বাংলা কবিতার ছন্দ | ছন্দ নির্ণয় উদাহরণ সহ ছন্দের A to Z
আর্টিকেলটি সাজানো হয়েছে বাংলা কবিতার ছন্দ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে। পাশাপাশি ছন্দ নির্ণয় করার জন্য ছন্দ নির্ণয় উদাহরণ যুক্ত করা হয়েছে। বর্তমানে দুই লাইন মিলিয়ে লিখেই মনে করেন কবিতা হয়ে গেছে। কিন্তু কবিতায় অন্তমিল থাকলেই বা মনের ভাব প্রকাশ করে কিছু লিখলেই সেটা কবিতা হয় না। কবিতার কিছু ব্যাকরণিক এবং গাণিতিক নিয়ম রয়েছে। কবিতার লাইনগুলো সাজানোর এবং কবিতার বক্তব্য প্রকাশের একটি গাণিতিক নিয়ম রয়েছে যাকে বলা হয় ছন্দ। বাংলা কবিতার ছন্দ কাকে বলে? ছন্দ নির্ণয় উদাহরণ, অক্ষর কী? পর্ব কাকে বলে? অতিপর্ব কাকে বলে? বাংলায় মাত্রা কাকে বলে? ছন্দের প্রকারভেদ, কীভাবে ছন্দ নির্ণয় করা হয়? অক্ষরবৃত্ত ছন্দ কী? মাত্রাবৃত্ত ছন্দ কী? এসকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন এই আর্টিকেলে যা বাঙলা (বাংলা) ছন্দ জীবেন্দ্র সিংহ রায় এর বই অনুসরণ করে লেখা হয়েছে।
ছন্দ নিয়ে জানতে বা ছন্দ বিশ্লেষণ করতে আপনাকে আরও কিছু বিষয় জানতে ও বুঝতে হবে। নিচে সে বিষয়গুলো সুন্দরভাবে বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে যাতে আপনি বাংলা কবিতার ছন্দ নিয়ে বিস্তারিত জানতে ও বাংলা কবিতার ছন্দ নির্ণয় বা বিশ্লেষণ করতে পারেন।
১.অক্ষর কী? এর প্রকারভেদ| বাংলা কবিতার ছন্দ নির্ণয় উদাহরণসহ
অক্ষর একটি পারিভাষিক শব্দ। নিঃশ্বাসের একক প্রয়াসে যতটুকু উচ্চারণ করা যায় তাকে বলা হয় অক্ষর। অক্ষরকে সহজে বুঝতে পারবেন ইংরেজির syllable এর মাধ্যমে। ইংরেজিতে যাকে আমরা সিলেবল নামে চিনি বাংলায় তাকে বলা হয় অক্ষর। আসলে আমরা শিক্ষাখাতে বাংলার চেয়ে ইংরেজিকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে থাকি তাই সিলেবল চিনলেও অক্ষর চিনি না।
অক্ষর ২ প্রকার- ১.বদ্ধাক্ষর ১.মুক্তাক্ষর
মুক্তাক্ষর কী?
মুক্তাক্ষর উচ্চারণে মুখবিবরের কোথাও বাধা প্রাপ্ত হয় না। টেনে পড়া যায়। অধিকাংশ মুক্তাক্ষর চেনার সহজ উপায় হলো মুক্তাক্ষরের শেষে স্বরধ্বনির অস্তিত্ব বা উপস্থিতি থাকে যেমন- কি/কে/হ্যাঁ/লো। ক + ই, ক + এ ইত্যাদি
বদ্ধাক্ষর কী?
উচ্চারণ কালে মুখবিবরে বাধা প্রাপ্ত হয়। টেনে পড়া যায় না। বদ্ধাক্ষর চেনার সহজ উপায় হলো এগুলোর অন্তে বা শেষে ব্যঞ্জনধ্বনি থাকে। যেমন- দিন/রাত/চুল/হাত ইত্যাদি। দ+ই+ন, র+আ+ত ইত্যাদি।
২.মাত্রা কী? মাত্রা কাকে বলে? বাংলা কবিতার ছন্দ নির্ণয় উদাহরণসহ
ছন্দের ভাষায় মাত্রা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। মাত্রা মানে হলো পরিমিতি বোধ। বাংলা কবিতার ছন্দে একটি অক্ষর উচ্চারণের ন্যূনতম যে কাল বা পরিমাণ তা হলো মাত্রা। অর্থাৎ মাত্রা হলো অক্ষর বা সিলেবল উচ্চারণের সময়টুকু। মাত্রা হলো কাল পরিমাপক একটি বিশেষ পারিভাষা।
মুক্তাক্ষরে তিন প্রকার ছন্দেই ১ মাত্রা হিসেবে গণনা করা হয়। সে হিসেবে একটি মুক্তাক্ষরকে উচ্চারণের সময়কালকে বলা হয়ে থাকে ১ মাত্রা।
মাত্রা চিহ্ন কেমন? মাত্রা কাকে বলা হয়?
ছন্দ বিশ্লেষণ করার সময় মাত্রা নির্দেশক যে চিহ্ন বা sign ব্যবহার করা হয় তাকে মাত্রা চিহ্ন বলে।
মুক্তাক্ষর চিহ্ন = |
বদ্ধাক্ষর চিহ্ন = _ যেমন-
৩.যতি কী? কাকে বলে? বাংলা কবিতার ছন্দ নির্ণয় উদাহরণসহ
যতি বিরাম বা বিরতির জায়গা। কবিতায় যতি চিহ্ন না থাকলেও যতি হতে পারে। কবিতা আবৃতি করার সময় স্বাভাবিকভাবে যেখানে উচ্চারণ বিরতি ঘটে তাকে বলে যতি। যেমন-
এখানে 'মহাভারতের কথা' এর পর যতি বা বিরাম রয়েছে।
৪.পঙক্তি কাকে বলে? বাংলা কবিতার ছন্দ নির্ণয় উদাহরণসহ
কবিতার একটি লাইন বা ছত্রকে পঙ্ ক্তি বলে।
৫. পর্ব কাকে বলে? পর্ব কী? বাংলা কবিতার ছন্দ নির্ণয় উদাহরণসহ
একটি লাইনের বা পঙক্তির শুরু থেকে প্রথম যতি পর্যন্ত কবিতার যে অংশ তাকে বলা হয় পর্ব।
৬. অপূর্ণ পর্ব কী?
পর্ব অপেক্ষা ক্ষুদ্র মাপের যে কাব্যাংশ চরণের শেষে অবশিষ্ট থাকে তাকে বলা হয় অপূর্ণ পর্ব। যেমন-
৭. অতিপর্ব কী ? অতিপর্ব কাকে বলে? অতিপর্ব এর উদাহরণসহ
কখনো কখনো কোনো কবিতায় মূল পর্ব ও অপূর্ন পর্বের আগে যে সকল অপূর্ণ পর্ব থাকে তাকে অতিপর্ব বলে।যেমন-
৮. প্রস্বর বা ঝোঁক কী? বাংলা কবিতার ছন্দ নির্ণয় উদাহরণসহ
কবিতা আবৃত্তি করার সময় চরণ বা পঙক্তির কোনো কোনো অক্ষরের উপর মুখ-নিঃসৃত বায়ুর চাপ বা শ্বাসাঘাত প্রয়োগ বেশি হয় তাকে প্রস্বর বা ঝোঁক বলে।যেমন-
৯. মধ্যখন্ডন বা ছেদ কী? বাংলা কবিতার ছন্দ নির্ণয় উদাহরণসহ
মূল পর্ব মেলানোর জন্য অনেক সময় শব্দের মধ্য ছেদ ঘটানো লাগে, যাকে মধ্যখণ্ডন বা ছেদ বলে। যেমন-
১০. মূল অংশ |বাংলা কবিতার ছন্দ নির্ণয় উদাহরণসহ
উপরে বর্ণিত ব্যাসিক বিষয়গুলো বুঝতে পারলে আপনি এই অংশ পড়া শুরু করবেন। তাহলে খুব সহজে ছন্দ নির্ণয় করতে পারবেন।
বাংলা ছন্দ মূলত ৩ প্রকার। আরও কিছু অপ্রধাণ ছন্দ রয়েছে যা আমাদের আলোচ্য বিষয় নয়।
১. অক্ষরবৃত্ত
২.মাত্রাবৃত্ত
৩.স্বরবৃত্ত
মনে যা আসল সেটাই লিখে দিয়ে ভাবলেন কবিতা লেখক হয়ে গেছেন এমন ভাবলে ভুল করছেন। কবিতা হওয়ার জন্য এর মধ্যে অনেক কারুকাজ এবং ছন্দের এবং মাত্রার নিকেশ করা হয়।
১১. অক্ষরবৃত্ত ছন্দ কী? কিভাবে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ চেনা যায় বা নির্ণয় করা যায় উদাহরণসহ?
অক্ষরবৃত্ত ছন্দে অক্ষর গুনে গুনে ছন্দ বিশ্লেষণ করা হয়। যেটার মূল পর্ব ৮ কিংবা ১০ মাত্রার হয়ে থাকে এবং যেটির অতিরিক্ত তান থাকে। অর্থাৎ তান প্রধান ছন্দকে অক্ষরবৃত্ত ছন্দ বলে।অর্থাৎ একটি অতিরিক্ত সুরারোপ করা হয়। এটি সর্বাপেক্ষা প্রাচীন ছন্দ। আমাদের প্রাচীন ও মধ্যযুগের দেশজ ইতিহাস ঐতিহ্য গাঁথা কল্পকাহিনির যে কাব্যিক রুপায়ন তা এই ছন্দের মাধ্যমে কবিরা ঘটিয়েছেন। এই ধরণের কাব্যগুলো পড়ার সময় স্পষ্ট একটি সুর শোনা যায়। যেমন-
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য
- মূল পর্বে সাধারণ ৮ + ৬ মাত্রা, ৮ + ১০ মাত্রা, ৮ + ৮ + ৬ মাত্রা, ৮+ ৮ + ৮ + ৬ মাত্রা দেখা যায়
- বদ্ধাক্ষর শব্দের শুরুতে ও মাঝে সাধারণত ১ মাত্রা। শব্দের শেষে ২ মাত্রা।
- শব্দধবনির অতিরিক্ত একটা তান বা সুর থাকে।
- যুক্ত ব্যাঞ্জনের সংযুক্ত উচ্চারণ হয়। তাই ১ মাত্রা।
- লয় ধীর বলে একে ধীরলয়ের ছন্দ ও বলা হয়ে থাকে। ( লয় মানে হলো চলার ধরণ। এই ছন্দ ধীর লয়ের মানে আপনাকে বুঝতে হবে এ ছন্দ ধীরে চলে)
অক্ষরবৃত্ত ছন্দের উদাহরণ
- পয়ার ছন্দ
- মহাপয়ার ছন্দ
- অমিত্রাক্ষর ছন্দ
পয়ার ছন্দ কী?
মহাপয়ার ছন্দ কী?
- প্রবাহমান পয়ার ছন্দ /মহাপয়ার ছন্দ
- প্রবাহমান নয় এমন পয়ার ছব্দ / মহাপয়ার ছন্দ
এখানে ওরে দস্যু ছেলে এর পরে পাঠ করার সময় থামা হবে না। থামা হবে 'ওরে দস্যু ছেলে নেমে আয়' এর পরে। চরণের শেষে না থেমে পরবর্তী চরণে নেমে যাওয়ায় এটি প্রবাহমান। চরণগুলো ৮ + ৬ মাত্রার পর্বে বিন্যস্ত হওয়ায় একে বলা হবে প্রবাহমান পয়ার।
১২. অমিত্রাক্ষর ছন্দ কী? অমিত্রাক্ষর ছন্দ কাকে বলে?
অমিত্রাক্ষর ছন্দ মাইকেল মধুসূদন দত্তের আবিষ্কৃত ছন্দ যা অক্ষরবৃত্ত ছন্দেরই এক নবরূপ। এটি মিত্র অক্ষর যুক্ত নয়। অর্থাৎ পর পর দুটি চরণের অন্তে অক্ষরের মধ্যে কোনো মিল নেই। এর ভাব এবং যতি স্বাধীনভাবে ব্যবহৃত হয়।
১৩.মাত্রাবৃত্ত ছন্দ কাকে বলে? মাত্রাবৃত্ত ছন্দ কী উদাহরণসহ ?
যে ছন্দের মূল পর্ব ৪,৫,৬ এবং ৭ মাত্রার হয়ে থাকে এবং বদ্ধাক্ষর সর্বদা দুইমাত্রা হয়ে থাকে তাকে মাত্রাবৃত্ত ছন্দ বলা হয়।
মাত্রাবৃত্ত ছন্দের বৈশিষ্ট্য
- মাত্রাবৃত্ত ছন্দের মূল পর্ব ৪,৫,৬ এবং ৭ মাত্রার হয়ে থাকে।
- বদ্ধাক্ষর সাধারণ দুই মাত্রার হয়ে থাকে।
- মাত্রাবৃত্ত ছন্দের 'লয়' মধ্যম হয়।
- অতিরিক্ত তান বা সুর থাকে না।
- যুক্ত ব্যাঞ্জন শব্দের শুরুতে থাকলে ১ মাত্রা মধ্য বা শেষে থাকলে ২ মাত্রা হয়।
Shamim
DU
IER
19-20
Best of luck
অনেক ধন্যবাদ বন্ধু
অসাধারণ লেখনী, বিশেষভাবে উপকৃত হলাম। ধন্যবাদ।
অনেক ধন্যবাদ, আপনাকে
Thanks for your valuable topic.
দোয়া করবেন
Thanks for your valuable explanation.
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, আমাদের সাথে থাকার জন্য।
এক কথায় দারুন !!
সেরা হইসে।
অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া
জাযাকাল্লাহ খাইরান
স্বরবৃত্ত টা ব্যাখ্যা করলে উপকৃত হতাম।