দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত
এশিয়ার একমাত্র পরাশক্তি হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান অক্ষ শক্তির হয়ে যুদ্ধে করেছে। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা কি এ সম্পর্কে অনেকেই জানতে আগ্রহী। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ঘরে বসেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা সম্পর্কে খুব সহজেই সকল তথ্য জানা সম্ভব। ঢাকা বিশববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের আজকের আর্টিকেল আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা সম্পর্কে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি স্কিপ না করে সম্পূর্ণ পড়ুন।
আর্টিকেল সূচিপত্র ( যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)
- বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
- জাপানের ভূমিকা সমূহ| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
- পার্ল হারবার আক্রমণের প্রভাব|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
- হিরোশিমা ও নাগাসাকি ট্রাজেডি|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন- উত্তর
- লেখকের মন্তব্য
১. বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
- (১৯১৪-১৮) সালের মধ্যে বিশ্ববাসী প্রথমবারের মতো বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী হয়। যা ইতিহাসে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ নামে পরিচিত ( ওয়ার্ল্ড ওয়ার ওয়ান )
- প্রায় বিশ বছরের ব্যবধানে বিশ্বে আরও একটি যুদ্ধ সংগঠিত হয় ১৯৩৯-৪৫ সালের মধ্যে যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নামে অভিহিত। এই যুদ্ধে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় ৬১ টির মত দেশ অংশগ্রহন করে যা দীর্ঘ ছয় বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চেয়ে সব দিক থেকেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনেক বেশি ভয়াবহ ও বিপর্যয় ঘটে। এই যুদ্ধে উন্নত পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার করে যার দরুণ প্রাণহানি ও হতাহতের সংখ্যা অনেক গুণ বেশি হয়। একমাত্র এশিয়ার দেশ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপান ও অংশগ্রহন করে।
২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
- অক্ষশক্তি - তে জার্মান,ইতালি,জাপান,তুরস্ক , হাঙ্গেরী, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া দেশসমূহ যুক্ত ছিল। অক্ষশক্তির নেতৃবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো- জার্মানির চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপ্রতি অ্যাডলফ হিটলার , জাপানের প্রধামন্ত্রী হিদেকি তোজো ও সম্রাট হিরোহিতো , ইতালির প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি।
- মিত্রশক্তি - তে ব্রিটেন, ফ্রান্স,ব্রাজিল,কানাডা,চীন , ডেনমার্ক , গ্রিস ও নেদারল্যান্ড ইত্যাদি দেশ যুক্ত ছিল।মিত্র শক্তিতে পরবর্তীতে মহাশক্তিধর রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেয়।মিত্রশক্তির নেতৃত্বে ছিল - ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল , ফ্রান্সের পল রেনো, রুশ প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্ট্যালিন,মার্কিন রাষ্ট্রপ্রতি রুজভেল্ট ও ট্রুম্যান এবং অন্যান্যরা।
৩. জাপানের ভূমিকা সমূহ|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
জাপান বিশ শতকের শুরুর দিক থেকে অন্যতম শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে শুধু মাত্র প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নয় পুরো এশিয়ার মধ্যে নিজের স্থান পাকা করে নিয়েছিল । প্রথম চিন- জাপান যুদ্ধ হয়েছিল ১৮৯৪-৯৫ খ্রিষ্টাব্দের দিকে । সে যুদ্ধে জাপান চীন কে পরাজিত করেছিল । জাপান ১৯০৬ খ্রিষ্টাব্দে তার থেকে বেশি শক্তিশালী সোভিয়েত রাশিয়াকে পরাজিত করে সবাইকে অবাক করে দেয় । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র সহ অন্যান্য ইউরোপীয় রাষ্ট্ররা জাপানের সঙ্গে ওয়াশিংটনের সম্মেলনে তিনটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল । তখন থেকেই বলা যায় সাম্রাজ্যবাদী জাপানের উত্থান হতে থাকে।
- জাপানের সমরনীতি - বিংশ শতাব্দীর প্রায় তিরিশের দশকে জার্মানিতে যেমন নাৎসিবাদ , ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটেছিল ইটালিতে, ঠিক তেমনি সমরবাদের উত্থান হয় জাপানে। সোয়াকাই নামে জাপানের সামরিক দল তখন খুব জনপ্রিয়তা লাভ করে । তৎকালীন জাপানের প্রধানমন্ত্রী তানাকা নির্দেশ দেন জাপানের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সমাধানের লক্ষে যুদ্ধনীতি একান্ত প্রয়োজন যাকে বলে তানাকা মেমোরিয়াল। এভাবেই জাপানের সমরনীতির উত্থান হয় ।
- জাপান কর্তৃক মাঞ্চুরিয়া দখল - এশিয়ার একমাত্র সাম্রাজ্যবাদী জাপান প্রথম থেকেই চীনের প্রাকৃতিক সম্পদের প্রতি প্রলুব্ধ হয় ।এবং একপর্যায়ে এই আগ্রাসী জাপান মাঞ্চুরিয়ায় আক্রমণ করে নিজেদের দখলে নেয় । জাপান পাশাপাশি তাদের অতিরিক্ত জনসংখ্যার স্থানান্তর করতে চেয়েছিল । জাপান ১৯৩১ সালে একতরফা ভাবে মাঞ্চুরিয়া দখল করে । এবং মাঞ্চুরায়ার নতুন নামকরণ করেন ‘ মাঞ্চুকুয়ো ’। এরপর জাপান দখলকৃত মাঞ্চুরিয়ায় একটি তাঁবেদারি সরকার প্রতিষ্ঠা করে । এক্ষেত্রে চীন জাতিসংঘে কাছে অভিযোগ করলে জাতিসংঘ আক্রমণকারী দেশ হিসেবে জাপানকে ঘোষণা করে এছাড়াও লিটন কমিশন গঠন করে । তবে জাতিসংঘ জাপানের ওপর কোন ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
- রোম - বার্লিন - টোকিও অক্ষচুক্তি জোট - জাপান সাম্যবাদী তৎপরতায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ১৯৩৬ সালে জার্মানির সঙ্গে কমিনটার্ন বিরোধী চুক্তি অর্থাৎ ( Anti – Commintern Pact ) স্বাক্ষর করেছিলেন । পরবর্তীতে অক্ষশক্তি ভুক্ত দেশ ইতালি ১৯৩৭ সালে এই জোটে যোগ দিলে একত্রে গড়ে ওঠে রোম – বার্লিন – টোকিও অক্ষচুক্তি জোট । এই সাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী নীতি গ্রহণ করা হয় যে এই জোটভুক্ত কোন দেশ যদি চতুর্থ কোনো শক্তি বা অন্য শক্তির দ্বারা আক্রমণ হলে চুক্তিবদ্ধ দেশগুলি পরস্পরকে সাহায্য করবে ।
- দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় জাপানি আগ্রাসন - দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ফ্রান্স ইংল্যান্ড পাশাপাশি হল্যান্ডের উপনিবেশগুলি (ইন্দোচিন , ইন্দোনেশিয়া , সিঙ্গাপুর , ব্রহ্মদেশ) ইত্যাদি দেশের ওপর জাপানের দৃষ্টি পড়ে । জাপান চেয়েছিল এসব দেশগুলির বনজ সম্পদ , খনিজ তেল , মূল্যবান ধাতু ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ কায়েম করে নিজের শ্রী বৃদ্ধি করতে । পরবর্তীতে জাপান ১৯৪১ সালে টোকিও আক্রমণ করে ।দক্ষিণ পূর্ব এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় এলাকায় জাপানের সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসী নীতি আমেরিকা সহ্য করতে পারেনি । যার দরুন আমেরিকা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারি করে জাপানের ওপর ।
- পার্ল হারবার আক্রমণ -১৯৪১ সালে ওয়াশিংটনে উভয় পক্ষের মধ্যে যখন শান্তি চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল ঠিক তখনি জাপানি বিমান বাহিনী আকস্মিক হামলা মার্কিন নৌঘাঁটি পার্ল- হারবারে আক্রমণ করে তা ধ্বংস করে । যার দরুন ৮ ই ডিসেম্বর আমেরিকা সরাসরি জাপানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । আমেরিকা তার শক্তিশালী সামরিক শক্তি দিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সর্বশেষ পরাজয় এসে জার্মান ১৯৪৫ সাল আত্মসমর্পণ করে । কিন্তু তখন নাছোড়বান্দা জাপান সেনা বাহিনী যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছিল । অবশেষে ১৯৪৫ সালে ৬ ই এবং ৯ ই আগস্ট জাপানের দুইটি শহর হিরোশিমা এবং নাগাসাকি শহরের উপর আমেরিকা পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করে ।যার ভয়াবহতায় দুটি শহর পুরো ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় । এমন পরিস্থিতিতে জাপান সৈন্য বাহিনীর সামনে আত্মসমর্পণ ছাড়া অন্য কোন উপায় ছিল না ।
- প্রাথমিক সাফল্য - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রথম দিকে সাম্রাজ্যবাদী জাপান দারুণ সাফল্য অর্জন করে। ১৯৪২ সালে জাপানি সৈন্যরা জানুয়ারি মাসে ম্যানিলা দখল করে এছাড়াও ফেব্রুয়ারিতে সিঙ্গাপুরের পতন ও মার্চে ডাচ ইস্ট ইন্ডিজ এবং রেঙ্গুন (বার্মা) আক্রমণ করে সফল হয়। অন্যদিকে মিত্রশক্তির অস্ট্রেলিয়ার সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা অসুবিধা হয়ে পড়ে এবং ব্রিটিশদের নৌ ঘাঁটি অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয় যা জাপানী নৌবাহিনীকে স্বাধীনতার দিকে প্রতিশ্রুতি বদ্ধ করে তোলে। তোজোর আত্মবিশ্বাস ও জনপ্রিয়তা ধীরেধীরে বেড়ে ওঠে এবং কিছুটা ফ্যাসিবাদী নেতাদের মতো আচরন করে।
৪. পার্ল হারবার আক্রমনের প্রভাব|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার যোগদান - ১৯৪১ সালে ৭ ডিসেম্বর জাপান আমেরিকার নৌঘাঁটি পার্ল হারবার এ আক্রমণ করে । ফলে আমেরিকা নিরপেক্ষতার নীতি কে উপেক্ষা করে নিজেদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে সরাসরি যুদ্ধে নেমে পড়ে। পরবর্তীতে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে দুইটি পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে যার পরিণতি ছিলো বিশ্ব ভয়াবহ বিপর্যয়। তবে জাপান যদি সেদিন পার্ল হারবার আক্রমণ না করতো হয়তো ইতিহাস অন্য ভাবে রচিত হতে পারতো বলাই যায় ।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এশিয়া জড়িয়ে পড়ে - আমরা যায় প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ মূলত সংগঠিত হয়েছিল ইউরোপের মধ্যেই । ঠিক তেমনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যদিও ইউরোপের যুদ্ধ ছিল তারপরও ইউরোপ অতিক্রম করে এশিয়া আফ্রিকায় ছড়িয়ে পড়ে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে এশিয়ার একমাত্র দেশ জাপান অক্ষ শক্তির হয়ে যুদ্ধ করে । জাপান এশিয়ার অভ্যন্তরে পার্ল হারবার এ আক্রমণের মধ্য দিয়েই পুরো এশিয়া সরাসরি ভাবে বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ।
- জাপানের বিপর্যয় - একমাত্র পার্ল হারবার আক্রমণই ছিলো জাপানের জন্য সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের কারণ । জাপান প্রাথমিক পর্যায়ে এশিয়ার একমাত্র পরাশক্তি ছিল । একের পর সাম্রাজ্য দখলে নিয়েছিল। পুরো এশিয়ায় তার কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করেছিল। কিন্তু পার্ল হারবার আক্রমণ এর পরে আমেরিকা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে । এবং সবদিক থেকে জাপান কে কোণঠাসা করে ফেলে। মিত্র শক্তি একজোট হয়ে যাওয়া কে ধীরে ধীরে দুর্বল করে দেয় । তাদের সামরিক শক্তি থেকে শুরু করে জনবল ও আর্থিক ভাবে বিপর্যয় নেমে আসে। এভাবেই যুদ্ধে জাপানের পতন ঘটে।
- ইউরোপে দ্বিতীয় রণাঙ্গন - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান এর দুই পাশে দুই মিত্র শক্তির অবস্থান ছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন ও ফ্রান্স। প্রথমেই জার্মান ফ্রান্স কে আক্রমণ করে থাকে । পরবর্তীতে জার্মান রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ করতে থাকে । অর্থাৎ মিত্র শক্তি দুই দিকে তাদের আক্রমণ করতে পারে নি শুধুমাত্র পূর্বপাশেই রণাঙ্গন চলতে থাকে । কিন্তু জাপান কর্তৃক পার্ল হারবার আক্রমণের পরই আমেরিকা সরাসরি যুদ্ধে যোগদান করে এবং পশ্চিম অঞ্চলে ও যুদ্ধ শুরু হয়ে যায় । জার্মান কে দুই দিক থাকে মিত্র শক্তি আক্রমণ করে ফলে জার্মান তথা অক্ষ শক্তির পরাজয় ঘটে যুদ্ধ ক্ষেত্রে।
- পারমানবিক অস্ত্রের ব্যবহার - পৃথিবীর ইতিহাসে এই প্রথম দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আধুনিক শক্তিশালি পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার হয়। পুরো বিশ্ব এই পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহারে আতঙ্কিত হতে উঠেছিল । আমেরিকা জাপানের দুটি শহরে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে লিটল বয় ও ফ্যাট ম্যান নামে পারমাণবিক বোমা নিক্ষেপ করে । যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলায় পরিণত হয় জাপান। শুধু মাত্র পার্ল হারবার আক্রমণের সূত্র ধরেই এত বড় বিপর্যয়ের সাক্ষী হয়েছিলবিশ্ববাসী ।
৫. হিরোশিমা ও নাগাসাকি ট্রাজেডি|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
৬. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণ| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের ভূমিকা
- জাপানের আগ্রাসন/ সাম্রাজ্যবাদ নীতি -দুরপ্রাচ্য জাপান প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে তার সাম্রাজ্য বৃদ্ধির লক্ষে মিত্রশক্তি পক্ষে যোগদান করেছিল । বিশেষ করে প্রশান্ত মহাসাগরে তার আধিপত্য বিস্তার করতে চেয়েছিল । কিন্তু এক্ষেত্রে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন এর সাথে সংঘাত বেধে যায় কারণ এটি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র এর আধিপত্য বিস্তারে ও নিজস্ব স্বার্থ হাসিলে বাধা হয়ে দাঁড়াবে । অর্থাৎ এক পর্যায়ে মিত্রশক্তির সঙ্গে জাপানের বিরোধ তৈরি হয়। ফলে জাপান জার্মান এবং ইতালির সাথে জোটবদ্ধ হয়। ১৯৩১ সালে জাপান চীনের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণের মাধ্যমে নিজেদের দখলে নেয়। এবং চীন জাপান যুদ্ধ দীর্ঘ দিন চলতে থাকে। ১৯৪১ সালে এসে জাপান আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পার্ল হারবারেে এ আক্রমণ করে যার পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র ও সরাসরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহন করে। সুতরাং জাপানের সাম্রাজ্য বিস্তারের এই আগ্রাসন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আরেকটি অন্যতম কারণ ।
- চীন - জাপান যুদ্ধ -দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অন্যতম আরেকটি কারণ হলো চীন জাপান মধ্যে সাম্রাজ্য বিস্তার নিয়ে বিরোধ। আগ্রাসী জাপান ১৯৩১ সালে রাজতান্ত্রিক চীনের মাঞ্চুরিয়ায় কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই আক্রমণ করে । এছাড়া মার্কোপলো সেতু দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে চীন জাপান যুদ্ধ শুরু হয় । পরবর্তীতে আগ্রাসী জাপান চীনের বিভিন্ন স্থানে যেমন সাংহাই , নানকিং এসব জায়গায় বোমা নিক্ষেপ করে । এতে লক্ষ লক্ষ মানুষ হতাহত হয় । যা পরে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিবেশ তৈরি করে ।
- আদর্শগত দ্বন্দ্ব - প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মধ্যে আদর্শগত মতবিরোধ দেখা দেয় । ফলে নিজস্ব আদর্শের ভিত্তিতে এসব রাষ্ট্র গুলো দুই ভাবে বিভক্ত হয়ে যায় । ইতালি,জার্মান ,স্পেন, জাপান প্রভৃতি রাষ্ট্রগুলো স্বৈরতান্ত্রিক আদর্শের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। অপরদিকে ফ্রান্স, ইংল্যান্ড , যুক্তরাষ্ট্র এসব দেশ গুলো গণতন্ত্রের আদর্শে পরিচালিত হয়। এছাড়া সমাজতান্ত্রিক আদর্শে বিশ্বাসী রাষ্ট্র ছিলো সোভিয়েত রাশিয়া। দেশগুলোর মধ্যে এসব নানাবিধ আদর্শিক দ্বন্দ্বের কারণে বৈশ্বিক রাজনীতিতে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় ও বিশ্ব রাজনীতি ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। যার ফলশ্রুতিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পড়ে।
- বিশ্ব অর্থনীতিতে মহামন্দা-দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ১৯২৯ সালের শেষের দিকে বিশ্ব অর্থনীতিতে চরম অর্থ সংকট দেখা দেয় । এমন পরিস্থিতিতে অর্থনৈতিক গবেষকরা এরূপ অর্থনৈতিক ছন্দ পতন যে ইতিহাসে মহামন্দা বা গ্রেট ডিপ্রেসন বলে অভিহিত করেছেন ।প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে বিশ্বে চরম অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয় । এতে অনেক দেশেই চরম মুদ্রা স্পৃথি দেখা দেয় বিশেষ করে জার্মানিতে। এছাড়াও আমেরিকাতে বড় বড় শেয়ার বাজার গুলোতে ধস নামে ফলে পুরো বিশ্বের অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ে। বিশ্ববাণিজ্য ও শিল্পায়ন প্রক্রিয়া ব্যাহত হয়। বেশ কিছু দেশ এই পরিস্থিতি থেকে দেশবাসী কে বেরিয়ে আনার লক্ষ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহন করে।
- ভার্সাই চুক্তি (২৮ শে জুন , ১৯১৯)- মূলত ভার্সাই চুক্তি হলো প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর আত্মসমর্পণ পত্র । আর এই চুক্তিতে যুদ্ধে জয়ী মিত্রশক্তির পক্ষ থেকে সাক্ষরিত নীতি অনুযায়ী জার্মানিকে লাগামহীন মূল্য পরিশোধ করতে হয়। এই চুক্তির ৪৪০ টি শর্তের প্রায় বেশির ভাগ শর্ত জার্মান দের জন্য অন্যায় এবং অপমানজনক ছিলো । মিত্রশক্তি জার্মান কে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের যুদ্ধপরাধী হিসেবে ঘোষণা করে বিদ্ধস্ত জার্মান কে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬৬০ কোটি পাউন্ড দাবি করে । এছাড়া দেখা যায় , ফ্রান্স এবং বেলজিয়াম এর কাছে জার্মান রাজ্যের পশ্চিম অঞ্চল গুলোর নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা চলে যায় অন্যদিকে পূর্ব অঞ্চলে একটি নতুন রাষ্ট্র পোল্যান্ড তৈরি করে । যার ফলে এ অঞ্চল সমূহের স্থানীয় জার্মানদের কে বিভিন্নভাবে হেয়পন্য করতে থাকতে । এবং পাশাপাশি জার্মানদের সামরিক , নৌ,শিল্প বাণিজ্য শক্তিকে সংকুচিত করে মিত্রশক্তি নিজেদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে থাকে । এমনকি জার্মানে ট্যাংক- কামান ও বিমানবাহিনী না রাখার বিধিনিষেধ দেওয়া হয়েছিল ।ফলে জার্মানবাসীদের প্রতিশোধ স্পৃহাকে জাগ্রত হয় । যার দরুণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অনিবার্য হয়ে পরে।
- প্রত্যক্ষ কারণ - প্রথম বিশ্ব যুদ্ধের পর অক্ষশক্তি তথা জার্মান , জাপান ও ইতালি জোটবদ্ধ হয়। একপর্যায়ে হিটলার পোলিশ করিডর দখল করে চায়। এমন পরিস্থিতিতে ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স কোনো মতেই হিটলারের দাবি রাজি নয়। তারা দরকার হলে পোল্যান্ডের হয়ে যুদ্ধ করবে। ইংল্যান্ড ও ফ্রান্সের এসব জবাব উপেক্ষা করে ১৯৩৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর জার্মান পোল্যান্ডে আক্রমণ শুরু করে দেয় । যার পরিপ্রেক্ষিতে মাত্র দুই দিনের মধ্যেই ৩ সেপ্টেম্বর ইংল্যান্ড ও ফ্রান্স পোল্যান্ডের হয়ে জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে । এইভাবেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নামক বিপর্যয় শুরু হয়ে যায় বিশ্বে যা চলতে থাকে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় বছর।
0 Comments
দয়া করে নীতিমালা মেনে মন্তব্য করুন