OrdinaryITPostAd

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী? সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান?

 
আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান নিয়ে জানতে আগ্রহী। সমাজবিজ্ঞানের কিংবা রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী-শিক্ষক ছাড়াও যে কেউ-ই এই আর্টিকেলটি পড়ে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কে ধারণা লাভ করবেন। তাছাড়া সমাজবিজ্ঞান বিশুদ্ধ বিজ্ঞান কি না এটা নিয়েও অনেকের মনে কাজ করে সংশয়। সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান-এটা নিয়ে আর্টিকেলের দ্বিতীয় অংশে আলোচনা করা হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্টিকেল রাইটিং সোসাইটির পক্ষ থেকে আজকের আর্টিকেলে থাকছে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী এবং সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান-এটার সম্যক ধারণা। তাই দেরি না করে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী এবং সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান জানতে এই আর্টিকেলটি বিস্তারিত পড়ুন।


সূচিপত্র(আর্টিকেলের যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)

1.রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের সংজ্ঞা|রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী?

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান হলো মূলত ক্ষমতা সম্পর্কিত অধ্যয়ন। পাশাপাশি সমাজ,রাষ্ট্র এবং রাজনৈতিক সংঘর্ষের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলে। এটি সমাজবিজ্ঞান এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানের একটি বিস্তৃত উপশাখা।

2.উপাদান|রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী?

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান প্রধানত দুটো উপাদান নিয়ে গঠিত। এগুলো হচ্ছে- ক. বৃহৎ উপাদান(macro component), খ. ক্ষুদ্র উপাদান(micro component) 

বৃহৎ উপাদানঃ
বৃহৎ পরিপ্রেক্ষিতে জাতি-রাষ্ট্র,রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান, তাদের উন্নয়ন, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের উৎস(যেমন, সামাজিক আন্দোলন বা গোষ্ঠীবদ্ধ ক্রিয়াকলাপ) সম্পর্কে কেন্দ্র করে আলোচনা করা হয়।এক্ষেত্রে গবেষকেরা বৃহৎ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছেন। যেমন- কীভাবে এবং কেন রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের রূপ নেয়। এছাড়া কখন এবং কোন প্রক্রিয়ায় তারা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়- তার জবাব খোঁজার চেষ্টা করেছেন। 

ক্ষুদ্র উপাদানঃ
ক্ষুদ্র পরিপ্রেক্ষিতে কীভাবে সামাজিক পরিচয় ও গোষ্ঠীগুলো পৃথক রাজনৈতিক আচরণকে প্রভাবিত করে সে বিষয়ে আলোচনা করে। যেমন- ভোটদান,মনোভাব,রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ইত্যাদি।

যদিও রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের বৃহৎ (macro), ক্ষুদ্র(micro) উভয়ই রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সাথে নিবিড়ভাবে তবুও এক্ষেত্রে উভয়ের মাঝে একটি মৌলিক পার্থক্য বিদ্যমান। রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীদের স্বতন্ত্র ফোকাস রাজনৈতিক ব্যবস্থার অভ্যন্তরীণ কাজ বা যান্ত্রিকতার ওপর কম থাকে এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে রূপদানকারী অন্তর্নিহিত সামাজিক শক্তিগুলোর ওপর বেশি থাকে।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী -এটার উৎস পাওয়া যায় অ্যালেক্সিস ডি টোকভিল,কার্ল মার্ক্স,এমিল ডুরখেইম এবং মার্ক্স ভেবারের লেখা লেখে। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সমাজবিজ্ঞানের মধ্যে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান একটি পৃথক উপক্ষেত্র হিসেবে আবির্ভূত হয়। ১৯৫০ এবং ১৯৬০ এর দশকের অনেকগুলো যুগান্তকারী কাজ শ্রেণী,ধর্ম,জাতি এবং গোষ্ঠী-ভিত্তিক রাজনৈতিক আচরণের ওপর শিক্ষার প্রভাব সম্পর্কে ক্ষুদ্র (micro)প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। ১৯৭০ এর দশকের শুরুতে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীরা ক্রমবর্ধমানভাবে বৃহৎ পরিসরের রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের প্রতি ঝুঁকেছেন।যেমন-বিপ্লবের উৎস এবং ফলাফল বোঝা,রাজনৈতিক ফলাফল গঠনে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা এবং ঐতিহাসিকভাবে সাড়া জাগানো রাষ্ট্রীয় উন্নয়নের অধ্যয়ন। বর্তমানে বৃহৎ এবং ক্ষুদ্র পরিসরে উভয়ই রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আলোচ্য বিষয়।

3. পরিধি|রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী?

 রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী এ প্রশ্নের সাথে সাথে আসে এর পরিধি কীরূপ? বস্তুতঃ,রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের পরিধি বিস্তৃত। সমাজে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে কীভাবে ক্ষমতা ও নিপীড়ন কাজ করে তার ব্যাপক আগ্রহের প্রতিফলন। বৈচিত্র্যময় একটি বিষয় হওয়া সত্ত্বেও রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের পরিধির সম্পর্কে ধারণা দিতে নিম্নোক্ত প্রধান বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত করা হলোঃ
  • রাষ্ট্র এবং সমাজ কীভাবে ক্ষমতা প্রয়োগ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে তার গতিশীলতা বোঝা (যেমন- ক্ষমতা কাঠামো,কর্তৃত্ব,সামাজিক অসমতা প্রভৃতি) 
  • কীভাবে রাজনৈতিক মূল্যবোধ এবং আচরণ সমাজকে গঠন করে এবং কীভাবে সমাজের মূল্যবোধ এবং আচরণগুলো রাজনৈতিক রূপ দেয়(যেমন- জনমত, মতাদর্শ, সামাজিক আন্দোলন)
  • রাজনীতি ও সমাজের আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক ক্ষেত্রগুলো (যেমন মন্ত্রিপরিষদ বনাম গৃহ) জুড়ে এগুলো কীভাবে কাজ করে
  • সময়ের সাথে সাথে সামাজিক - রাজনৈতিক সংস্কৃতি এবং পরিচয়গুলো কীভাবে পরিবর্তিত হয়।
অন্য কথায়,রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কীভাবে সামাজিক প্রবণতা,গতিশীলতা এবং আধিপত্যের কাঠামো সামাজিক শক্তিগুলোর পাশাপাশি আনুষ্ঠানিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়াগুলোকে প্রভাবিত করে বিভিন্ন পরিবর্তন আনার জন্য কাজ করে তা নিয়ে সংশ্লিষ্ট। 

4.রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান বনাম রাজনীতির সমাজবিজ্ঞান |রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী? 

অনেক সময় আমরা 'রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান'(political sociology) এবং 'রাজনীতির সমাজবিজ্ঞান'(sociology of politics) এ দুইয়ের মধ্যে গুলিয়ে ফেলি। তবে এরা পুরোপুরি এক নয়;সূক্ষ্ম পার্থক্য আছে।সার্টোরি বলেছেন,'রাজনীতির সমাজবিজ্ঞান' বিশেষভাবে রাজনীতির একটি সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষণকে বোঝায়। পাশাপাশি, এটি গবেষণার একটি আন্তঃবিভাগীয় ক্ষেত্র নয় যেটি নিয়ে 'রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান' কাজ করে। 
রাজনীতির সমাজবিজ্ঞান রাজনৈতিক জীবনে নিপীড়ন এবং ক্ষমতার প্রতিযোগিতার অরাজনৈতিক কারণগুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করে। অপরদিকে, রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান অরাজনৈতিক বিষয়গুলোর সাথে রাজনৈতিক কারণগুলো অন্তর্ভুক্ত করে। বস্তুতঃ 'রাজনীতির সমাজবিজ্ঞান' হলো,রাজনীতির একটি সমাজতাত্ত্বিক হ্রাসবাদী প্রক্রিয়া (যেমনঃ সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে রাজনৈতিক ক্ষেত্রগুলো অন্বেষণ করা)। অপরদিকে, 'রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান' হলো সহযোগিতামূলক সামাজিক-রাজনৈতিক অন্বেষণ এবং এর ক্ষমতার প্রতিদ্বন্দ্বিতা। 

5.রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্ব |রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী?

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান সম্পর্কিত বিভিন্ন তত্ত্বকে মূলত তিনভাগে ভাগ করা যায়। এগুলো হলোঃ
১)ধ্রুপদী তত্ত্ব(classical theory)
২)আধুনিক তত্ত্ব(modern theory)
৩)উত্তর আধুনিক তত্ত্ব(post modern theory) 

১)ধ্রুপদী তত্ত্বঃ ধ্রুপদী রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে মূলত দুজন শিক্ষানবিশ সর্বাধিক অবদান রেখেছেন। তাঁরা হলেন,কার্ল মার্ক্স এবং ম্যাক্স ভেবার। কার্ল মার্ক্স জার্মান দার্শনিক, রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদ এবং ম্যাক্স ভেবার জার্মান আইনজীবী ও সমাজবিজ্ঞানী। 
কার্ল মার্ক্সের তত্ত্ব মূলত পুঁজিবাদের ওপর কেন্দ্রীভূত। শ্রেণী, শোষক হিসেবে রাষ্ট্র,উৎপাদন এবং বন্টন, তাতে অসমতা এবং নিম্নবিত্ত শ্রেণীর সমস্যা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন।
ভেবার গুরুত্ব দিয়েছেন আমলাতন্ত্র, যৌক্তিকতা,কর্তৃত্ব এবং ক্ষমতার ওপর। 

কার্ল মার্ক্সের তত্ত্বঃ কার্ল মার্ক্স হেগেলের 'দ্বান্দ্বিক' এবং ফুয়েরবাখের 'বস্তুবাদ' দ্বারা প্রভাবিত ছিলেন। এ দুইয়ের মিশ্রণে তিনি নিজস্ব বিশ্লেষণ পদ্ধতি 'দ্বান্দিক বস্তুবাদ' উদ্ভাবন করেছিলেন এবং ইতিহাসে এর প্রয়োগ ঘটিয়েছেন।
  • মার্ক্স ইতিহাসকে "শ্রেণি সংগ্রামের ইতিহাস" হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন, দুটি বিপরীত স্বার্থের দল সর্বদা দ্বন্দে থাকে।
  • মানব ইতিহাস দুটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।এক.যাদের ক্ষমতা আছে, দুই.যাদের ক্ষমতা নেই।
রাষ্ট্রঃ মার্কসীয় তত্ত্বে,মানব সমাজ বা রাষ্ট্র দুটি অংশ নিয়ে গঠিত। 
১)ভিত্তি 
২)উপরিকাঠামো 
ভিত্তি হলো উৎপাদনের শক্তি এবং সম্পর্ক-নিয়োগদাতা এবং কর্মচারীর কাজ। এখানে,শ্রমবিভাজন এবং সেই সাথে সম্পদের বন্টন ঘটেছে। যাতে করে লোকেরা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে এবং জীবনের প্রয়োজনীয় জিনিস মেটায়।
শ্রমবিভাজন এবং সম্পদবণ্টণের এই সম্পর্কগুলো সমাজের অন্যান্য সম্পর্ক এবং মূল্যবোধকে নির্ধারণ করে। যাকে উপরিকাঠামো হিসেবে অভিহিত করা হয়।
একটি সমাজের উপরিকাঠামোর মধ্যে রয়েছে তার সংস্কৃতি, প্রতিষ্ঠান,, রাজনৈতিক ক্ষমতা কাঠামো,ভূমিকা,আচার এবং রাষ্ট্র। সমাজের ভিত্তি তার উপরিকাঠামো নির্ধারণ করে, যদিও উপরিকাঠামো ভিত্তিকে প্রভাবিত করে।

মূল তত্ত্বঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী এটা জানার প্রচেষ্টার এ পর্যায়ে আমরা মার্ক্সের রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের মূল তত্ত্ব সম্পর্কে জানবো। কার্ল মার্ক্স বেশ কিছু পয়েন্ট তুলে ধরেছিলেন।যেমনঃ
  • রাষ্ট্রযন্ত্র, সরকার, এর আইন বুর্জোয়াদের পক্ষে যায়।তিনি দেখিয়েছেন,বুর্জোয়ারা কীভাবে সরাসরি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে এবং নিজেরা ক্ষমতাধর হিসেবে টিকে থাকে।
  • এই উপলদ্ধিতে,রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রসঙ্গ তোলা অপ্রাসঙ্গিক। রাষ্ট্র নামমাত্র কিন্তু প্রকৃতপক্ষে অর্থনীতিই সবকিছু নির্ধারণ করে দিচ্ছে। পুঁজিবাদী ব্যবস্থা প্রতিটি সমাজে নিজেকে পুনরুৎপাদিত করে এবং পুঁজিবাদী গোষ্ঠীকে রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে ক্ষমতায় এনে দেয়।
  • পুঁঁজিবাদী গোষ্ঠী তাদের অর্থনৈতিক শক্তির ক্ষেত্রকে প্রভাবিত করে রাজনৈতিক ক্ষমতাও পুঁজি করতে থাকে।
সুতরাং, মার্ক্স বলার চেষ্টা করেছেন,অর্থনৈতিক শক্তি রাজনৈতিক ক্ষমতার ওপর প্রাধান্য পায় এবং পুঁজিবাদী গোষ্ঠীই ক্ষমতায় টিকে থাকে।

ম্যাক্স ভেবারের তত্ত্বঃ ভেবার বিতর্কিতভাবে সবচেয়ে প্রভাবশালী ধ্রুপদী রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানী।
  • ম্যাক্স ভেবার বহু শিক্ষানবিশকে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান নিয়ে চিন্তা করার জন্য প্রভাবিত করেছিলেন। 
  • মার্ক্সের বিপরীতে ভেবার একজন প্রভাবশালী হিসেবে অর্থনীতিতে খুব বেশি মনোযোগ দেননি।সমাজের উপাদান হিসেবে তিনি বরঞ্চ সংস্কৃতি এবং সংস্থার (culture and agency) ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিলেন। যেটাকে আমরা ব্যাক্তির স্বায়ত্তশাসন হিসেবে উল্লেখ করতে পারি।
  • তিনি তাঁর পদ্ধতির জন্য বিখ্যাত ছিলেন।পরবর্তীতে আধুনিক ও উত্তর আধুনিক সমাজবিজ্ঞানীগণ তাঁর তত্ত্বকে অনুসরণ করে নতুন তত্ত্ব দিয়েছেন।
  • ম্যাক্স ভেবার সমাজবিজ্ঞানে বিশ্লেষণী ব্যাখ্যামূলক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। এর ফলে সমাজবিজ্ঞানের কোর্সে ধ্রুপদী নতুন ব্যাখ্যা ফেয়া সম্ভব হয়।
  • ভেবারের কাজ চিন্তা করার ঐতিহ্যের শুরুতে এসেছে যেটি স্পষ্টতই স্বায়ত্তশাসনের এই ইস্যুতে মার্ক্সবাদ বিরোধী রাষ্ট্র এবং উদার গণতান্ত্রিক রাজনীতিকে গুরুত্ব দেয়।
রাষ্ট্রঃ একটি আধুনিক রাষ্ট্র হলো প্রশাসন ও আইনের একটি ব্যবস্থা যা নির্বাহী কর্মীদের সম্মিলিত ক্রিয়াকলাপের নির্দেশনা দেয়। কার্যনির্বাহী ব্যাক্তিবর্গ একইভাবে সংবিধান দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।ভেবার রাষ্ট্রকে জনগণের একটি সংস্থা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করেছেন যাদের ওপর একচেটিয়া বা সার্বভৌম কর্তৃত্ব করার ক্ষমতা রয়েছে। রাষ্ট্র তার নিজস্ব সৈন্য-সামন্ত দ্বারা তার অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং বহিঃশত্রুকে মোকাবেলা করবে।জাতি বলতে তিনি বুঝিয়েছেন,একদল গোষ্ঠী যাদের সাধারণ ইতিহাস, ভাষা,ধর্ম,সংস্কৃতির কারণে একে অপরের সাথে একতা ও একতার অনুভূতি লালন করবে। 

ভেবারের মতে,রাষ্ট্র মূলত তিনটি উপাদান নিয়ে গঠিত। এগুলো হলোঃ
১)ভূখণ্ডঃ প্রতিটি রাষ্ট্রের একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভূখণ্ড থাকবে।
২)সার্বভৌমত্বঃ রাষ্ট্র তার নিজ ক্ষমতাবলে অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং বহিঃশত্রু নিয়ন্ত্রণ করবে।
৩)বৈধতাঃ রাষ্ট্রের হাতে বৈধ ক্ষমতা থাকতে হবে।
ভেবার বলেছেন,কর্তৃত্ব হলো বৈধ ক্ষমতা এবং কোনো সমাজই অবৈধ ক্ষমতাবলে টিকে থাকতে পারে না। তিনি কর্তৃত্ব,ক্ষমতার উৎস, ক্ষমতার বিস্তৃতি এবং আমলাতন্ত্র নিয়ে কথা বলেছেন। ভেবার তিনটি আদর্শ রাজনৈতিক ক্ষমতার কথা উল্লেখ করেছেন। এগুলো হলোঃ
১)ঐতিহ্যগত ক্ষমতা 
২)ক্যারিশমাটিক ক্ষমতা
৩)যৌক্তিক-বৈধ ক্ষমতা 

ঐতিহ্যগত ক্ষমতাঃ এটা হলো নেতৃত্বের একটি রূপ যখন একজনের কর্তৃত্ব বা শাসন মূলত ঐতিহ্য বা প্রথার সাথে আবদ্ধ। এর মধ্যে-পিতৃতান্ত্রিকতা,পিতৃতন্ত্র,সামন্তবাদ পড়ে
এই ধরনের ক্ষমতার উৎস হলো অলিখিত সামাজিক নিয়ম ও প্রথা। এই ধরনের কর্তৃত্ব প্রাচীন ও মধ্যযুগে পাওয়ে যেত;আধুনিক যুগে খুব কমই দেখা যায়।

ক্যারিশমাটিক ক্ষমতাঃ এই ধরনের ক্ষমতা ব্যাক্তির বিশেষ গুণ বা ক্যারিশমার ওপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে। ক্ষমতার উৎস এখানে অন্তর্নিহিত, জাদুকরী। যেমন- গান্ধী,হিটলার,মার্টিন লুথার কিং ইত্যাদির গুণাবলী। তাঁরা মানুষকে বিশ্বাস করাতে সক্ষম হন যে,জনগণের দুর্দশা তাঁরা দূর করতে সক্ষম। ক্যারিশমাটিক ক্ষমতাধরদের ক্ষমতা থেকে সরানো কঠিন।

যৌক্তিক-বৈধ ক্ষমতাঃ এই ধরনের ক্ষমতার ভিত্তি হচ্ছে লিখিত আইন। যেমন- সংবিধান। যৌক্তিক-বৈধ ক্ষমতা নেতৃত্বের এক ধরনের রূপ। এখানকার আমলাতন্ত্র গঠিত হয় মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে। ভেবার মনে করতেন,আমলাতন্ত্রের কঠিন হওয়া উচিত তাদের নিয়ম-নীতি এবং শাসনের ক্ষেত্রে।  

আমলাতন্ত্রঃ ভেবারের সময়ে বিকশিত সবচেয়ে প্রভাবশালী ধারণাগুলোর মধ্যে ছিলো আমলাতন্ত্র(যৌক্তিক আইনি কর্তৃত্ব)। তিনি সতর্ক করেছিলেন, আমলাতন্ত্র প্রশাসনের প্রধান ধারা হয়ে উঠবে। অর্থনীতি ও রাজনীতি উভয় ক্ষেত্রেই প্রশাসন এবং সেই আমলাতন্ত্রের কারণে এর অন্তর্নিহিত কাঠামো,কর্তৃত্ববাদী ব্যবস্থার অবকাঠামো হয়ে উঠতে পারে আধিপত্যশীল। আমলাতন্ত্র হলো সবচেয়ে যুক্তিযুক্ত, দক্ষ,শক্তিশালী, এবং শ্রেণীবদ্ধ রাষ্ট্রীয় প্রশাসন। রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ খুবই প্রয়োজন। নিয়োগকৃত ব্যাক্তিদের রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের জন্য দক্ষ করে তোলা হয়।ভেবার আমলাতন্ত্রকে "সম্পূর্ণ" এবং "অপরিহার্য" বলেছেন। ভেবার লিখেছেন যে,সরকারি ও বেসরকারি উভয় ক্ষেত্রেই আধুনিক আমলাতন্ত্র নিম্নলিখিত নীতির ওপর নির্ভর করেঃ

  • শ্রমের একটি কঠোর বিভাজন প্রতিষ্ঠিত হয় যা স্পষ্টভাবে শ্রমিকের নিয়মিত কাজ এবং কর্তব্যগুলোকে চিন্হিত করে।
  • বিধানগুলো দায়িত্বের শিকল (chain of commands) দ্বারা দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত। 
  • নির্দিষ্ট, প্রত্যায়িত,যোগ্য লোকদের নিয়োগ করা নিয়মিত ও ক্রমাগত সমর্থন করে অর্পিত দায়িত্ব সম্পাদন।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী - এই আর্টিকেলের এ পর্যায়ে আমরা জানবো,আমলাতন্ত্র মূলত নয়টি বৈশিষ্ট্য বা নীতি ধারণ করে।এগুলো হলোঃ
  • বিশেষ ভূমিকা 
  • যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়োগ(যেমন- উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে পরীক্ষা ব্যবস্থা)
  • একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থাথায় নিয়োগ,পদোন্নতি এবং স্থান্তরের অভিন্ন নীতি
  • পদ্ধতিগত বেতন কাঠামোসহ ক্যারিয়ারবাদ
  • শ্রেণিবিন্যাস,দায়িত্ব এবং জবাবদিহিতা
  • শৃঙ্খলা ও নিয়ন্ত্রণের কঠোর নিয়মের অধীনে অফিশিয়াল আচরণের অধীনতা 
  • বিমূর্ত নিয়মের আধিপত্য 
  • নৈর্ব্যক্তিক কর্তৃত্ব(যেমন,পদাধিকারী তার সাথে অফিসকে আনেন না)
  • রাজনৈতিক নিরপেক্ষতা 
২)আধুনিক তত্ত্বঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী এই আর্টিকেলের এ পর্যায়ে ধ্রুপদী তত্ত্ব শেষ করে আমরা আধুনিক তত্ত্বের প্রবেশ করলাম। রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের আধুনিক তত্ত্বগুলো ২০ শতকের মাঝামাঝি সময়ে শুরু হয়েছিল। আধুনিক রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের কিছু তত্ত্ব হচ্ছেঃ
  • নিও মার্কসবাদী তত্ত্ব(গ্রামস্কি এবং আলথুসার)
  • জার্গের হেবারমাস
  • অভিজাত তত্ত্ব
  • বহুত্ববাদ তত্ত্ব
অ্যান্টোনিও গ্রামস্কিঃ ১৯২০ এর দশকে লেখা,অ্যান্টোনিও গ্রামস্কি ছিলেন প্রথম মার্ক্সবাদী যিনি আদর্শিক এবং রাজনৈতিক উপরিকাঠামোগুলো তুলনামূলকভাবে স্বায়িত্বশাসিত অর্থনৈতিক ভিত্তি হিসেবে দাঁড় করিয়েছিলেন। গ্রামস্কির মূল শব্দটি হলো "আধিপত্য" - যার অর্থ হলো যেভাবে আধিপত্যবাদী শ্রেণি আপস ও জোটের মাধ্যমে তার শাসনের জন্য সম্মতি লাভ করে।সেই সাথে কিছু শ্রেণির অভ্যন্তরীণ ভাগ ও অব্যবস্থাপনাও দায়ী অন্য শ্রেণিকে ক্ষমতাসীন করার জন্য। গ্রামস্কির মতে,আধিপত্য প্রথমে অর্জিত হয় সুশীল সমাজে যেখানে একটি আদর্শ মূর্ত রয়েছে। এই সমাজে সাম্প্রদায়িক জীবনকে এমনভাবে গড়ে তোলা হয়েছে যেন মনে হয়-এটাই যেন স্বাভাবিক। সুশীল সমাজের সকল সম্পর্ক ক্ষমতা এবং সংগ্রামের সাথে জড়িত;সংগ্রাম শুধু শ্রেণী সম্পর্ক নয়। গ্রামস্কি বলেন,রাজনীতি যতটা না প্রাতিষ্ঠানিক, তার চেয়ে বেশি সাংস্কৃতিক। 

লুইস আলথুসারঃ যদিও লুইস আলথুসার মার্কসবাদী অর্থনৈতিক তত্ত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছেন,তবুও তা মার্কসবাদী কাঠামোর মধ্যে থেকে যায়;অর্থনীতিকে এড়ানো যায় না। রাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর তত্ত্ব দ্বান্দিক তত্ত্বের বিপরীতে ক্রিয়াবাদী তত্ত্ব হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
আলথুসার দেখেছেন,রাষ্ট্র অর্থনৈতিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত। তিনি দুই ধরনের রাষ্ট্রযন্ত্রের কথা বলেছেন। যথাঃ ১)আদর্শিক রাষ্ট্রযন্ত্র ২)দমনমূলক রাষ্ট্রযন্ত্র। 
আদর্শিক রাষ্ট্রযন্ত্র মতাদর্শিক মাত্রা বোঝায়।যেমন- শিক্ষা, ধর্মীয় উপসনালয়,পরিবার,মিডিয়া,ট্রেড ইউনিয়ন, প্রথা ইত্যাদি।এগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। কিন্তু এসব বিভিন্ন মূল্যবোধের পরিচলন ঘটিয়েছে। এগুলো পুঁজিবাদী গোষ্ঠীর উৎপাদনের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে।
দমনমূলক রাষ্ট্রযন্ত্রের মৌলিক, সামাজিক কাজের অস্ত্র সরকার,আদালত, পুলিশ ও সশস্ত্র বাহিনী। রাজনীতির পক্ষে সময়োপযোগী হস্তক্ষেপ অধীনস্তদের দমন করে শাসক শ্রেণির স্বার্থ রক্ষা করে। প্রয়োজন অনুযায়ী সামাজিক শ্রেণী,সহিংস বা অহিংস জবরদস্তি দ্বারা কর্তৃত্ব করে শাসক শ্রেণি।আইন প্রণয়ন, রাষ্ট্রের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ - তাদের দ্বারাই ঘটে।

জার্গেন হেবারমাসের তত্ত্বঃজার্গেন হেবারমাসের প্রভাবশালী বইটি আধুনিক ও উত্তর আধুনিক যুগের জাতিরাষ্ট্রের সমস্যা নিয়ে কথা বলেছে।তাঁর "Legitimate Crisis" (1976) বইয়ে হেবারমাস সমাজ এবং তার সংকট প্রবণতার রূপরেখা তুলে ধরেছেন যা আধুনিক কাঠামোর মধ্যে আবির্ভূত হতে পারে।হেবারমাস বিশেষভাবে উদার পুঁজিবাদী সমাজের বৈধতার সমস্যা নিয়ে আগ্রহী ছিলেন। তিনি যুক্তি দেন যে,অধিকাংশ আলোচনায় বৈধ শাসনগুলো একটি 'বিশেষ দৃষ্টিকোণ' থেকে লেখা হয়। হেবারমাস তাঁর লেখায় বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট আলোচনা করেন। যেমনঃ
  • একটি অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় যখন প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোগ্যপণ্য উৎপাদিত হয় না।অন্য কথায়,ভোক্তা চাহিদা পরিপূর্ণ হয় না।
  • একটি যৌক্তিকতার সংকট দেখা দেয় যখন যৌক্তিক সংখ্যক প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত তৈরি হয় না। অন্য কথায়,যখন জনগণের মনে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতার ওপর সন্দেহ দানা বাঁধতে থাকে। জনগণ সন্দেহ করে যে,রাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষমতা আছে কি না!
  • একটি বৈধতা সংকট দেখা যায় যখন সিস্টেমের মধ্যে সহায়ক উপায়ে কাজ করার অনুপ্রেরণা অনুপস্থিত। 
  • একটি অনুপ্রেরণা অনুপস্থিত  থাকে যখন জনগণের কাজ,চিন্তা-ভাবনা করার সহায়ক শক্তিগুলো উপস্থিত থাকে না।
অভিজাত তত্ত্বঃঅভিজাত তাত্ত্বিকরা কীভাবে এবং কেন সংখ্যালঘুরা সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপর শাসন করে তা নিয়ে বেশি চিন্তা করেছেন। এ বিষয়টি আবার তারা সমাজের জন্য অনিবার্য হিসেবে দেখেছেন।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী এ প্রশ্নের উত্তরে আমরা পড়ছি অভিজাত তত্ত্ব নিয়ে। তো রাজনৈতিক অভিজাত তাত্ত্বিকরা সেইসব অভিজাত শ্রেণির কথা আলোচনা করেছেন যারা মূলত আত্নসচেতন দল,যারা জোরপূর্বক তাদের ক্ষমতা ধরে রাখে এবং সর্বব্যাপী তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।
সঞ্চালন অভিজাত তত্ত্ব(মোস্কা এবং পেরেতো): পেরেতো রাজনৈতিক ক্ষমতাকে "অভিজাত শ্রেণির ক্রমাগত সঞ্চালন" এর পরিপ্রেক্ষিতে দেখেছিলেন-সদস্যদের উচ্চতর বুদ্ধিমত্তা, শিক্ষা,ধূর্ততা ইত্যাদির কারণে তারা ক্ষমতাসীন হয়ে থাকে এবং দিনের পর দিন ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে। পেরেতো অভিজাত শ্রেণিকে দুই ভাগে ভাগ করেছেন।এগুলো হলোঃ
(i)সিংহ অভিজাতঃ এরা শক্তিবলে ক্ষমতায় টিকে থাকে এবং শাসন করে।যেমন-মিলিটারি
(ii)শেয়াল অভিজাতঃ এরা দক্ষতার মাধ্যমে শাসনকার্য পরিচালনা করে। যেমন- উদার গণতান্ত্রিক শাসন।
মোস্কা যুক্তি দিয়েছিলেন যে, অভিজাত শ্রেণী তাদের উচ্চতর সাংগঠনিকতার কারণে ক্ষমতা দখল করে।

পাওয়ার এলিট তত্ত্ব(সি রাইট মিলস): মিলস প্রধানত তিনটি প্রধান ক্ষমতা স্তম্ভের কথা বলেছেন। পাশাপাশি তিনি রাষ্ট্রকে প্রাথমিক তাৎপর্যপূর্ণ প্রতিষ্ঠান বলে মনে করতেন। তাঁর তিনটি ক্ষমতা স্তম্ভ নিম্নরূপঃ
ক)প্রধান কর্পোরেশন 
খ)সামরিক
গ)ফেডারেল সরকার।

বহুত্ববাদঃ  বহুত্ববাদকে দুই শ্রেণিতে বিভক্ত করা যায়।এগুলো হচ্ছে- ১)ধ্রুপদী বহুত্ববাদ ২)অভিজাত বহুত্ববাদ
ধ্রুপদী বহুত্ববাদঃ এ তত্ত্বে রাষ্ট্রকে "নিরপেক্ষ" সামাজিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখা হয় যা কোনো শ্রেণি বা গোষ্ঠীকে অন্য শ্রেণি/গোষ্ঠীর ওপর বিশেষভাবে মূল্যায়ন করবে না।
অভিজাত বহুত্ববাদঃ অভিজাত শ্রেণিকে সিদ্ধান্ত নেয়ার প্রক্রিয়ায় প্রধান অংশগ্রহণকারী হিসেবে দেখা হয়।অভিজাতদের মধ্যে রয়েছে-
১)ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠান 
২)সরকারি প্রশাসন 
৩)রাজনৈতিক দল
৪)ট্রেড ইউনিয়ন 
৫)সাংস্কৃতিক অভিজাত। 

৩)উত্তর আধুনিক তত্ত্বঃ 
মিচেল ফুকোঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে ফুকোর অবদান প্রসিদ্ধ। তাঁর লেখায় তিনি প্রধানত কথা বলেছেন আধুনিক রাষ্ট্রের ক্ষমতা সম্পর্কে। তিনি বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন - ক্ষমতা কীভাবে সামাজিকভাবে নির্মিত হয়।তিনি বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট উল্লেখ করেছেন। যেমনঃ
  • ক্ষমতা সকল ধরনের সামাজিক মিথস্ক্রিয়ায় চর্চা করা হয়।
  • সকল প্রতিষ্ঠানে ক্ষমতা চর্চা করা হয়।
  • সকল মানুষ ক্ষমতা চর্চা করে।
  • ক্ষমতা জ্ঞানের ভিত্তিতে তৈরি হয়।
রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী - এই আলোচনা এখানেই সমাপ্ত হলো। এখন আমরা আলোচনা করবো সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান- এ নিয়ে।চলুন পাঠক,দেরি না করে শুরু করি। 

6.সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান? |সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান?

অনেকের মনেই প্রশ্ন জাগে,সমাজবিজ্ঞান কি আসলেই কোনো বিজ্ঞান? পদার্থবিজ্ঞান, জীববিজ্ঞান,রসায়ন এসবের মতোই কি সমাজবিজ্ঞানকেও বিজ্ঞান বলা যাবে? বললেও কেন কিংবা না বললেও কেন সমাজের সাথে বিজ্ঞান যুক্ত করা হলো? সমাজতত্ত্ব কেন বলা হলা হলো না? প্রিয় পাঠক,সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান-এটা বিস্তারিত জানতে আর্টিকেলের পরবর্তী অংশ মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
আমরা জানি,পদার্থবিজ্ঞান বস্তু এবং শক্তি নিয়ে আলোচনা করে,জীববিজ্ঞান জীব নিয়ে আলোচনা করে,মহাকাশবিজ্ঞান মহাকাশে ঘটে চলা ঘটনা এবং বিভিন্ন বিষয়বস্তুর  বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে। এসব খাঁটি বিজ্ঞান। খাঁটি বিজ্ঞানের পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য আলাদা গবেষণাগার থাকে,কিন্তু সমাজবিজ্ঞানের আলাদা গবেষণাগার থাকা সম্ভব নয়। সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে পুরো সমাজই হচ্ছে সমাজবিজ্ঞানীর গবেষণাগার।আবার,খাঁটি বিজ্ঞানের কোনো কিছু সঠিকভাবে ধারণা/ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব। কিন্তু সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে তা সর্বদা সম্ভব নয়।ধরা যাক,কোনো একজন ব্যাক্তির কারো সাথে প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। কিন্তু অপর ব্যাক্তিটি তাকে ধোঁকা দিয়ে চলে গেল।তাহলে ওই ব্যাক্তির কাছে প্রেম জিনিসটি হবে তিক্তময়,তার কাছে মনে হবে বিপরীত লিঙ্গের ব্যাক্তি মানেই স্বার্থপর, ধোঁকাবাজ। কিন্তু যে ব্যাক্তি প্রেমে সফল তার কাছে প্রেম জিনিসটা অত্যন্ত মধুর বলে মনে হবে।তাহলে আমরা কোনটাকে সঠিক হিসেবে ধরে নেবো?প্রেম মধুর নাকি তিক্তময়? উভয়ই সত্য।যে যেমন অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছে তার কাছে সেরকম। সুতরাং, সমাজবিজ্ঞানে আমরা কোনো কিছু পরম সত্য হিসেবে গণ্য করতে পারি না। আবার,কেউ প্রেমে ব্যার্থ হলে 'দেবদাস' হবে,কেউ ব্যার্থ হলে শক্ত হয়ে নিজের ক্যারিয়ারের দিকে মনোযোগী হবে। সুতরাং, একটা ঘটনার নিখুঁত ভবিষ্যদ্বাণীও করা সম্ভব নয়- যেমনটা প্রাকৃতিক বিজ্ঞান করে থাকে। কিন্তু প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের সাথে সমাজবিজ্ঞানের মিল রয়েছে। প্রাকৃতিক বিজ্ঞান যেমন যুক্তির সাহায্য নিয়ে চলে, তেমনি সমাজবিজ্ঞানের ভিত্তিও হচ্ছে যুক্তি। বিজ্ঞান যুক্তির মাধ্যমে চলে। সেজন্য সমাজবিজ্ঞান বিশুদ্ধ বিজ্ঞান না হলেও এটি বিজ্ঞান।

7.সমাজবিজ্ঞান কেন একটি বিজ্ঞান|সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান?

সমাজবিজ্ঞানে প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতোই বিষয়বস্তু বিশ্লেষণের জন্য বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়।প্রাকৃতিক বিজ্ঞানে যেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য নির্দিষ্ট পদ্ধতি রয়েছে,ঠিক তেমনি সমাজবিজ্ঞানেও তা রয়েছে।বিভিন্ন ধাপ অনুসরণ করে সমাজবিজ্ঞানে কোনো ঘটনার বিশ্লেষণ করা হয়।যেমনঃ
  • সমাজ পরিমিতির স্কেল
  • তফসিলভুক্তিকরণ
  • প্রশ্নমালা প্রণয়ন 
  • সাক্ষাৎকার 
  • ঘটনা অধ্যয়ন ইত্যাদি।
এর পাশাপাশি আরো বিভিন্ন কারণে সমাজবিজ্ঞানকে বিজ্ঞান বলা যেতে পারে।যেমন-
  • সমাজবিজ্ঞানে গবেষণার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি বিদ্যমান আছে। তবে এক্ষেত্রে উপাত্তে সংগ্রহে অসুবিধা দেখা দেয়।
  • প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতোই সমাজবিজ্ঞানেও বিষয়বস্তু পর্যবেক্ষণ এবং তুলনা করার সুযোগ থাকে।
  • সকল প্রাকৃতিক বিজ্ঞানেও পরীক্ষাগারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা সম্পন্ন করা হয় না।
  • সমাজবিজ্ঞানে সবক্ষেত্রে সম্ভব না হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সূত্র প্রদান ও ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব। সমাজবিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেন তাদের সূত্র এবং ভবিষ্যদ্বাণী যেন সর্বজনগ্রাহ্য হয়।
  • সমাজবিজ্ঞান প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতোই সমাজের ঘটনার কার্যকারণ এবং ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকে। যেমন-বিচ্ছেদ,পরকীয়া, কলহ ইত্যাদি।
সুতরাং, সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান?- এ প্রশ্নের উত্তর এখন অনেকটাই পরিষ্কার। এটাকে সমর্থন করে ল্যান্ডবার্গ বলেছেন- "Science is a procedure for discovering the conditions under which events occur " (Lundberg, Sociology, p-8). তাঁর কথার অর্থ হচ্ছে- বিজ্ঞান হচ্ছে একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে সংঘটিত ঘটনার কারণসমূহ আবিষ্কার করা সম্ভবপর। বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ভেবার বলেছেন,সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সে-ই বিজ্ঞান যেখানে সামাজিক ক্রিয়ার ব্যাখ্যামূলক উপলদ্ধির প্রয়াস পরিলক্ষিত হয় এবং এর মাধ্যমে কার্যকারণ সম্পর্কের একটি ব্যাখ্যা দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করানো সম্ভব।
রবার্ট বিয়ারস্টেড তাঁর বই "Social Order" এ সমাজবিজ্ঞানের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য তুলে ধরেছেন।যেমনঃ
  • সমাজবিজ্ঞান একটি ব্যাতিক্রমহীন অথবা দৃষ্ট বিজ্ঞান, আদর্শ বিজ্ঞান না
  • সমাজবিজ্ঞান একটি তাত্ত্বিক বিজ্ঞান, প্রায়োগিক বিজ্ঞান না
  • সমাজবিজ্ঞান একটি বিমূর্ত বিজ্ঞান,এটা বাস্তব বিজ্ঞান নয়
  • সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে সাধারণীকরণের বিজ্ঞান,বিশেষায়িতকরণের বিজ্ঞান নয়
  • সমাজবিজ্ঞান হচ্ছে যুগপৎ, যুক্তিশীল এবং অভিজ্ঞতাবাদী বিজ্ঞান।
সুতরাং, এটা স্পষ্ট যে,পুরোপুরি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের মতো না হলেও বিজ্ঞানের বৈশিষ্ট্য থাকার কারণে সমাজবিজ্ঞানকেও আমরা বিজ্ঞান বলতে পারি।

8.পাঠকের প্রশ্ন-উত্তর|রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী|সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞানঃ

প্রশ্ন-০১ঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের জনক কে?
উত্তরঃম্যাক্স ভেবার।
প্রশ্ন-০২ঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের কয় ধরনের তত্ত্ব রয়েছে?
উত্তরঃ তিন ধরনের। 
প্রশ্ন-০৩ঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে ধ্রুপদী তত্ত্ব দিয়েছেন কারা?
উত্তরঃ হবস,রুশো,ম্যাকিয়াভেলি,লিউকস, কার্ল মার্ক্স, ম্যাক্স ভেবার প্রমুখ।
প্রশ্ন-০৪ঃ রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানে আধুনিক তত্ত্ব দিয়েছেন কারা? 
উত্তরঃ মোস্কা,পেরেতো,জার্গেন হেবারমাস প্রমুখ।
প্রশ্ন-০৫ঃ উত্তর আধুনিক তত্ত্ব প্রদান করেছেন কে রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে?
উত্তরঃ মিচেল ফুকো।
প্রশ্ন-০৬ঃকার্ল মার্ক্স মানবজাতির সংগ্রামকে কীসের সংগ্রাম বলেছেম?
উত্তরঃ শ্রেণি সংগ্রামের।
প্রশ্ন-০৭ঃসমাজবিজ্ঞানের জনক কে?
উত্তরঃঅগাস্ট কোঁৎ
প্রশ্ন-০৮ঃসমাজবিজ্ঞানের ভিত্তি কী?
উত্তরঃযুক্তি।
প্রশ্ন-০৯ঃপ্রাকৃতিক বিজ্ঞান ও সমাজবিজ্ঞানের মিল কোথায়?
উত্তরঃ উভয়ই যুক্তি দ্বারা পরিচালিত হয় 
প্রশ্ন-১০ঃবাংলাদেশে সমাজবিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠাতা কে?
উত্তরঃ প্রফেসর নাজমুল করিম।

9.লেখকের মন্তব্য|রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী|সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞানঃ  

রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞানীরা রাজনীতিকে সমাজের অংশ হিসেবে কীভাবে দেখেছেন সেটা ব্যাখ্যা করেছেন।রাজনৈতিক সমাজবিজ্ঞান কী- এই অংশে তা বিশদভাবে বর্ণনা করেছেন। আর্টিকেলের দ্বিতীয় অংশে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সমাজবিজ্ঞান কি বিজ্ঞান-এই সম্পর্কে। প্রিয় পাঠক,আপনার যেকোনো মন্তব্য, প্রশ্ন,মতামত যেকোনো কিছু গুরুত্বাসহকারে নেয়া হবে। তাই কোনো মন্তব্য বা জিজ্ঞাসা থাকলে তা জানান আমাদের। সবার জন্য শুভকামনা রইলো। 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url