২৬ মার্চের কবিতা ও স্ট্যাটাস
স্বাধীনতা যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধারা সশরীরে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করলেও তাদের প্রেরণা যোগাতে বিভিন্ন মাধ্যম প্রয়োজন ছিলো।যুদ্ধকালীন চলচ্চিত্র,বক্তৃতা, গান,কবিতা মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ করার মনোবল অনেকাংশে বাড়িয়ে দিয়েছিলো।এমনি কিছু কবিতা ও স্ট্যাটাস নিয়ে ২৬ মার্চের কবিতা ও স্ট্যাটাস আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে।বাঙালির স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রচিত এসব কবিতা অত্যন্ত জনপ্রিয়।২৬ মার্চের কবিতা ও স্ট্যাটাস আর্টিকেলে আরও থাকবে স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু স্ট্যাটাস।২৬ মার্চের কবিতা ও স্ট্যাটাস দেখতে আর্টিকেলটি পড়ুন।
অনুচ্ছেদ সূচি (যে অংশ পড়তে চান তার উপর ক্লিক করুন)
- স্বাধীনতা দিবসের কবিতা-১
- স্বাধীনতা দিবসের কবিতা-২
- স্বাধীনতা দিবসের স্ট্যাটাস
- প্রশ্ন-উত্তর পর্ব
- লেখকের মন্তব্য
১.স্বাধীনতা দিবসের কবিতা-১|২৬ মার্চের কবিতা ও স্ট্যাটাস
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে ৭ই মার্চ ১৯৭১সালে একটি ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।এই ভাষণে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার কথা বলেন,যা ছিলো পরোক্ষভাবে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণা।তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানের বর্তমান নাম সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।২৬ মার্চের কবিতা ও স্ট্যাটাস আর্টিকেলের এই অংশে এরই প্রক্ষিতে কবি নির্মলেন্দু গুণের একটি কবিতা সংযোজন করা হলো।
স্বাধীনতা,এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো
-নির্মলেন্দু গুণ
একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে
লক্ষ লক্ষ উন্মত্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে ভোর থেকে জনসমুদ্রের উদ্যান সৈকতে; 'কখন আসবে কবি?'
এই শিশু পার্ক সেদিন ছিলনা
এই বৃক্ষে ফুলে শোভিত উদ্যান সেদিন ছিল না,
এই তন্দ্রাচ্ছন্ন বিবর্ণ বিকেল সেদিন ছিল না।
তা হলে কেমন ছিল সেদিনের সেই বিকেল বেলাটি?
তা হলে কেমন ছিল শিশু পার্কে বেঞ্চে, বৃক্ষে, ফুলের বাগানে
ঢেকে দেওয়া এই ঢাকার হৃদয় মাঠখানি?
জানি সেদিনের সব স্মৃতি, মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত কালোহাত। তাই দেখি কবিবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ
কবির বিরুদ্ধে কবি,
মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ,
বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল,
উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান,
মার্চের বিরুদ্ধে মার্চ....।
হে অনাগত শিশু, হে আগামী দিনের কবি,
শিশু পার্কের রঙিন দোলনায় দোল খেতে খেতে তুমি একদিন সব জানতে পারবে; আমি তোমাদের কথা ভেবে লিখে রেখে যাচ্ছি সেই শ্রেষ্ঠ বিকেলের গল্প।
সেই উদ্যানের রুপ ছিল ভিন্নতর।
না পার্ক না ফুলের বাগান- এসবের কিছুই ছিল না,
শুধু এক খন্ড অখন্ড আকাশ যেরকম, সেরকম দিগন্ত প্লাবিত ধু ধু মাঠ ছিল দূর্বাদলে ঢাকা, সবুজে সবুজময়। আমাদের স্বাধীনতা প্রিয় প্রাণের সবুজ এসে মিশেছিল এই ধু ধু মাঠের সবুজে।
কপালে কব্জিতে লালসালু বেঁধে
এই মাঠে ছুটে এসেছিল কারখানা থেকে লোহার শ্রমিক, নাঙ্গল জোয়াল কাঁধে এসেছিল ঝাঁক বেঁধে উলঙ্গ কৃষক, পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে এসেছিল প্রদীপ্ত যুবক।
হাতের মুঠোয় মৃত্যু, চোখে স্বপ্ন নিয়ে এসেছিল মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত, করুন কেরানি ,নারী, বৃদ্ধ, বেশ্যা,ভবঘুরে আর তোমাদের মত শিশু পাতা- কুড়ানিরা দলবেঁধে ।
একটি কবিতা পড়া হবে, তার জন্যে কি ব্যাকুল প্রতীক্ষা মানুষের: ''কখন আসবে কবি?"কখন আসবে কবি?"
শত বছরের শত সংগ্রাম শেষে,
রবীন্দ্রনাথের মতো দৃপ্ত পায়ে হেঁটে
অতঃপর কবি এসে জনতার মঞ্চে দাঁড়ালেন।
তখন পলকে দারুন ঝলকে তরিতে উঠিল জল,
হৃদয়ে লাগিল দোলা, জনসমুদ্রে জাগিলে জোয়ার
সকল দুয়ার খোলা। কে রোধে তাঁহার বজ্রকন্ঠ বাণী?
গণসূর্যের মঞ্চ কাঁপিয়ে কবি শোনালেন তার অমর কবিতাখানি;
'এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম
এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম'
সেই থেকে স্বাধীনতা শব্দটি আমাদের।
২.স্বাধীনতা দিবসের কবিতা-২|২৬ মার্চের কবিতা ও স্ট্যাটাস
২৬ মার্চের কবিতা ও স্ট্যাটাস আর্টিকেলের এই অংশে থাকছে স্বাধীনতা দিবস নিয় আরও একটি জনপ্রিয় কবিতা।এই কবিতাটির সারাংশ স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের নির্মম ঘটনাগুলোকে মনে করিয়ে দেয়।মনে করিয়ে দেয় স্বাধীনতার বিনিময়সমূহের কথা।
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা
-শামসুর রহমান
তোমাকে পাওয়ার জন্যে, হে স্বাধীনতা,
তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্ত গঙ্গায়?
আর কতবার দেখতে হবে খান্ডবদাহন?
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
সাকিনা বিবির কপাল ভাঙল,
সিঁথির সিঁদুর গেল হরিদাসীর।
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
শহরের বুকে জলপাইয়ের রঙের ট্যাংক এলো
দানবের মতো চিৎকার করতে করতে
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
ছাত্রাবাস, বস্তি উজাড় হলো। রিকয়েললেস রাইফেল আর মেশিনগান খই ফোটাল যত্রতত্র।
তুমি আসবে বলে ছাই হলো গ্রামের পর গ্রাম।
তুমি আসবে বলে বিধস্ত পাড়ায় প্রভুর বাস্তুভিটার
ভগ্নস্তূপে দাঁড়িয়ে একটানা আর্তনাদ করল একটা কুকুর।
তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা,
অবুঝ শিশু হামাগুডি দিলো পিতা-মাতার লাশের উপর।
তোমাকে পাবার জন্যে, হে স্বাধীনতা, তোমাকে পাওয়ার জন্যে
আর কতবার ভাসতে হবে রক্তগঙ্গায়?
আর কতবার দেখতে হবে খান্ডবদাহন?
স্বাধীনতা তোমার জন্যে এক থুত্থুরে বুড়ো
উদাস দাওয়ায় বসে আছেন- তাঁর চোখের নিচে অপরাহ্নের
দুর্বল আলোর ঝিলিক, বাতাসে নড়ছে চুল।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
মোল্লা বাড়ির এক বিধবা দাঁড়িয়ে আছে
নড়বড়ে খুঁটি ধরে দগ্ধ ঘরের।
স্বাধীনতা, তোমার জন্যে
হাড্ডিসার এক অনাথ কিশোরী শূন্য থালা হাতে
বসে আছে পথের ধারে।
তোমার জন্যে,
সগীর আলী, শাহবাজপুরের সেই জোয়ান কৃষক,
কেষ্ট দাস, জেলেপাড়ার সবচেয়ে সাহসী লোকটা,
গাজী গাজী বলে যে নৌকা চালায় উদ্দাম ঝড়ে,
রুস্তম শেখ, ঢাকার রিক্সাওয়ালা, যার ফুসফুস
এখন পোকার দখলে
আর রাইফেল কাঁধে বনে জঙ্গলে ঘুরে-বেড়ানো
সেই তেজি তরুণ যার পদভারে
একটি নতুন পৃথিবীর জন্ম হতে চলেছে-
সবাই অধীর প্রতীক্ষা করছে তোমার জন্যে, হে স্বাধীনতা।
পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অনুপ্রান্তে জ্বলন্ত
ঘোষণার ধ্বনি- প্রতিধ্বনি তুলে,
নতুন নিশান উড়িয়ে,দামামা বাজিয়ে দিগ্বিদিক
এই বাংলায়
তোমাকে আসতেই হবে, হে স্বাধীনতা।
৩.স্বাধীনতা দিবসের স্ট্যাটাস|২৬ মার্চের কবিতা ও স্ট্যাটাস
স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা বিনিময় ও বিভিন্ন ক্ষেত্রে আমরা এই দিনটি নিয়ে নিজেদের মতো করে কিছু বলে থাকি,কিংবা কোনো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের উক্তি ব্যবহার করি।এগুলোই মূলত স্বাধীনতা দিবসের স্ট্যাটাস।২৬ মার্চের কবিতা ও স্ট্যাটাস আর্টিকেলের এই অংশে থাকছে স্বাধীনতা দিবস নিয়ে কিছু স্ট্যাটাস।
- এই স্বাধীনতা তখনি আমার কাছে প্রকৃত স্বাধীনতা হয়ে উঠবে, যেদিন বাংলার কৃষক-মজুর ও দুঃখী মানুষের সকল দুঃখের অবসান হবে - বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আসুন সবাই মিলে জাতির পিতার প্রত্যাশিত সেই অসাম্প্রদায়িক,ক্ষুধা দারিদ্রমুক্ত ও সুখী সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলি।আজকের দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গিকার।
- স্বাধীনতা রক্ষার জন্য স্বাধীনতাকে মর্যাদা দিতে হয় এবং থাকতে হয় সদা সতর্ক।আমাদেরই পূর্বপুরুষ তাদের রক্তের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছে তা রক্ষার জন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকারে বাঙালি সদা প্রস্তুত আছে,আর ভবিষ্যতেও থাকবে।সবাইকে স্বাধীনতা দিবসের শুভেচ্ছা।
- স্বাধীনতা তুমি পিতার কোমল জায়নামাজের উদার জমিন। - শামসুর রহমান। মহান স্বাধীনতা দিবস সফল হোক।
- এক নদী রক্ত পেরিয়ে বাংলার আকাশে রক্তিম সূর্য আনলে যারা তোমাদের এই ঋণ কোন দিন শোধ হবে না (না, না, না শোধ হবে না) মৃত্যুর মুখোমুখি দাঁড়িয়ে সাত কোটি মানুষের জীবনের সন্ধান আনলে যারা সে দানের মহিমা কোন দিন ম্লান হবে না (না, না, না ম্লান হবে না) বাংলার স্বাধীনতার জন্য যাদের রক্তের বন্যা বয়ে গেছিলো বাংলার বুকে,যাদের মহান আত্মত্যাগের কারণে আজ আমরা স্বাধীন, সেই সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় - ৫২তম স্বাধীনতা দিবস সফল হোক।
- বাংলার স্বাধীনতা শিল্পীর রংতুলির ছোয়ায় আঁকা কোনো দৃশ্য নয়,কবীর কলমে লেখা কোনো কবিতা নয়,সাহিত্যের আদলে তৈরী কোনো গান নয়.....বাঙালির তাজা রক্তে রাঙানো লাল-সবুজের পতাকা। মহান স্বাধীনতা দিবস সফল হোক।
আরও পড়ুনঃ আর্টিকেল লিখে আয় করুন
৪.প্রশ্ন-উত্তর পর্ব| ২৬ মার্চের কবিতা ও স্ট্যাটাস
- প্রশ্ন: "স্বাধীনতা এই শব্দটি কিভাবে আমাদের হলো" কবিতাটির লেখক কে? উত্তর: নির্মলেন্দু গুণ।
- প্রশ্ন:"তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা" কবিতাটির লেখক কে? উত্তর: শামসুর রহমান।
আরও পড়ুনঃ সকল শিক্ষা বৃত্তি
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url