা যোনির ভিতরে প্রবিষ্ট করতে হবে। এই ওষুধের সেবনবিধি এবং ডোজ সম্পর্কে চিকিৎসকের কাছে বিস্তারিত জেনে তারপর ব্যবহার করতে হবে।
  4. Pevisone Cream : যোনিপথের চুলকানি ফাঙ্গাস,ছত্রাক সংক্রমণে  ক্রিমটি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া এলার্জিজনিত সমস্যার কারণে ত্বকের প্রদাহ এবং ফোলা ভাব কমাতে সাহায্য করে এটি।ডাক্তাররা পরামর্শ দিয়ে থাকেন পেভিসন ক্রিম প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন দুইবার ব্যবহারের জন্য। এই ক্রিমটি আক্রান্ত স্থানে অল্প করে লাগাতে হবে এবং ব্যবহারের পূর্বে আক্রান্ত স্থানটি নরমাল অথবা কুসুম গরম পানি দিয়ে ভালোভাবে ধৌত করে পরিষ্কার নরম শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে ক্রিমটি হাতে অল্প পরিমাণে নিয়ে লাগিয়ে দিয়ে হবে। দিনে দুইবার,সকাল এবং রাতে ব্যবহার করতে হবে।
  5. Tablet: ছত্রাকের সংক্রমণ হলে এন্টিফাংগাল ঔষধ যেমন ketoconazole, miconazole,clotrimazole, tioconazole,fluconazole ইত্যাদি ট্যাবলেট ৩ থেকে ৫ দিন খেতে হয়। এছাড়াও fexofenadine, loratadine ট্যাবলেট সেবন করলেও যোনিতে চুলকানি দূর হয়।

৩.যোনিতে চুলকানি প্রতিরোধ | যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম 

যেকোনো রোগ হওয়ার পর প্রতিকারের চাইতে রোগ যাতে না হয় তা প্রতিরোধ করা ভালো।যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম জানার পাশাপাশি আমাদের যোনিতে চুলকানি যাতে না হয় সে বিষয়েও জানতে হব।
ইচিং বা যোনিতে চুলকানি প্রতিরোধ করার উপায়:
  1. রঙিন ও বেশি সুগন্ধিযুক্ত টয়লেট টিস্যু ও সাবান যৌনাঙ্গে ব্যবহার না করা।
  2. ফেমিনিন হাইজিন স্প্রে ও ডুশ ব্যবহার না করা।
  3. ভেজা কাপড় পরে বেশিক্ষণ না থাকা। গোসল বা ব্যায়ামের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভেজা কাপড়টি পাল্টে নিতে হবে। যারা সুইমিং পুলে সাঁতার কাটেন তাদের ক্লোরিনের কারণেও ইচিং হতে পারে , তাই সাবধান থাকতে হবে।
  4. যৌনাঙ্গ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। আর প্রসাব বা পায়খানা করার সময় হাত দিয়ে সামনে থেকে পেছনে এই নিয়মে পরিষ্কার করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে পায়খানার রাস্তার জীবাণু যেন যোনিতে না লাগে।
  5. বেশি বেশি দই খেতে হবে, এতে ল্যাকটোব্যাসিলাস নামক উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে যা যোনিকে সুরক্ষা দেয়।
  6. সুতি কাপড় দিয়ে তৈরি অন্তর্বাস পড়তে হবে। সিনথেটিক অন্তর্বাস পড়লে ইচিং হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
  7. ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  8. ওজন কমাতে হবে।
  9. সহবাসের সময় কনডম ব্যবহার করতে হবে।
  10. যোনি আর্দ্র ও ভেজা রাখা যাবে না।
  11. মাসিকের সময় নোংরা কাপড় ব্যবহার করা যাবে না। পরিষ্কার প্যাড ব্যবহার করতে হবে।
  12. সহবাসের পর যৌনাঙ্গ ভাল ভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
  13. একাধিক ব্যক্তির সাথে যৌন সহবাস পরিত্যাগ করতে হবে।
  14. নিয়মিত গোসল করতে হবে। ব্যক্তিগত হাইজিন মেনে চলতে হবে।

.লেখকের মন্তব্য | যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম 

আজকের আর্টিকেলে আমরা যোনিতে চুলকানি দূর করার ওষুধ ও ক্রিমের নাম সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।আর্টিকেল সম্পর্কিত যেকোন প্রশ্ন, মতামত, পরামর্শ কিংবা অভিযোগ আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন।এরকম আরও তথ্যবহুল আর্টিকেল পড়তে আমাদের ওয়েবসাইট The DU Speech ভিজিট করুন।  

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url