OrdinaryITPostAd

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ

বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক ভয়ংকর বিভীষিকাময় অধ্যায়। আমরা হয়তো অনেকেই জানি বিশ্বযুদ্ধের পিছনে জার্মানির অবদান কতটুুকু আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে তো বলাই হয় জার্মান তথা হিটলারের যুদ্ধ। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ের জার্মানের এত জয়জয়কার থাকার পরেও কেনো বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ! তাই আমরা অনেকেই বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ।বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ঘরে বসেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ এ সম্পর্কে খুব সহজেই  সকল তথ্য জানা সম্ভব। ঢাকা বিশববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের আজকের আর্টিকেল আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ  সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি স্কিপ না করে সম্পূর্ণ পড়ুন।



আর্টিকেল সূচিপত্র ( যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)

  1. বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
  2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ 
  3. পরাজয়ের কারণসমূহ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ 
  4. হিটলার ও নাৎসীবাদের উত্থান । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ 
  5. ব্যাটল অব বার্লিন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ  
  6. বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের অবদান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
  7. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন- উত্তর 
  8.  লেখকের মন্তব্য

 ১. বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ 

মানবসভ্যতা প্রথম বারের মতো বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে  বিশ্ব যুদ্ধের সাক্ষী হয়েছিল । বিশ্বযুদ্ধ শব্দটি সাধারণত বিশ শতকে ঘটে যাওয়া দুটি অভূতপূর্ব দ্বন্দ্বের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় । বিশ্বযুদ্ধ একটি আন্তর্জাতিক সংঘাত যা বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ প্রধান পরাশক্তি ও জনবহুল দেশগুলো জড়িত থাকে। বিশ্বযুদ্ধ ( World War) এমন একটি যুদ্ধকে নির্দেশ করে যেখানে বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ জাতিই প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে । ইতিহাস বর্ণিত ভয়ংকর এই বিশ্বযুদ্ধ ব্যাপক হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয় ও সাধারণ মানুষের জীবযাত্রা হুমকির মুখে পড়ে ।বিশ্বে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি করে । পৃথিবীতে এ পর্যন্ত মোট দুইটি বিশ্বযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছে।
  1. প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৮) সময়কাল পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয় ।  এ যুদ্ধে জার্মানিকে যুদ্ধপরাধ দেশ হিসেবে ঘোষণা করে মিত্রশক্তি । এরপরই ভার্সাই চুক্তির অমানবিক শর্ত জার্মানদের ওপর চাপিয়ে দেয় ফলে জার্মানদের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
  2. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল (১৯৩৯-৪৫) দীর্ঘ ছয় বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয় ।  তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে যার ফলে হতাহত ও প্রাণহানির সংখ্যা অনেক গুণ বেশি হয় । প্রায় ৬১ টি দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে এবং টা চলতে থাকে দীর্ঘ ছয় বছর ।

২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ 

পৃথিবীর  ইতিহাসে সবচেয়ে রক্তক্ষয়ী সংঘাত হলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।  একে  ইতিহাসে  কুখ্যাত ঘটনা বলে ও অবিহিত করে। প্রথম  বিশ্বযুদ্ধের (১৯১৪-১৮) পর প্রায় দুই দশকের ব্যবধানে আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হয় , যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিভীষিকাময় অধ্যয়। ১৯৩৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর জার্মান অনাক্রমন চুক্তি ভেঙে পোল্যান্ড কে আক্রমণ করে ,যার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স ও ব্রিটেন জার্মানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে যা পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের রূপ নেয়। এই যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল প্রায় ছয় বছর (১৯৩৯-৪৫) পর্যন্ত।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কে গ্লোবাল ওয়ার হিসেবেও আখ্যা দেওয়া হয়েছে। কারণ একমাত্র এই যুদ্ধেই পৃথিবীর প্রায় অধিকাংশ দেশ অংশগ্রহণ করে এবং দেশের সাধারণ নাগরিকগণ ও যোগদান করে। এছাড়াও পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে ভয়াবহতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় । ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়া মহাদেশ পর্যন্ত বিশ্বযুদ্ধ বিস্তৃত হয়ে থাকে । এতে প্রায় ৩০ টি দেশের দশকোটি সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করে । 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যে দুইটি শক্তিজোট যুক্ত ছিলো - অক্ষ শক্তি ও মিত্রশক্তি ।
  • অক্ষশক্তি - তে জার্মান,ইতালি,জাপান,তুরস্ক , হাঙ্গেরী, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া দেশসমূহ যুক্ত ছিল। অক্ষশক্তির নেতৃবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো- জার্মানির চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপ্রতি অ্যাডলফ হিটলার , জাপানের প্রধামন্ত্রী হিদেকি তোজো ও সম্রাট হিরোহিতো , ইতালির প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি।
  • মিত্রশক্তি  তে ব্রিটেন, ফ্রান্স,ব্রাজিল,কানাডা,চীন , ডেনমার্ক , গ্রিস ও নেদারল্যান্ড ইত্যাদি দেশ যুক্ত ছিল।মিত্র শক্তিতে পরবর্তীতে মহাশক্তিধর রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেয়।মিত্রশক্তির নেতৃত্বে ছিল - ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল , ফ্রান্সের পল রেনো, রুশ প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্ট্যালিন,মার্কিন রাষ্ট্রপ্রতি রুজভেল্ট ও ট্রুম্যান এবং অন্যান্যরা।
১৯৪৫ সালে জার্মান  নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটে। তবে সর্বশেষ জাপানের আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়েই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাপ্ত হয়।

৩. পরাজয়ের কারণ সমূহ| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ 

প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে (১৯১৪-১৮) সালের মধ্যে  অক্ষশক্তি তথা জার্মান  সাফল্যের সাথে অগ্রসর হলেও শেষপর্যন্ত যুদ্ধের ফলাফল জার্মানির বিপক্ষে চলে যায় এবং তারা মিত্রশক্তির কাছে পরাজিত হয় । ঠিক তেমনি ভাবে দুই দশক পর সংগঠিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রাথমিক পর্যায়ে জার্মানির জয়জয়কার অগ্রগতি দেখা যায় তারা একের পর এক সাম্রাজ্য দখলে নেয় । বলতে গেলে হিটলার তখন চরম আগ্রাসী হয়ে উঠে । এরূপ পরিস্থিতিতে আমেরিকা   নিরপেক্ষতার নীতি ভেঙ্গে মিত্র শক্তি পক্ষে যুদ্ধে সরাসরি যোগদান করে । ফলশ্রুতিতে  অক্ষশক্তি মিত্র শক্তির তুলনায় দুর্বল হয়ে পড়ে যার পরিণতি যুদ্ধে  জার্মানির পতন হয় ।

এ পর্যায়ে  বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ গুলো বিস্তারিত  আলোচনা করা হলো - 
  • জার্মানির রাশিয়া অভিযানে ব্যর্থতা - একের পর সাম্রাজ্য দখলে চরম পর্যায়ে চলে যায় উগ্রবাদী হিটলার । একপর্যায়ে এই উগ্রবাদী হিটলার রাশিয়ায় আক্রমণ করে দ্রুত তা নিজের দখলে নিয়ে আসতে চেয়েছিল । এর পরিপ্রেক্ষিতে জার্মান কর্তৃক হিটলারের নির্দেশে সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ ছিলো তাদের জন্য চরম ভুল সিদ্বান্ত । সোভিয়েত রাশিয়া বিভিন্ন জায়গায় তাদের রুশ সেনাবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং তারা রণাঙ্গনে গেরিলা যুদ্ধকৌশল প্রয়োগ করে যা জার্মানদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও রাশিয়া পোড়ামাটির নীতি ( অর্থাৎ তারা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য পুড়িয়ে দিয়ে তাদের পিছু হটাতে থাকে ) অনুসরণ করে যার ফলে জার্মান তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ও হেরে যায়।
  • স্তালিন গ্রাদের যুদ্ধে ব্যর্থতা - স্তালিন গ্রাদের যুদ্ধ ছিল জার্মান দের জন্য পরাজয়ের আরো একটি টার্নিং পয়েন্ট। এটি ছিলো ইতিহাসে অনেক ব্যয়বহুল একটু যুদ্ধ। ককেশাসের তেল ক্ষেত্রের জন্যই মূলত জার্মান এই যুদ্ধে জড়ায় । কিন্তু হিটলারের নির্দেশে জার্মানদের সিক্সথ আর্মি পুরো শহর না ঘিরে তারা শহরের ভিতরে ঢুকে গিয়ে অলিগলিতে ও শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে । সিক্সথ আর্মি শহরে ভিতরে ঢুকলেই এমন পরিস্থিতিতে রুশ বাহিনী তাদের চার দিক থেকে ঘিরে ফেলে। এই সময় হিটলার তাদের কে পিছু না হটার নির্দেশ দেয়। যার পরিণতি পরাজয় অনিবার্য হয়ে পড়ে ।
  • গ্রিস আক্রমণ - গ্রিস আক্রমণ ছিলো জার্মানির আরো একটি ভুল সিদ্ধান্ত । রাশিয়া আক্রমণের আগেই গ্রিস আক্রমণ করে বসে এবং সেখান প্রায় ছয় সপ্তাহের মতো সময় লাগে যা রাশিয়ার ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে যায় । এই দেরির কারনে শরতের শেষে রাশিয়ায় শীত নেমে যায় । ফলশ্রুতিতে অপারেশন বারবোসা রাশিয়া আক্রমণে কোনো কাজে আসেনি বরং অতিরিক্ত শীতের ফলে বিপাকে পড়ে যায় জার্মান বাহিনী।
  • পিছু না হটার নীতি - হিটলারের নির্দেশে ১৯৪১-৪২ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন কে আক্রমণ করে , ওই সময় তাদের সাথে যুদ্ধে ব্যর্থ হলে পিছু হটেছিল । কিন্তু এরপর এই হিটলার ঘোষণা দেয় যুদ্ধে পিছু না হটার নীতির । এমন ভুল সিদ্ধান্তের কারণে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে আবারও পরাজিত হয় ।
  • কূটনৈতিক ব্যর্থতা - মিত্রশক্তির তুলনায় জার্মানি কূটনৈতিক ভাবে দুর্বল ছিলো। দেখা যায় , মিত্র শক্তি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অক্ষ পক্ষের দেশ ইতালিকে নিজেদের দলে নিয়ে আসে কূটনীতি প্রয়োগ করে । এরূপ পরিস্থিতিতে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে জার্মানি একা হয়ে যায় । তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্র পক্ষের কূটনীতির কাছে জার্মান হেরে যায়।
  • আমেরিকার সরাসরি যোগদান - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা নিরপেক্ষতার নীতি মেনে প্রাথমিক দিকে যুদ্ধে অংশ নেয়নি। কিন্তু পরোক্ষভাবে ঠিকই জড়িত ছিলো। কেননা আমেরিকা লেন্ড লিজ আইন এর নীতি অনুযায়ী মিত্রশক্তি তথা ইংল্যান্ড কে প্রচুর পরিমাণে অর্থ, যুদ্ধজাহাজ , যুদ্ধবিমানসহ আরো বিভিন্ন ধরনের আধুনিক সামরিক অস্ত্র সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করে আসছিল। কিন্তু দেখা যায় ১৯৪১ সালে ৭ ডিসেম্বর জাপান কর্তৃক আমেরিকার নৌ ঘাঁটি পার্ল হারবারে আকস্মিক আক্রমণ করে বসে । এরপরই আমেরিকা নিরপেক্ষতার নীতি ভেঙ্গে দিয়ে যুদ্ধে সরাসরি মিত্র শক্তির পক্ষে যোগদান করে । যার ফল মিত্র বাহিনীর সামরিক শক্তির কাছে জার্মানির সামরিক শক্তি তুচ্ছ হয়ে পড়ে। জার্মানি অবশেষে যুদ্ধ পরাজয় বরণ করে।
  • সামরিক শক্তি - যুদ্ধ ক্ষেত্রে জয় পরাজয়ের পিছনে যেকোনো দেশের সামরিক শক্তি অনেক বেশী ভূমিকা পালন করে । তেমনি প্রথম ও দ্বিতীয় দুই বিশ্বযুদ্ধেই জার্মানির একার পক্ষে শক্তিশালী মিত্র পক্ষ কে সামাল দেওয়া সহজ ছিল না । যদিও জার্মানির সামরিক শক্তি এককভাবে অনেক বেশি ছিল । কিন্তু জোটবদ্ধ মিত্র শক্তির মোট সামরিক শক্তির তুলনায় জার্মানির সামরিক শক্তি যথেষ্ট ছিলো না যার ফলে পরাজয়ের দিকে এক ধাপ এগিয়ে দেয়।
  • ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য - মিত্র পক্ষের ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড জার্মানের তুলনায় ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে বেশি অগ্রসর ছিলো। মিত্রপক্ষের বিস্তৃত ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য থাকায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনীয় অর্থ ও জনবল পেয়েছিল । অন্যদিকে অক্ষশক্তি জার্মানের দ্বারা যা সম্ভব ছিল না ।
  • রণকৌশল - আগ্রাসী জার্মান আক্রমণাত্মক যুদ্ধকৌশলে বেশি পারদর্শী ছিল। যা তাদের জয়লাভের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তারা আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে মোটেই দক্ষ ছিলো না । যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পিছু হটার/ পিছিয়ে যাওয়ার মতো অন্যান্য দেশের মতো বিশেষ করে রাশিয়ার মত তাদের কোনো ভূখণ্ড ছিল না । এমন পরিস্থিতিতে জার্মানদের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায় ।
  • অক্ষশক্তির মধ্যে লক্ষের ভিন্নতা - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণের পিছনে তিন অক্ষশক্তি জার্মান, ইতালি ও জাপান প্রত্যেকেরই নিজস্ব স্বার্থ ছিলো । জার্মানে হিটলার চেয়েছিল বিশ্ব থেকে গনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মতবাদকে রুখে দিয়ে স্বৈরতন্ত্র/ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে । অন্যদিকে ইতালির উদ্দেশ্য ছিলো ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মতবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে । আর আগ্রাসী জাপান চেয়েছিল সাম্রাজ্য বিস্তার করতে । অন্যদিকে মিত্রশক্তির একটাই লক্ষ্য ছিল বিশ্বে শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করা । কিন্তু অক্ষশক্তির এই ভিন্ন ভিন্ন মতবাদের কারনেই তাদের পরাজয় ঘটে।
  • হিটলারের নখদর্পনহীন মিত্র 
  • প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার
  • আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
  • কমান্ডার ইন চিফের দায়িত্ব 
  • দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ
  • জেনারেলদের কথা অগ্রাহ্য করা

৪. হিটলার ও নাৎসীবাদের উত্থান| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে শুধু মাত্র সোভিয়েত ইউনিয়নের সমাজতান্ত্রিক মতবাদ বাদে বিশ্বে প্রায় অধিকাংশ দেশেই গণতান্ত্রিক আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হয় । দেখা যায় জার্মানেে  ও রাজতন্ত্রের বিরোধিতা শুরু হয়ে যায়। বিভিন্ন অঞ্চলে গণ আন্দোলন শুরু হলে জার্মানির সম্রাট হল্যান্ডে পাড়ি জমায়। এরপর জার্মানিতে রাজতন্ত্রের পরিবর্তে সমাজতান্ত্রিক নেতা ফ্রেডারিক ইবার্ট প্রজাতান্ত্রিক সরকার গঠন করে নাম ভাইমার প্রজাতন্ত্র। 
কিন্তু এই ভাইমার প্রজাতন্ত্র সরকারের নানান দুর্বলতার দিক সামনে আসতে থাকে। দেশে বিভিন্ন ধরনের সংকট দেখা দেয় - অর্থনৈতিক সংকট, রাজনৈতিক অস্থিরতা, মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, জনসংখ্যা বৃদ্ধি সব মিলিয়ে এক চরম সংকটের মধ্যে পড়ে জার্মান । এছাড়া ও প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিত্রপক্ষের দেওয়া অমানবিক ভার্সাই চুক্তির শর্ত যা যুদ্ধে ক্ষতিখস্ত জার্মানদের মধ্যে চরম উত্তেজনা সৃষ্টি করে ও প্রতিশোধের স্পৃহা জাগিয়ে তোলে।
এমন পরিস্থিতিতে জার্মানে হিটলার এর নেতৃত্বে ইতালির ফ্যাসিবাদের মতো এখানে নাৎসীবাদের উত্থান হয়। তাদের মূল উদ্দেশ্যই ছিলো গণতন্ত্রের বিলোপ , জার্মান থেকে ইহুদীদের বিতাড়িত করা । এবং বিশাল জার্মান সাম্রাজ্য গঠন করে জার্মানিকে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ শক্তিধর জাতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এভাবেই হিটলার ও নাৎসিবাদের উত্থান ঘটে জার্মানিতে ।

এ অংশে জার্মানিতে হিটলার ও নাৎসিবাদ উত্থানের কিছু কারণ নিয়ে আলোচনা করা হলো -
  • ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ব্যর্থতা - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে ভাইমার প্রজাতন্ত্র গঠন করা হয় রাজতন্ত্রের পরিবর্তে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই এই প্রজাতন্ত্র নানান সমস্যার কবলে পড়ে। অপমানজনক ভার্সাই চুক্তির সকল শর্ত মেলে নিলে ও ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হলে জার্মানবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ভাইমার প্রজাতন্ত্রের উপর। আর এই সুযোগে জার্মানে হিটলার এর নাৎসী বাহিনীর উত্থানের পথ আরও সুগম হয়।
  • ইহুদি বিদ্বেষ - জার্মানিতে ইহুদিদের বসবাস কোনো মতেই তারা সহ্য করতে পারতো না । কারণ তারা টিউটন জাতিভুক্ত ছিলো। জার্মানিদের নানাবিধ সংকটের জন্য অধিকাংশই ইহুদীদের দায়ী করে। এমন পরিস্থিতিতে জার্মানদের সুযোগ নিয়ে হিটলারের নাৎসি বাহিনী ইহুদীদের বিতাড়িত করতে কর্মসূচি পালন করে । যার দরুণ তাদের শক্তি আরো বৃদ্ধি পায়।
  • অর্থনৈতিক সংকট - জার্মানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো একেবারে ভেঙে পড়ে। অর্থনীতিতে ধস নামে , মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় যার ফলে দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। ১৯২৯ সালের মহামন্দা চলাকালে মার্কিন পুঁজিপতিরা জার্মানে তথা ইউরোপে অর্থলগ্নি করতে অসম্মতি জানায় ফলে অর্থ সংকট আরো বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে হিটলার এর নাৎসি বাহিনী গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
  • কমিউনিস্ট ভীতি - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গনতন্ত্র ও কমিউনিস্ট দুই মতাদর্শ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলতে থাকে । জার্মান ও এর কবল থেকে রক্ষা পায় নি।ঠিক তেমনি জার্মানিতে কমিউনিস্টদের নির্দেশে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় হরতাল ধর্মঘট পাশাপশি কৃষক শ্রমিক আন্দোলন চলতে থাকে । এতে করে পুরো জার্মানবাসীদের মধ্যে ভয় ভীতির উত্তেজনা বিরাজ করে , অস্থিরতা সৃষ্টি হয় । এমন পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট মতবাদীদের জার্মান থেকে প্রতিহত করার জন্য হিটলারের শক্তিশালী নাৎসি বাহিনী সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এই সুযোগে নাৎসী বাহিনী ও হিটলার উত্থানের এক ধাপ এগিয়ে যায়।
নাৎসী দল / বাহিনী গঠন - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের  পর জার্মানিতে হিটলার এর উত্থান হয় ।   প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে একপর্যায়ে জার্মান এর পুরো ক্ষমতা তার হাতে চলে আসে। এর পর তার নেতৃত্বে ১৯৩৩-৩৪ সালে নাৎসি বাহিনী  তাদের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করে  পুরো জার্মানে । হিটলার ক্ষমতায় আসার পর নাৎসি দলকে আরো সুসংগঠিত ও মজবুত করার পরিকল্পনা নেয়। পুরো নাৎসি দলের সাংগঠনিক কাঠামো কয়েকটি বাহিনীর মাধ্যমে গঠন করে -
  • আধা সামরিক বাহিনী/ঝটিকা বাহিনী ( storm troopers) - এই ঝটিকা বাহিনীর সদস্যরা ছিলো সাধারণত ভুবঘুরে বা বেকার যুবক এদের নিয়েই আধা সামরিক বাহিনী গঠন করে । আধা সামরিক বাহিনী প্রধান কাজই ছিলো বিভিন্ন জায়গায় সংসঠিত হওয়া নাৎসি বাহিনীর সাধারণ সভাসমিতি গুলো পাহারা দেওয়া, মোটকথা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । তাদের আলাদা পোশাক ছিলো বাদামি কালার এর মত। হিটলারের সবচেয়ে অনুগত সেনাপতি এরনেস্ট রোমে ছিলো এই ঝটিকা বাহিনীর প্রধান ।
  • এলিট গার্ড - নাৎসি দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্যতম আরো একটি বাহিনী ছিলো এলিট গার্ড। নাৎসী বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জিং কাজের দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পণ করতো । এছাড়াও যুদ্ধ ক্ষেত্রে কিংবা যেখানেই হোক নিজেদের জীবনের বিনিময়ে হলেও দলের নেতাদের রক্ষা করতে হতো। অর্থাৎ সব ধরনের বিপদ জনক কাজের দায়িত্ব তাদের ওপর ছিলো । এদের পোশাক ছিলো কালো কালারের তাই ব্ল্যাক শার্ট ও বলা হতো।
  • গুপ্ত পুলিশ - হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সবচেয়ে গুরুতবপূর্ণ বাহিনী ছিলো তার নিজস্ব গুপ্ত পুলিশ । যাদের মাধ্যমে দলের সকল গোপনীয় কার্যকলাপ সম্পাদিত হতো। যুদ্ধের আগে কিংবা পরে যেকোনো সময় সকল ধরনের গোপন তথ্য আদানপ্রদান ও সংরক্ষণ করা ছিলো গুপ্ত পুলিশ বাহিনীর প্রধান কাজ। আর এই গুপ্ত পুলিশ বাহিনীর প্রধান নেতৃত্বে ছিলো অ্যাডলফ হিটলার নিজেই।
এছাড়াও আরো বিভিন্ন ধরনের বাহিনী ছিলো গণ আদালত , অসামরিক বন্ধিশালা, যুব বাহিনী, নারী বাহিনী ইত্যাদি দল। নাৎসী দলের শ্রেষ্ঠ ছিলেন হিটলার । যার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হিসেবে পরিগণিত হতো। অর্থাৎ হিটলার কে নাৎসি দলের ফ্যুয়েরার / সর্বসেরা বলা হতো।


৫. ব্যাটল অব বার্লিন| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ 

ব্যাটল অব বার্লিন - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাসমূহের মধ্যে বার্লিন পতন ছিলো সর্বশেষ ঘটনা। এই যুদ্ধ ছিলো উগ্র জাতীয়তাবাদী জার্মান কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের বিপক্ষে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ পর্যায়ে গিয়ে অর্থাৎ ১৯৪৫ সালের শুরুর দিকে জার্মান সৈনরা বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে নিজেদের কে পিছু হটায় । আগ্রাসী জার্মান বিভিন্ন সাম্রাজ্য দখল করলেও পরে সেটা দখলে রাখার সামর্থ্য তাদের ছিলো না। কেননা দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ চলার কারণে তাদের জনবল ও সামরিক শক্তি যথেষ্ট দুর্বল ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। জার্মানদের এই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে রুশ বাহিনী সীমান্ত থেকে পুরো শহরে চলে আসে ।

 নরম্যান্ডিতে ১৯৪৪ সালের ২২ জুন মিত্র বাহিনী আসার আনুমানিক দুই সপ্তাহ পর সোভিয়েত রাশিয়া জার্মানদের বিরোদ্ধে যুদ্ধ শুরু করে । শক্তিশালী সোভিয়েত ইউনিয়ন বার্লিন দখলের জন্য একাই প্রায় পঁচিশ লাখ সৈন্য নিয়ে উপস্থিত হয়। রুশ সেনারা পায় ৬২২৫ টি ট্যাংক ও ৪১ হাজার ৬০০ কামান থেকে গোলা বারুদ নিক্ষেপ করতে থাকে বার্লিনে। জার্মানদের প্রায় দশ লক্ষাধিক সেনা আপ্রাণ লড়াই করেও বার্লিন রক্ষায় ব্যর্থ হয়। শহরে প্রতিটা অলিগলিতে যুদ্ধ চলতে থাকে এতে ব্যাপক সেনা ও বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারায়। 
এভাবেই জার্মানদের বৃহৎ শহর বার্লিন এর পতন ঘটে । যা ইতিহাসে ব্যাটল অব বার্লিন নামে খ্যাত।

৬. বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের অবদান| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের অবদান/ দায়িত্ব - ১৯৩৯ -৪৫ সালে পৃথিবীর ইতিহাসে সংগঠিত যে ভয়াবহ বিশ্বযুদ্ধ হয় সেখানে জার্মানের নাৎসী বাহিনীর নেতা হিটলারের কি কি অবদান ছিলো টা নিম্নে আলোচন করা হলো -
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের কিছু উল্লেখযোগ্য অবদান রয়েছে যা ইতিহাসে স্বীকৃত। 
  • হিটলারের মতবাদ - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকেই পর্যায়ক্রমে জার্মান তথা বিশ্ব ইতিহাসে হিটলারের উত্থান হয় এবং তার নেতৃত্বে নাৎসি বাহিনীর মাধ্যমে জার্মানিকে সংগঠিত করে । জার্মান কে শক্তিশালী ও আগ্রাসী রূপে পরিণত করে । হিটলার জার্মানবাসীদের বুঝিয়েছে যে জার্মান হলো পুরো বিশ্বে বিশুদ্ধ আর্য জাতি । এই আর্যজাতি পুরো পৃথিবীতে সকল জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে , বিশ্বে কর্তৃত্ব প্রদান করতে পারবে এই রকম একটা ধারণা জার্মানবাসীদের কে বুঝিয়েছে হিটলার । হিটলারের জার্মান উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্য বিস্তারের আগ্রাসী মনোভাব যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কে ত্বরান্বিত করে।
  • ভার্সাই চুক্তি অগ্রাহ্য - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধে জয়লাভ করা মিত্রপক্ষ কর্তৃক দেওয়া ভার্সাই চুক্তির শর্ত ছিল জার্মানদের জন্য অন্যায় ও অপমানজনক । অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বিভিন্ন ধরনের শর্ত যুক্ত ছিল এই ভার্সাই সন্ধিতে । এই জবরদস্তিমূলক ভার্সাই চুক্তির শর্ত গুলো হিটলার একের পর এক অমান্য করে যাচ্ছে । এর মধ্যে রয়েছে সার অঞ্চল ( খনিজ এলাকা) সংযুক্তি, ক্ষতিপূরণ দেওয়া বন্ধ , রাইন অঞ্চলে সৈন্য সমাবেশ , জার্মানির হারানো জমি পুনরুদ্ধার এবং বাধ্যতামুলক সামরিক শিল্প ইত্যাদি। হিটলারের এই শর্ত অমান্যতে মিত্র পক্ষ কোনো ধরনের বাধা দেয়নি বরং তোষণ করে গেছে । ফলশ্রুতিতে হিটলারের উগ্রবাদী ক্ষমতা খুব দ্রুত প্রকাশিত হতে থাকে । এইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হতে হিটলার অবদান রাখে ।
  • হিটলারের আগ্রাসী কার্যকলাপ - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির শর্তকে অমান্য করে জার্মান কে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ।এরপর থেকে জার্মান আন্তজার্তিক পর্যায়ে তাদের আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ করে। তার এই আন্তজার্তিক পর্যায়ে আগ্রাসী মনভাবের কারণে পুরো বিশ্ব দেখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে । এসব আন্তজার্তিক আগ্রাসনের মধ্যে রয়েছে স্পেন এর গৃহযুদ্ধে অংশ নেয় ( নিজেদের সামরিক শক্তি যাচাই করে নেয় এই যুদ্ধে যা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মহড়া বলা হয় )অস্ট্রিয়া দখল, চেকোস্লোভাকিয়া দখল , রাশিয়ার সাথে অনাক্রমণ চুক্তি , মেমেল বন্দর আক্রমণ এবং পোল্যান্ড আক্রমণ । এভাবেই হিটলার সুপরিকল্পিত ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দিকে ধাবিত হতে থাকে । এই জন্যই ইতিহাসে বলা আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলো হিটলারের যুদ্ধ ।
হিটলারের শেষ জীবন -
হিটলার তার জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে বার্লিনেই ছিলেন । প্রুশিয়ার রাসটেনবুর্গ এর আক্রমণ থেকে কোনো ক্রমে বেচেঁ গিয়েছিলেন হিটলার । বার্লিনের ভূগর্ভস্থ এক বাংকারে অবস্থান করেন হিটলার। মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত কয়েক মাস সেখানেই ছিলেন বের হওয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না । অবশেষে রুশ সেনারা বাংকারে চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে বোমা নিক্ষেপ করে এবং জার্মান সেনারা ও তখন পালিয়ে যায় সেখান থেকে। কোনো উপায় না পেয়ে শেষপর্যন্ত হিটলার ও তার স্ত্রী ইভা সহ আত্মহত্যা করে । এভাবেই ইতিহাসে কুখ্যাত হিটলার এর পতন হয়।

৭. আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন - উত্তর 

প্রশ্ন ১: কোন ঘটনার মধ্য দিয়ে জার্মান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়ায়?
উত্তর: ১৯৩৯ সালে ১ সেপ্টেম্বর , পোল্যান্ড আক্রমণের মধ্য দিয়ে । 
প্রশ্ন ২:  যুদ্ধে হেরে হিটলার কিভাবে মারা যায় ?
উত্তর: আত্মহত্যা করে । 
প্রশ্ন ৩: পিছু না হটার নীতিমালা কে প্রণয়ন করেন ?
উত্তর: অ্যাডলফ হিটলার।
প্রশ্ন ৪:  সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণে জার্মান হেরে যায় কেনো ?
উত্তর:  শরতের শেষ সোভিয়েত রাশিয়ায় শীত চলে আসায় জার্মান হেরে যায়।
প্রশ্ন ৫: জার্মানে আগ্রাসী নাৎসী বাহিনীর নেতা ছিলো কে?
উত্তর: অ্যাডলফ হিটলার।
প্রশ্ন ৬: আমেরিকা সরাসরি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে যোগদানের কারণ কি?
উত্তর: জাপান কর্তৃক আমেরিকার নৌ ঘাঁটি পার্ল হারবার আক্রমণ।
প্রশ্ন ৭: প্রথম বিশ্বযুদ্ধে কোন পক্ষ জয়লাভ করে ?
উত্তর: মিত্রশক্তি ( ইংল্যান্ড , ফ্রান্স ও সোভিয়েত ইউনিয়ন)
প্রশ্ন ৮: জার্মান দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশগ্রহণের প্রধান পরোক্ষ কারণ কি?
উত্তর: ভার্সাই চুক্তির ত্রুটি ।
প্রশ্ন ৯: জার্মান কাদের সাথে যুদ্ধে পিছু হটতে বাধ্য হয়?
উত্তর: সোভিয়েত ইউনিয়ন ( রাশিয়া)
প্রশ্ন ১০: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা কোন পক্ষের হয়ে যুদ্ধে যোগ দেয়?
উত্তর: মিত্র শক্তির পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করে।

৮. লেখকের মন্তব্য 

প্রিয় পাঠক, আজকে আমরা আপনাদের সাথে  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে বা যেকোনো বিষয়ে আপনাদের কোনো অভিযোগ বা মতামত নিচের কমেন্ট বক্সে লিখে জানাবেন। ঢাকা বিশববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠন The DU Speech এর সাথেই থাকবেন।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ এ সম্পর্কে হোক বা যেকোনো বিষয়ে আমরা আপনাদের মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করবো।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url