দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
বিশ্বযুদ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে এক ভয়ংকর বিভীষিকাময় অধ্যায়। আমরা হয়তো অনেকেই জানি বিশ্বযুদ্ধের পিছনে জার্মানির অবদান কতটুুকু আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে তো বলাই হয় জার্মান তথা হিটলারের যুদ্ধ। যুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ের জার্মানের এত জয়জয়কার থাকার পরেও কেনো বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ! তাই আমরা অনেকেই বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে জানতে আগ্রহী ।বর্তমান প্রযুক্তির যুগে ঘরে বসেই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ এ সম্পর্কে খুব সহজেই সকল তথ্য জানা সম্ভব। ঢাকা বিশববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠনের আজকের আর্টিকেল আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমাদের আর্টিকেলটি স্কিপ না করে সম্পূর্ণ পড়ুন।
আর্টিকেল সূচিপত্র ( যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন)
- বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
- পরাজয়ের কারণসমূহ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
- হিটলার ও নাৎসীবাদের উত্থান । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
- ব্যাটল অব বার্লিন । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
- বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের অবদান। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
- আর্টিকেল সম্পর্কিত প্রশ্ন- উত্তর
- লেখকের মন্তব্য
১. বিশ্বযুদ্ধ সম্পর্কে ধারণা|দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
- প্রথম বিশ্বযুদ্ধ (১৯১৪-১৮) সময়কাল পর্যন্ত দীর্ঘস্থায়ী হয় । এ যুদ্ধে জার্মানিকে যুদ্ধপরাধ দেশ হিসেবে ঘোষণা করে মিত্রশক্তি । এরপরই ভার্সাই চুক্তির অমানবিক শর্ত জার্মানদের ওপর চাপিয়ে দেয় ফলে জার্মানদের ক্রোধের বহিঃপ্রকাশ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ।
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কাল (১৯৩৯-৪৫) দীর্ঘ ছয় বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয় । তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের তুলনায় অনেক বেশি উন্নত পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করে যার ফলে হতাহত ও প্রাণহানির সংখ্যা অনেক গুণ বেশি হয় । প্রায় ৬১ টি দেশ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে এবং টা চলতে থাকে দীর্ঘ ছয় বছর ।
২. দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমি| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
- অক্ষশক্তি - তে জার্মান,ইতালি,জাপান,তুরস্ক , হাঙ্গেরী, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া দেশসমূহ যুক্ত ছিল। অক্ষশক্তির নেতৃবৃন্দের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো- জার্মানির চ্যান্সেলর ও রাষ্ট্রপ্রতি অ্যাডলফ হিটলার , জাপানের প্রধামন্ত্রী হিদেকি তোজো ও সম্রাট হিরোহিতো , ইতালির প্রধানমন্ত্রী বেনিতো মুসোলিনি।
- মিত্রশক্তি তে ব্রিটেন, ফ্রান্স,ব্রাজিল,কানাডা,চীন , ডেনমার্ক , গ্রিস ও নেদারল্যান্ড ইত্যাদি দেশ যুক্ত ছিল।মিত্র শক্তিতে পরবর্তীতে মহাশক্তিধর রাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র যোগ দেয়।মিত্রশক্তির নেতৃত্বে ছিল - ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল , ফ্রান্সের পল রেনো, রুশ প্রেসিডেন্ট জোসেফ স্ট্যালিন,মার্কিন রাষ্ট্রপ্রতি রুজভেল্ট ও ট্রুম্যান এবং অন্যান্যরা।
৩. পরাজয়ের কারণ সমূহ| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
- জার্মানির রাশিয়া অভিযানে ব্যর্থতা - একের পর সাম্রাজ্য দখলে চরম পর্যায়ে চলে যায় উগ্রবাদী হিটলার । একপর্যায়ে এই উগ্রবাদী হিটলার রাশিয়ায় আক্রমণ করে দ্রুত তা নিজের দখলে নিয়ে আসতে চেয়েছিল । এর পরিপ্রেক্ষিতে জার্মান কর্তৃক হিটলারের নির্দেশে সোভিয়েত রাশিয়া আক্রমণ ছিলো তাদের জন্য চরম ভুল সিদ্বান্ত । সোভিয়েত রাশিয়া বিভিন্ন জায়গায় তাদের রুশ সেনাবাহিনী প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং তারা রণাঙ্গনে গেরিলা যুদ্ধকৌশল প্রয়োগ করে যা জার্মানদের জন্য টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে। এছাড়াও রাশিয়া পোড়ামাটির নীতি ( অর্থাৎ তারা বিভিন্ন ধরনের খাদ্যশস্য পুড়িয়ে দিয়ে তাদের পিছু হটাতে থাকে ) অনুসরণ করে যার ফলে জার্মান তাদের সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ও হেরে যায়।
- স্তালিন গ্রাদের যুদ্ধে ব্যর্থতা - স্তালিন গ্রাদের যুদ্ধ ছিল জার্মান দের জন্য পরাজয়ের আরো একটি টার্নিং পয়েন্ট। এটি ছিলো ইতিহাসে অনেক ব্যয়বহুল একটু যুদ্ধ। ককেশাসের তেল ক্ষেত্রের জন্যই মূলত জার্মান এই যুদ্ধে জড়ায় । কিন্তু হিটলারের নির্দেশে জার্মানদের সিক্সথ আর্মি পুরো শহর না ঘিরে তারা শহরের ভিতরে ঢুকে গিয়ে অলিগলিতে ও শহরের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে পড়ে । সিক্সথ আর্মি শহরে ভিতরে ঢুকলেই এমন পরিস্থিতিতে রুশ বাহিনী তাদের চার দিক থেকে ঘিরে ফেলে। এই সময় হিটলার তাদের কে পিছু না হটার নির্দেশ দেয়। যার পরিণতি পরাজয় অনিবার্য হয়ে পড়ে ।
- গ্রিস আক্রমণ - গ্রিস আক্রমণ ছিলো জার্মানির আরো একটি ভুল সিদ্ধান্ত । রাশিয়া আক্রমণের আগেই গ্রিস আক্রমণ করে বসে এবং সেখান প্রায় ছয় সপ্তাহের মতো সময় লাগে যা রাশিয়ার ক্ষেত্রে অনেক দেরি হয়ে যায় । এই দেরির কারনে শরতের শেষে রাশিয়ায় শীত নেমে যায় । ফলশ্রুতিতে অপারেশন বারবোসা রাশিয়া আক্রমণে কোনো কাজে আসেনি বরং অতিরিক্ত শীতের ফলে বিপাকে পড়ে যায় জার্মান বাহিনী।
- পিছু না হটার নীতি - হিটলারের নির্দেশে ১৯৪১-৪২ সালে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন কে আক্রমণ করে , ওই সময় তাদের সাথে যুদ্ধে ব্যর্থ হলে পিছু হটেছিল । কিন্তু এরপর এই হিটলার ঘোষণা দেয় যুদ্ধে পিছু না হটার নীতির । এমন ভুল সিদ্ধান্তের কারণে স্তালিনগ্রাদের যুদ্ধে আবারও পরাজিত হয় ।
- কূটনৈতিক ব্যর্থতা - মিত্রশক্তির তুলনায় জার্মানি কূটনৈতিক ভাবে দুর্বল ছিলো। দেখা যায় , মিত্র শক্তি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অক্ষ পক্ষের দেশ ইতালিকে নিজেদের দলে নিয়ে আসে কূটনীতি প্রয়োগ করে । এরূপ পরিস্থিতিতে প্রথম বিশ্ব যুদ্ধে জার্মানি একা হয়ে যায় । তাই প্রথম বিশ্বযুদ্ধে মিত্র পক্ষের কূটনীতির কাছে জার্মান হেরে যায়।
- আমেরিকার সরাসরি যোগদান - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকা নিরপেক্ষতার নীতি মেনে প্রাথমিক দিকে যুদ্ধে অংশ নেয়নি। কিন্তু পরোক্ষভাবে ঠিকই জড়িত ছিলো। কেননা আমেরিকা লেন্ড লিজ আইন এর নীতি অনুযায়ী মিত্রশক্তি তথা ইংল্যান্ড কে প্রচুর পরিমাণে অর্থ, যুদ্ধজাহাজ , যুদ্ধবিমানসহ আরো বিভিন্ন ধরনের আধুনিক সামরিক অস্ত্র সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করে আসছিল। কিন্তু দেখা যায় ১৯৪১ সালে ৭ ডিসেম্বর জাপান কর্তৃক আমেরিকার নৌ ঘাঁটি পার্ল হারবারে আকস্মিক আক্রমণ করে বসে । এরপরই আমেরিকা নিরপেক্ষতার নীতি ভেঙ্গে দিয়ে যুদ্ধে সরাসরি মিত্র শক্তির পক্ষে যোগদান করে । যার ফল মিত্র বাহিনীর সামরিক শক্তির কাছে জার্মানির সামরিক শক্তি তুচ্ছ হয়ে পড়ে। জার্মানি অবশেষে যুদ্ধ পরাজয় বরণ করে।
- সামরিক শক্তি - যুদ্ধ ক্ষেত্রে জয় পরাজয়ের পিছনে যেকোনো দেশের সামরিক শক্তি অনেক বেশী ভূমিকা পালন করে । তেমনি প্রথম ও দ্বিতীয় দুই বিশ্বযুদ্ধেই জার্মানির একার পক্ষে শক্তিশালী মিত্র পক্ষ কে সামাল দেওয়া সহজ ছিল না । যদিও জার্মানির সামরিক শক্তি এককভাবে অনেক বেশি ছিল । কিন্তু জোটবদ্ধ মিত্র শক্তির মোট সামরিক শক্তির তুলনায় জার্মানির সামরিক শক্তি যথেষ্ট ছিলো না যার ফলে পরাজয়ের দিকে এক ধাপ এগিয়ে দেয়।
- ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য - মিত্র পক্ষের ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড জার্মানের তুলনায় ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্যে বেশি অগ্রসর ছিলো। মিত্রপক্ষের বিস্তৃত ঔপনিবেশিক সাম্রাজ্য থাকায় যুদ্ধ ক্ষেত্রে তারা প্রয়োজনীয় অর্থ ও জনবল পেয়েছিল । অন্যদিকে অক্ষশক্তি জার্মানের দ্বারা যা সম্ভব ছিল না ।
- রণকৌশল - আগ্রাসী জার্মান আক্রমণাত্মক যুদ্ধকৌশলে বেশি পারদর্শী ছিল। যা তাদের জয়লাভের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। কারণ তারা আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধে মোটেই দক্ষ ছিলো না । যুদ্ধ ক্ষেত্রে প্রয়োজনে পিছু হটার/ পিছিয়ে যাওয়ার মতো অন্যান্য দেশের মতো বিশেষ করে রাশিয়ার মত তাদের কোনো ভূখণ্ড ছিল না । এমন পরিস্থিতিতে জার্মানদের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে যায় ।
- অক্ষশক্তির মধ্যে লক্ষের ভিন্নতা - দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ গ্রহণের পিছনে তিন অক্ষশক্তি জার্মান, ইতালি ও জাপান প্রত্যেকেরই নিজস্ব স্বার্থ ছিলো । জার্মানে হিটলার চেয়েছিল বিশ্ব থেকে গনতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মতবাদকে রুখে দিয়ে স্বৈরতন্ত্র/ একনায়কতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে । অন্যদিকে ইতালির উদ্দেশ্য ছিলো ফ্যাসিবাদের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক মতবাদকে নিয়ন্ত্রণ করতে । আর আগ্রাসী জাপান চেয়েছিল সাম্রাজ্য বিস্তার করতে । অন্যদিকে মিত্রশক্তির একটাই লক্ষ্য ছিল বিশ্বে শান্তি ও গণতন্ত্রের প্রতিষ্ঠা করা । কিন্তু অক্ষশক্তির এই ভিন্ন ভিন্ন মতবাদের কারনেই তাদের পরাজয় ঘটে।
- হিটলারের নখদর্পনহীন মিত্র
- প্রযুক্তির ভুল ব্যবহার
- আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
- কমান্ডার ইন চিফের দায়িত্ব
- দুই ফ্রন্টের যুদ্ধ
- জেনারেলদের কথা অগ্রাহ্য করা
৪. হিটলার ও নাৎসীবাদের উত্থান| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
- ভাইমার প্রজাতন্ত্রের ব্যর্থতা - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে ভাইমার প্রজাতন্ত্র গঠন করা হয় রাজতন্ত্রের পরিবর্তে। প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকেই এই প্রজাতন্ত্র নানান সমস্যার কবলে পড়ে। অপমানজনক ভার্সাই চুক্তির সকল শর্ত মেলে নিলে ও ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি হলে জার্মানবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠে ভাইমার প্রজাতন্ত্রের উপর। আর এই সুযোগে জার্মানে হিটলার এর নাৎসী বাহিনীর উত্থানের পথ আরও সুগম হয়।
- ইহুদি বিদ্বেষ - জার্মানিতে ইহুদিদের বসবাস কোনো মতেই তারা সহ্য করতে পারতো না । কারণ তারা টিউটন জাতিভুক্ত ছিলো। জার্মানিদের নানাবিধ সংকটের জন্য অধিকাংশই ইহুদীদের দায়ী করে। এমন পরিস্থিতিতে জার্মানদের সুযোগ নিয়ে হিটলারের নাৎসি বাহিনী ইহুদীদের বিতাড়িত করতে কর্মসূচি পালন করে । যার দরুণ তাদের শক্তি আরো বৃদ্ধি পায়।
- অর্থনৈতিক সংকট - জার্মানি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের পর তাদের অর্থনৈতিক কাঠামো একেবারে ভেঙে পড়ে। অর্থনীতিতে ধস নামে , মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বৃদ্ধি পায় যার ফলে দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি হয়। ১৯২৯ সালের মহামন্দা চলাকালে মার্কিন পুঁজিপতিরা জার্মানে তথা ইউরোপে অর্থলগ্নি করতে অসম্মতি জানায় ফলে অর্থ সংকট আরো বেড়ে যায়। এমন পরিস্থিতিতে হিটলার এর নাৎসি বাহিনী গুরুত্ব পূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং তাদের শক্তি বৃদ্ধি পায়।
- কমিউনিস্ট ভীতি - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গনতন্ত্র ও কমিউনিস্ট দুই মতাদর্শ পুরো বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়ার প্রতিযোগিতা চলতে থাকে । জার্মান ও এর কবল থেকে রক্ষা পায় নি।ঠিক তেমনি জার্মানিতে কমিউনিস্টদের নির্দেশে বিভিন্ন শিল্প কারখানায় হরতাল ধর্মঘট পাশাপশি কৃষক শ্রমিক আন্দোলন চলতে থাকে । এতে করে পুরো জার্মানবাসীদের মধ্যে ভয় ভীতির উত্তেজনা বিরাজ করে , অস্থিরতা সৃষ্টি হয় । এমন পরিস্থিতিতে কমিউনিস্ট মতবাদীদের জার্মান থেকে প্রতিহত করার জন্য হিটলারের শক্তিশালী নাৎসি বাহিনী সাহায্যের প্রয়োজন হয়। এই সুযোগে নাৎসী বাহিনী ও হিটলার উত্থানের এক ধাপ এগিয়ে যায়।
- আধা সামরিক বাহিনী/ঝটিকা বাহিনী ( storm troopers) - এই ঝটিকা বাহিনীর সদস্যরা ছিলো সাধারণত ভুবঘুরে বা বেকার যুবক এদের নিয়েই আধা সামরিক বাহিনী গঠন করে । আধা সামরিক বাহিনী প্রধান কাজই ছিলো বিভিন্ন জায়গায় সংসঠিত হওয়া নাৎসি বাহিনীর সাধারণ সভাসমিতি গুলো পাহারা দেওয়া, মোটকথা তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা । তাদের আলাদা পোশাক ছিলো বাদামি কালার এর মত। হিটলারের সবচেয়ে অনুগত সেনাপতি এরনেস্ট রোমে ছিলো এই ঝটিকা বাহিনীর প্রধান ।
- এলিট গার্ড - নাৎসি দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে অন্যতম আরো একটি বাহিনী ছিলো এলিট গার্ড। নাৎসী বাহিনীর বিভিন্ন ধরনের চ্যালেঞ্জিং কাজের দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পণ করতো । এছাড়াও যুদ্ধ ক্ষেত্রে কিংবা যেখানেই হোক নিজেদের জীবনের বিনিময়ে হলেও দলের নেতাদের রক্ষা করতে হতো। অর্থাৎ সব ধরনের বিপদ জনক কাজের দায়িত্ব তাদের ওপর ছিলো । এদের পোশাক ছিলো কালো কালারের তাই ব্ল্যাক শার্ট ও বলা হতো।
- গুপ্ত পুলিশ - হিটলারের নাৎসি বাহিনীর সবচেয়ে গুরুতবপূর্ণ বাহিনী ছিলো তার নিজস্ব গুপ্ত পুলিশ । যাদের মাধ্যমে দলের সকল গোপনীয় কার্যকলাপ সম্পাদিত হতো। যুদ্ধের আগে কিংবা পরে যেকোনো সময় সকল ধরনের গোপন তথ্য আদানপ্রদান ও সংরক্ষণ করা ছিলো গুপ্ত পুলিশ বাহিনীর প্রধান কাজ। আর এই গুপ্ত পুলিশ বাহিনীর প্রধান নেতৃত্বে ছিলো অ্যাডলফ হিটলার নিজেই।
৫. ব্যাটল অব বার্লিন| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
৬. বিশ্বযুদ্ধে হিটলারের অবদান| দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানির পরাজয়ের কারণ
- হিটলারের মতবাদ - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময় থেকেই পর্যায়ক্রমে জার্মান তথা বিশ্ব ইতিহাসে হিটলারের উত্থান হয় এবং তার নেতৃত্বে নাৎসি বাহিনীর মাধ্যমে জার্মানিকে সংগঠিত করে । জার্মান কে শক্তিশালী ও আগ্রাসী রূপে পরিণত করে । হিটলার জার্মানবাসীদের বুঝিয়েছে যে জার্মান হলো পুরো বিশ্বে বিশুদ্ধ আর্য জাতি । এই আর্যজাতি পুরো পৃথিবীতে সকল জাতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে , বিশ্বে কর্তৃত্ব প্রদান করতে পারবে এই রকম একটা ধারণা জার্মানবাসীদের কে বুঝিয়েছে হিটলার । হিটলারের জার্মান উগ্র জাতীয়তাবাদ ও সাম্রাজ্য বিস্তারের আগ্রাসী মনোভাব যা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ কে ত্বরান্বিত করে।
- ভার্সাই চুক্তি অগ্রাহ্য - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর যুদ্ধে জয়লাভ করা মিত্রপক্ষ কর্তৃক দেওয়া ভার্সাই চুক্তির শর্ত ছিল জার্মানদের জন্য অন্যায় ও অপমানজনক । অর্থনৈতিক,রাজনৈতিক ও ভৌগোলিক বিভিন্ন ধরনের শর্ত যুক্ত ছিল এই ভার্সাই সন্ধিতে । এই জবরদস্তিমূলক ভার্সাই চুক্তির শর্ত গুলো হিটলার একের পর এক অমান্য করে যাচ্ছে । এর মধ্যে রয়েছে সার অঞ্চল ( খনিজ এলাকা) সংযুক্তি, ক্ষতিপূরণ দেওয়া বন্ধ , রাইন অঞ্চলে সৈন্য সমাবেশ , জার্মানির হারানো জমি পুনরুদ্ধার এবং বাধ্যতামুলক সামরিক শিল্প ইত্যাদি। হিটলারের এই শর্ত অমান্যতে মিত্র পক্ষ কোনো ধরনের বাধা দেয়নি বরং তোষণ করে গেছে । ফলশ্রুতিতে হিটলারের উগ্রবাদী ক্ষমতা খুব দ্রুত প্রকাশিত হতে থাকে । এইভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ সংগঠিত হতে হিটলার অবদান রাখে ।
- হিটলারের আগ্রাসী কার্যকলাপ - প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভার্সাই চুক্তির শর্তকে অমান্য করে জার্মান কে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন ।এরপর থেকে জার্মান আন্তজার্তিক পর্যায়ে তাদের আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ করে। তার এই আন্তজার্তিক পর্যায়ে আগ্রাসী মনভাবের কারণে পুরো বিশ্ব দেখা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে । এসব আন্তজার্তিক আগ্রাসনের মধ্যে রয়েছে স্পেন এর গৃহযুদ্ধে অংশ নেয় ( নিজেদের সামরিক শক্তি যাচাই করে নেয় এই যুদ্ধে যা দ্বিতীয় বিশ্ব যুদ্ধের মহড়া বলা হয় )অস্ট্রিয়া দখল, চেকোস্লোভাকিয়া দখল , রাশিয়ার সাথে অনাক্রমণ চুক্তি , মেমেল বন্দর আক্রমণ এবং পোল্যান্ড আক্রমণ । এভাবেই হিটলার সুপরিকল্পিত ভাবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দিকে ধাবিত হতে থাকে । এই জন্যই ইতিহাসে বলা আছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ হলো হিটলারের যুদ্ধ ।
The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়
comment url