OrdinaryITPostAd

নাটোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত? নাটোরের সম্পুর্ন ইতিহাস!

নাটোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত ? নাটোরের ইতিহাস কী? নাটোরের বিখ্যাত স্থান কী কী? যে সকল শিক্ষার্থীদের হোম ডিস্ট্রিক নাটোরে, তাদের জন্য বিভিন্ন একাডেমিক বা জব এর ভাইবা বোর্ডে এগুলো খুব কমন প্রশ্ন। নাটোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত, নাটোরের ইতিহাস এবং নাটোর সম্পর্কিত সম্পূর্ণ তথ্য জানতে হলে আজকের এই আর্টিকেলটি সম্পুর্ন পড়ুন। 


নাটোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত এটা ছাড়াও আর্টিকেলটি মাধ্যমে আপনি জানতে পারবেন নাটোরের বিখ্যাত স্থান কী কী , নাটোরের বিখ্যাত খাবার এর নাম ও নাটোরের তাৎপর্যপূর্ণ অতীত ও বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে। তাহলে আসুন আর্টিকেলটির মাধ্যমে আমরা জেনে নিই, 'নাটোর কিসের জন্য বিখ্যাত এবং নাটকের ইতিহাস কী?' সহ নাটোর সম্পর্কিত সম্পূর্ণ তথ্যাবলী।

সূচিপত্র

  • নাটোর জেলার পরিচিতি 
  • নাটোর জেলার অবস্থান 
  • নাটোর নামকরণের ইতিহাস
  • নাটোর জেলার ইতিহাস কী ?
  • নাটোরের বিখ্যাত স্থান কী কী?
  • নাটোর কিসের জন্য বিখ্যাত?
  • নাটোর জেলার বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কী কী?
  • নাটোরের বিখ্যাত ব্যক্তি বর্গ
  • নাটোরে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য নদনদী 
  • নাটোর জেলার জনসংখ্যা, শিক্ষা ও চিকিৎসা 
  • নাটোর জেলার অর্থনীতি
  • নাটোরের আবহাওয়া

নাটোর জেলার পরিচিতি

জীবনানন্দ দাশের বনলতা খ্যাত ও বাংলাদেশের সুপরিচিত অনন্য স্থান নাটোর। নাটোরের যেমন রয়েছে তাৎপর্যপূর্ণ ইতিহাস, তেমনি রয়েছে পল্লী প্রকৃতির সৌন্দর্য।

আয়তনের দিক থেকে বাংলাদেশের 36 তম জেলার নাম নাটোর।1905.05 বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট রাজশাহী বিভাগের অন্তর্গত জেলা যা বাংলাদেশের মোট আয়তনের প্রায় 1.28 শতাংশ। 735.54 বর্গমাইলের জেলা নাটোরের রয়েছে অনন্য ইতিহাস। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি ও বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও তাৎপর্যপূর্ণ স্থানের কেন্দ্রবিন্দু নাটোর।

নাটোর জেলার মোট সাতটি উপজেলা রয়েছে। এগুলো হচ্ছে

  • নাটোর সদর উপজেলা 
  • বাগাতিপাড়া উপজেলা 
  • বড়াইগ্রাম উপজেলা 
  • গুরুদাসপুর উপজেলা 
  • লালপুর উপজেলা 
  • সিংড়া উপজেলা 
  • নলডাঙ্গা উপজেলা

মোট সাতটি উপজেলা, আটটি পৌরসভা, 52 টি ইউনিয়ন, 1434 গ্রাম নিয়ে গঠিত অনন্য জেলার নাম নাটোর।

বিভিন্ন বহমান নদী নদী, নাটোরের কাঁচাগোল্লা, জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন, উত্তরা গণভবন, চলনবিল ইত্যাদির জন্য সুপরিচিত এই নাটোর।

নাটোর জেলার অবস্থান

নাটোর জেলা রাজশাহী বিভাগে অবস্থিত বাংলাদেশের 36 তম বৃহত্তর জেলা। নাটোর জেলার পূর্বে রয়েছে পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলা, পশ্চিমে রয়েছে রাজশাহি জেলা, উত্তরে রয়েছে নওগাঁ ও বগুড়া জেলা এবং দক্ষিণে হয়েছে পাবনা ও বগুড়া জেলার অংশবিশেষ।88.01' থেকে 88.30'  পূর্ব দ্রাঘিমাংশ এবং 24.25'' থেকে 24.58' উত্তর অক্ষাংশে  অবস্থিত। 

অংশবিশেষ পদ্মা, নারদ, গড়াল ও নন্দকুজা নদীগুলোর পাশে অবস্থিত জেলা নাটোর।

'নাটোর' নামকরণের ইতিহাস

জনশ্রুতিতে নাটোরের নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অভিমত রয়েছে। এক অভিমান থেকে জানা যায়, নাটোর সদরের পাশেই বহমান নারদ নদীর নাম থেকে নাটোরের নামকরণ করা হয়েছে।

আমার অন্য তথ্যানুসারে, এক সময় নাটোর জেলা সদরের অবস্থান অনেক নীচু ছিল। এজন্য এখানে দিয়ে মানুষের চলাচলের যাতায়াত ব্যবস্থা অনেক কষ্টকর ছিল। যার কারণে এই স্থানটির অঞ্চলটিকে নাতর বলা হত। (না-অসম্ভব এবং তর-গমন) এবং কালের পালাক্রমে নাতর শব্দটি নাটোরে রূপান্তরিত হয়েছে।

আবার অন্য তথ্যানুসারে, নাটোরের কোন এক স্থানে একটি ব্যাঙ একটি সাপ কে গ্রাস করেছিল এবং এই ঘটনা দেখে কয়েকজন বালিকা নৃত্য করেছিল। যার জন্য স্থানটির নাম নাট্যপুর রাখা হয় এবং পালাক্রমে তা নাট্যপুর- নাট্টর থেকে নাটোর শব্দটি এসেছে। 

নাটোর জেলার ইতিহাস কী? 

বর্তমান নাটোর জেলা জুড়ে রয়েছে, তা প্রাচীনকালে পুন্ড্র রাজ্যের অন্তর্গত পুন্ড্রবর্ধন নামে পরিচিত ছিল। তারপর সেটা মুঘল আমলে জমিদারি পড়ছে রূপান্তরিত হয়। রঘুনন্দন পুঠিয়া নামক এক ব্যক্তি নাটোরে সর্বপ্রথম জমিদারি প্রতিষ্ঠা করেন। রঘুনন্দন পুঠিয়া নবাব মুর্শিদকুলি খাঁর দরবারে উকিল হিসেবে কাজ করতেন। রঘুনন্দনপুর ও তার ছোট ভাই রামজীবন উভয় নাটোরের জমিদারির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে পরিগণিত হয়। 1770 সালে রাজা রামজীবন নাটোরে রাজ্যের রাজধানী স্থাপন করেন। তিনি সেখানে রাজপ্রাসাদ, মন্দির, দিঘি, উদ্যান ইত্যাদি নির্মাণ করেন। যা নাটোরের রাজবাড়ি নামে পরিচিত। 

উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সুবেদার মুর্শিদকুলি খাঁ এর সুপারিশে রাজা রামজীবন বাইশটি খেলাত ও রাজা বাহাদুর উপাধি লাভ করেন মুঘল সম্রাটের কাছ থেকে। তখন তিনি নাটোরে জমিদারি প্রশাসনে ভালো সুখ্যাতি অর্জন করে ফেলেন। 1730 সাল পর্যন্ত রামজীবন জমিদারি পরিচালনা করেন। রামজীবন এর মৃত্যুর পর তাঁর দত্তকপুত্র রামকান্ত জমিদারের শুরু করেন। জমিদার অবস্থায় 1748 সালে রামকান্ত মৃত্যুবরণ করেন এবং তারপর নাটোরের জমিদারি চলে যায় তার পত্নী রানী ভবানীর হাতে। রানী ভবানীর শাসনামলে নাটোর রাজ্য উন্নয়নের চরম শিখরে পৌঁছে। সেসময় রানী ভবানী জমিদারের মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি টাকার অধিক আয় করতেন। 

1882 সালে ক্যাপ্টেন প্যানেলের মানচিত্র অনুযায়ী রানী ভবানী 12999 বর্গমাইল জুড়ে জমিদারি পরিচালনা করতেন বলে জানা যায়। সেসময় তিনি বর্তমান রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর, বগুড়া, কুষ্টিয়া, রংপুর, মুর্শিদাবাদ, মালদহ ইত্যাদি স্থানে জমিদারি পরিচালনা করতেন। এসব অঞ্চলের পাশাপাশি ময়মনসিংহ জেলার পুকুরিয়া পরগনা ও ঢাকা জেলার রানীবাড়ী অঞ্চলেও জমিদারি পরিচালনা করতেন রানী ভবানী। এজন্য রানী ভবানী কে মহারানী উপাধি দেওয়া হয় এবং তিনি অর্ধবঙ্গেশ্বরী নামে সুপরিচিত।

বাংলার স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে রানী ভবানীর অনেক ভালো সম্পর্ক ছিল। পলাশীর যুদ্ধের সময় রানী ভবানী নবাব সিরাজউদ্দৌলার পক্ষে সমর্থন করেছিলেন।

রানী ভবানী দিঘাপাতিয়া পরগনা নাম দয়ারাম কে উপহার দিয়েছিলেন খুশি হয়। যেখানে পরবর্তীতে উত্তরা গণভবন প্রতিষ্ঠিত হয়। দিঘাপাতিয়া অবস্থিত উত্তরা গণভবন টি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নায়েবে দয়ারাম এর পরবর্তী বংশধর রাজা প্রমদানাথের সময়। উত্তরা গণভবন নির্মাণে স্থাপত্যকলা অনুসরণ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই রাজপ্রাসাদ গবর্ণর হাউস এবং তারপরে উত্তরা গণভবন পরিণত হয়।

নাটোরের সর্ববৃহৎ সামন্ত রাজ গড়ে উঠেছিল মূলত রানী ভবানী কে কেন্দ্র করেই। নবাবী আমলে নাটোরে যেসকল রাজারা জমিদারি পরিচালনা করতেন, তাদের বিশেষ দেওয়ানী ও ফৌজদারী বিচার ক্ষমতা ছিল। তখন তারা বিচারকার্য পরিচালনা করার জন্য নিজস্ব কারাগার প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

1802 সালের রানী ভবানীর মৃত্যুর মাধ্যমে নাটোরে এক মহীয়সী নারীর রাজ্যশাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে। রানী ভবানীর মৃত্যুর পর শাসন ব্যবস্থা শুরু হয় রানী ভবানীর দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণ এর মাধ্যমে।

1873 সালে রানী ভবানীর দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণ এর নিকট থেকে শাসন ক্ষমতা চলে যায় ইংরেজদের হাতে। 1947 সালের দেশ বিভাগ তো হওয়ার সময় এই নাটোর পূর্ব পাকিস্তানের অংশ হিসেবে শাসিত হতে থাকে এবং দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তা বৃহত্তর রাজশাহী জেলার অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরবর্তীতে 1984 সালে বৃহত্তর রাজশাহী জেলা ভেঙে নাটোর জেলা মর্যাদাপদ লাভ করে। যা বর্তমানে এই নাটোর জেলা নামে পরিচিত।

নাটোরের বিখ্যাত স্থান কী কী?

নাটোরের দর্শনীয় স্থান গুলোর মধ্যে  অন্যতম হচ্ছে 

  • নাটোর রাজবাড়ী 
  • উত্তরা গণভবন
  • চলনবিল 
  • চলনবিল জাদুঘর 
  • হালতির বিল
  • শহীদ সাগর 
  • গ্রীন ভ্যালি পার্ক
  • নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল,নাটোর ইত্যাদি। 

1. নাটোর রাজবাড়ী 

নাটোর সদর উপজেলায় অবস্থিত বৃহৎ ঐতিহ্যময় স্থান এবং রাজবংশের স্মৃতিচিহ্ন রাজবাড়ী।


1706-1710 সালে রাজা রামজীবন এই নাটোর রাজবাড়ি নির্মাণ করেন। রাজবাড়ির মোট আয়তন 120 একর এবং অভ্যন্তরীণ এলাকা 50.52 একর। রাজবাড়ীর পুরো জায়গা দুটি অংশে বিভক্ত রয়েছে যার মধ্যে একটি হচ্ছে বড় তরফ ও অপরটি হচ্ছে ছোট তরফ।

পুরো রাজবাড়ী দুটি স্তরের শক্তি দিয়ে বেষ্টিত। এছাড়াও রয়েছে-

  • ছোট-বড় মিলিয়ে মোট আটটি ভবন
  • সাতটি পুকুর (দুটি গভীর পুকুর এবং পাঁচটি ছোট পুকুর)
  • শ্যামসুন্দর মন্দির 
  • আনন্দময়ী কালী মন্দির 
  • তারকেশ্বর শিব মন্দির ইত্যাদি।

অষ্টাদশ শতকে রাজা রামজীবন এর মাধ্যমে নাটোরে প্রথম রাজ বংশের উৎপত্তি হয়। অনেকের মতে রাজা রামজীবন 1706 সালে রাজা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে বলে জানা যায়, আমার অনেকের মতে 1710 সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বলে জানা যায়। আরে সালের মধ্যেই নাটোরের রাজবাড়ি প্রতিষ্টিত হয় বলে ধারণা করা হয়। রাজবাড়ী প্রতিষ্ঠার সময় রাজবাড়ী কে দৃষ্টিনন্দন করার জন্য রাজ বাড়ি এর মধ্যে পুকুর, মন্দির ও বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন কারুশিল্পের আবির্ভাব ঘটে।

পরবর্তীতে 1734 সালে রামজীবন মারা যান এবং তার দত্তক পুত্র রামকান্ত রাজত্ব শুরু করেন। রামকান্তের মৃত্যুর পরে পুরো শাসনব্যবস্থা চলে যায় রামকান্তের স্ত্রী রানী ভবানীর হাতে।1802 সালের রানী ভবানীর মৃত্যুর মাধ্যমে নাটোরে এক মহীয়সী নারীর রাজ্যশাসনের পরিসমাপ্তি ঘটে। রানী ভবানীর মৃত্যুর পর শাসন ব্যবস্থা শুরু হয় রানী ভবানীর দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণ এর মাধ্যমে।1873 সালে রানী ভবানীর দত্তকপুত্র রামকৃষ্ণ এর নিকট থেকে শাসন ক্ষমতা চলে যায় ইংরেজদের হাতে যার মাধ্যমে রাজ বংশের শাসন আমলের পতন ঘটে। 

নাটোরে অবস্থিত রাজবাড়ী এই পুরো রাজবংশের সোনালী অতীত গুলোকে সংরক্ষণ করে রেখেছে। 1986 সাল থেকে এই রাজবাড়ী পুরো এলাকা নাটোর জেলা প্রশাসনের দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে এবং বর্তমানে রানী ভবানী কেন্দ্রীয় উদ্যান বা যুব পার্ক হিসেবে পরিচিত।

 

2. নাটোর উত্তরা গণভবন

নাটোরের দর্শনীয় স্থান কী কী? এই সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানগুলোর কথা সর্বপ্রথম মনে পড়ে, উত্তরা গণভবন তার মধ্যে অন্যতম। 

নাটোর শহর হতে প্রায় 2.4 কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি বা উত্তরা গণভবন। রাজবংশের একটি বড় ঐতিহ্য বহন করে দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি বা উত্তরা গণভবন।


1734 সালে প্রায় 43 একর জমির উপর দিঘাপাতিয়া রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা দয়ারাম রায় সর্বপ্রথম দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি নির্মাণকাজ শুরু করেন এবং পরবর্তীতে রাজবংশীয় ষষ্ঠ রাজা প্রমদানাথ ভবনের পুনর্নির্মাণ ও সম্প্রসারণ করেন। তিনি রাজবাড়ীর চারিদিকে প্রাচীর নির্মাণ করেন এবং রাজবাড়ির ভিতরের কারুকার্যখচিত মূল ভবন নির্মাণ করেন। রাজা প্রমথনাথের নির্মিত ছোট-বড় মোট ভবনের সংখ্যা 12 টি। রাজা প্রমোদানাথ পুরো ভবন নির্মাণের জন্য বিদেশ থেকে বিভিন্ন বিশেষজ্ঞ, প্রকৌশলী, চিত্রকর ও মিস্ত্রিদের সহায়তা নিয়েছিলেন। পুরো ভবনটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছিল প্রায় 11 বছর (1908 থেকে 1997)।

দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি পুরো ভবনটি মুঘল ও পাশ্চাত্য রীতির কারুকার্যে নির্মিত। দিঘাপাটিয়া রাজবাড়িতে 12 টি ভবন রয়েছে। তন্মধ্যে রয়েছে-

  • প্রাসাদ ভবন
  • কুমারপ্রসাদ 
  • প্রধান ফটক 
  • রান্নাঘর 
  • তিন কর্তা রানী বাড়ি
  • প্রধান কাছারি ভবন 
  • স্টাফ কোয়ার্টার 
  • মোটর গ্যারেজ 
  • ড্রাইভার সেন্ট্রি 
  • বক্স বক্স ইত্যাদি।

প্রতিটি ভবনের নির্মাণ ও কারুকার্যের নান্দনিকতায় অনন্য।

1947 সালে দেশ বিভাগের পর দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ির রাজা ভারতবর্ষে চলে যান এবং তারপর পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এই রাজ বাড়ির নামকরণ করেন 'মোনায়েম খান গভর্নর এর বাসভবন' হিসেবে। তারপর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে 1972 সালের 9 ফেব্রুয়ারি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এর নামকরণ করেন 'উত্তরা গণভবন'। যা বর্তমানে উত্তরা গণভবন বা উত্তরাঞ্চলের গভারমেন্ট হাউস নামে সুপরিচিত।

1947 সালের পরে এই দিঘাপাতিয়া রাজবাড়িতে আর কেউ বসবাস করে নি। এই রাজবাড়ী এখন জেলা প্রশাসন দ্বারা পরিচালিত দর্শনার্থীদের জন্য একটি বিশেষ স্থান। এখানে দিঘাপাতিয়া রাজবাড়ি সংগ্রহশালাও রয়েছে যেখানে রাজবাড়ি ও রাজার ব্যবহৃত বিভিন্ন সামগ্রী ইতিহাস সংরক্ষিত আছে।

3.চলনবিল

উত্তরাঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশের বৃহ বিল হচ্ছে চলনবিল। 


নাটোর, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলায় অবস্থিত চলনবিল। চলন বিলের পৃষ্ঠতলের অঞ্চলের ক্ষেত্রফল 2072 বর্গমিটার বর্গমাইল এলাকা জুড়ে। চলনবিলের গড় গভীরতা 2 মিটার এবং সর্বাধিক গভীরতা 4 মিটার। বাংলাদেশের প্রায় 47 টি নদী এবং অন্যান্য বিভিন্ন জলপথ এর মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে থাকে। চলনবিল নাটোর জেলার সিংড়া গুরুদাসপুর বড়াইগ্রাম উপজেলার পাশ দিয়ে বহমান।

প্রথমাবস্থায় গঠিত হওয়ার সময় সঙ্গে প্রায় 1088 বর্গ কিলোমিটার এবং বর্তমানে তা কমে এসেছে। বর্তমানে চলন বিলের আয়তন নিয়ে মতভেদ রয়েছে। কোনো জরিপ অনুসারে চলন বিলের আয়তন 500 বর্গমাইল বা 1424 বর্গ কিলোমিটার আবার অন্য এক জরিপ অনুসারে চলন বিলের মোট আয়তন 2072 কিলোমিটার । চলন বিলের দৈর্ঘ্য পূর্ব-পশ্চিম বরাবর 32 মাইল এবং উত্তর-দক্ষিণ বরাবর প্রায় সাড়ে 24 মাইল।

চলনবিলের মধ্য দিয়ে প্রবাহমান উল্লেখযোগ্য নদী গুলো হচ্ছে করতোয়া, আত্রাই, বড়াল, তুলসী, গুড়, চিকনাই, ভাদাই, তেলকুপি, বরনজা ইত্যাদি।

চলনবিল নামকরণের ক্ষেত্রে চলনবিল শব্দটি এসেছে চোল শব্দ থেকে। প্রাচীন ভারতের ইতিহাস অনুসারে প্রাচীনকালে উড়িষ্যা অঞ্চলে চোল রাজবংশ বসবাস করতো এবং সেখানে চোল সমুদ্র বা চোল হৃদ ছিল বলে জানা যায়। যার কারণে চলন বিলের নামকরণ এই চোলা রাজবংশ বা চোল সমুদ্রের নামকরণ অনুসারে করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

4.হালতির বিল

নাটোরের দর্শনীয় স্থান কী কী? এই সম্পর্কে জানতে চাইলে স্থানগুলোর কথা সর্বপ্রথম মনে পড়ে, হালতির বিল তার মধ্যে একটি।


নাটোর সদর থেকে প্রায় 10 কিলোমিটার দূরে প্রবাহমান বিল হালতির বিল। হালতির বিল নাটোর জেলার অন্তর্গত নলডাঙ্গা থানার পাশে প্রবাহমান। হালতির বিল এর অন্যতম আকর্ষণ হচ্ছে বিলের মধ্যে অবস্থিত ছোটো ছোটো গ্রামগুলি। এগুলো দেখতে দ্বীপের মতো। এছাড়াও পাটুল থেকে খাজুরা পর্যন্ত সেই রাস্তা রয়েছে এটিও পর্যটকদের নজর কাড়ে। বর্ষাকালে যখন পুরো বিল পানিতে ভরে যায়, তখন এই রাস্তায় বিলের সৌন্দর্য বাড়ে।

হালতির বিল কে উত্তরাঞ্চলের সমুদ্র বলা যেতে পারে। কারণ এখানকার জল রাশি, ঢেউ, বিলের মধ্যে দীপ স্বরূপ গ্রাম, সৌন্দর্যের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। বর্ষাকালে বা সাধারণত বৈশাখ থেকে কার্তিক মাস পর্যন্ত এই বিলে পানির গভীরতা থাকে প্রায় 5 থেকে 8 ফুট। বর্ষাকালে এই বিলে সৌন্দর্য অনেক গুন বেড়ে যায় এবং এই সময় অসংখ্য পর্যটক এখানে ভ্রমণ করে। নৌকা প্রমান সহ বিভিন্ন দৃষ্টিনন্দন ও আনন্দঘন ভ্রমণের স্থান হিসেবে বিবেচিত হয় হালতির বিল।

হালতির বিল আত্রাই নদীর সাথে সংযুক্ত। এটি নাটোর সদর উপজেলার বেশকিছু ইউনিয়ন জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে যার মধ্যে মাধনগর, ব্রক্ষপুর, খাজুরা, পিপরুল ইউনিয়ন ইত্যাদি।

5.শহীদ সাগর

নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার গোপালপুর এ অবস্থিত একটি স্মৃতিস্তম্ভ হচ্ছে শহীদ সাগর।


শহীদ সাগর মূলত একটি পুকুরকে কেন্দ্র করে নির্মিত যেখানে 1971 সালে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে সংঘটিত গণহত্যায় শহীদের রক্তে রঙিন হয়েছিল সমস্ত মাটি।

1971 সালের 5 মে সকাল 10 ঘটিকায় গোপালপুর নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলে কর্মরত কর্মকর্তা শ্রমিকদের উপর আক্রমণ চালায় পাকিস্তানি পাক হানাদার বাহিনী। সে সময় সেখানে উপস্থিত অনেকেই শহীদ হন।

স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে এই গণহত্যায় 42 জন শহীদের নাম পাওয়া যায় । এনাদের মধ্যে রয়েছেন-

  • অব. লে. মোঃ আনোয়ারুল আজিম 
  • সাইফুদ্দীন আহমদ 
  • শহীদুল্লাহ
  • গোলজার হোসেন তালুকদার
  • নুরুল হক 
  • মান্নান ভূঁইয়া 
  • আব্দুল রউফ 
  • আবুল বাশার 
  • মনসুর রহমান 
  • গোলাম কিবরিয়া
  •  মকবুল হোসেন 
  • আজহার আলী 
  • সাজেদুর রহমান 
  • ইসমাইল হোসেন
  • হাবিবুর রহমান
  • মোসাদের উল হক 
  • মোকছেদুল আলম
  • রহমান আমিন
  • মোহাম্মদ আলী 
  • মোজাম্মেল হক
  • আব্দুল মান্নান 
  • ফিরোজ মিয়া
  • আক্তার উদ্দিন 
  • মোহরাব আলি
  • আনোয়ারুল ইসলাম 
  • পরেশ মোল্লা
  • কামাল উদ্দিন 
  • আবুল কাশেম
  • আব্দুর রব 
  • শামসুল হক
  • আব্দুল মজিদ 
  • আবুল কালাম
  • নজরুল ইসলাম 
  • আয়েজুদ্দিন
  • আব্দুর রাজ্জাক 
  • তোফায়েল
  • মোসলেম উদ্দিন 
  • শহীদুল্লাহ
  • আঃ আলী
  • আঃ মান্নান

1973 সালের 5 মে এই শহীদ সাগর উদ্বোধন করেন শহীদ অব. লে. মোঃ আনোয়ারুল আজিমের স্ত্রী বেগম শামসুন্নাহার। পরবর্তীতে 2000 সালের 5 মে শহীদ সাগর জাদুঘর উদ্বোধন করা হয়।

6. নর্থ বেঙ্গল সুগার  মিল

নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল নাটোর জেলার লালপুর উপজেলার গোপালপুর অবস্থিত একটি অন্যতম প্রাচীন চিনিকল। এটি বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশন দ্বারা পরিচালিত। এই নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল হতে চিনি, জৈব সার, চিটাগুড়, প্রস্তুত করা হয়।


1933 সালে মেসার্স সুরুজ্জামান ও নাগরমাল নামক ব্যাক্তিগন এই নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে 1967 সালে তা রাষ্ট্রীয় তত্ত্বাবধানে চলে যায় এবং বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের পরের 1972 সালে প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রয়ত্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঘোষিত হয়।

7. গ্রীন ভ্যালি পার্ক

নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা অবস্থিত নাটোরে এক অন্যতম দর্শনীয় স্থান হচ্ছে গ্রীন ভ্যালি পার্ক।


গ্রিন ভ্যালি পার্ক নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা হতে প্রায়  কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। প্রায় 123 বিঘা জমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এই নন্দনকানন। সুসজ্জিত প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে এটি এখন বিনোদনপ্রেমী মানুষের কাছে অন্যতম প্রিয় স্থান। নাটোর জেলা ছাড়াও এর বাইরে অসংখ্য জেলা হতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় জমায় এই পার্কে। বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম এই গ্রীন ভ্যালি পার্ক এর মধ্যে রয়েছে -

  • বুলেট ট্রেন, 
  • স্পিডবোট, 
  • প্যাডেল বোট, 
  • মিনি ট্রেন, 
  • হানি সুইং, 
  • পাইরেট শিপ, নাগরতলা, 
  • অ্যাডভেঞ্চার অফ রাইটস, 
  • শুটিং স্পট, 
  • পিকনিক স্পট ,
  • প্লেগ্রাউন্ড ইত্যাদি।

এছাড়াও এ পার্কের মধ্যে রয়েছে অন্যতম সুন্দরতম নিদর্শন হিসেবে রয়েছে একটি লেক, যার প্রায় 30 একর জায়গা জুড়ে নিয়ে বিস্তৃত। আঁকাবাঁকা এই লেকটি গ্রীন ভ্যালি পার্ক এর সৌন্দর্য অনেক গুণ বাড়িয়ে দেয়। প্রতিদিন সকাল 9 টা হতে বিকাল 5 টা পর্যন্ত দর্শনার্থীদের জন্য বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে খোলা থাকে এই পার্কটি। গ্রিন ভ্যালি পার্কে প্রবেশের জন্য শরনার্থীদের নির্দিষ্ট প্রবেশ মূল্য প্রদান করে পার্কে প্রবেশ করতে হয়।


নাটোর কিসের জন্য বিখ্যাত ?  

দর্শনীয় স্থান ছাড়াও আরো কিছু বিশেষত্ব আছে যেগুলোর জন্য বিখ্যাত। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন এবং নাটোরের কাঁচাগোল্লা। অধিকাংশ সময়ই নাটোরের নাম আসলে কাঁচাগোল্লা ও বনলতা সেন এমনিতেই নাটোরের পাশে উল্লিখিত হয়। বনলতা সেন হচ্ছে কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত একটি বিখ্যাত কবিতা এবং কাঁচাগোল্লা হচ্ছে নাটকের অন্যতম উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয় একটি খাবার মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারের নাম।

নাটোরের বনলতা সেন

1954 সালে কবি জীবনানন্দ দাশের রচিত বনলতা সেন কবিতাটি জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা। কবি জীবনানন্দ দাশের বনলতা সেন কবিতার কথা উঠলেই নাটোরের কথা উঠে আসে। কবি তাঁর কবিতায় নাটোরের কথা উল্লেখ করায় নাটোর বনলতা সেন এর জন্যও বিখ্যাত। কবি জীবনানন্দ দাশ রচিত বনলতা সেন কবিতাটি নিম্নরূপ- 

বনলতা সেন 

জীবনানন্দ দাশ

হাজার বছর ধরে আমি পথ হাঁটিতেছি পৃথিবীর পথে,

সিংহল-সমুদ্র থেকে নিশীথের অন্ধকারে মালয় সাগরে

অনেক ঘুরেছি আমি; বিম্বিসার-অশোকের ধূসর জগতে

সেখানে ছিলাম আমি; আরও দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে;

আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,

 আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।

চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,

মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য; অতিদূর সমুদ্রের পর 

হাল ছেড়ে নাবিক হারায়েছে দিশা

সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর,

তেমনি দেখেছি তারে অন্ধকারে; বলেছে সে, 'এতদিন কোথায় ছিলেন?'

পাখির নীড়ের মত চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন।

সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন

সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল;

পৃথিবীর সব রঙ নিভে গেলে পান্ডুলিপি করে আয়োজন

তখন গল্পের তরে জোনাকির রঙে ঝিলমিল;

সব পাখি ঘরে আসে-সব নদী-ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;

থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন।


নাটোরের কাঁচাগোল্লা 

নাটোর জেলায় উৎপন্ন বিখ্যাত একটি মিষ্টান্ন খাবারের নাম নাটোরের কাঁচাগোল্লা। এই মিষ্টান্ন জাতীয় খাবারটি সর্বপ্রথম নাটোরে উৎপত্তি হলেও বর্তমানে নাটোর ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় এর বেশ পরিচিতি রয়েছে। বাংলাদেশ ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বেশকিছু মিষ্টান্ন ভান্ডারের কাঁচাগোল্লা প্রস্তুত করা হয়। কাঁচাগোল্লা তৈরি করা হয় দুধ হতে প্রাপ্ত সম্পূর্ণ কাঁচা ছানা দিয়ে , এজন্য এর নাম কাঁচাগোল্লা।



কাঁচাগোল্লা তৈরি করার প্রধান উপকরণ গুলো হচ্ছে দুধ , পানি , চিনি, এলাচ ও সিরকা।

কাঁচাগোল্লা সর্বপ্রথম তৈরি হতো নাটোর শহরের লালবাজারে মধুসূদন পাল নামক একজন ব্যক্তির মিষ্টান্ন ভান্ডারে। সেই সময় মধুসূদন পালের দোকানটি মূলত মিষ্টান্নের জন্য বিখ্যাত ছিল। সর্বপ্রথম মধুসূদন পাল এর দোকানে তৈরি হবার একটি কাহিনী রয়েছে। 

মধুসূদন পাল এর দোকানে অনেক বড় ছেলে এবং প্রতিদিন প্রায় 15 জন কর্মচারী সেখানে কাজ করতো। দোকানে মিষ্টি তৈরি করার জন্য বেশ বড় বড় ছিল এবং সেখানে প্রায় দেড় থেকে দুই মন সানা থেকে পানতোয়া, চমচম , কালোজাম ইত্যাদি তৈরি করা হতো। হঠাৎ একদিন তার দোকানের কর্মচারীরা আসলো না, তিনি সানাম লাগে নষ্টের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য থানার মধ্যে চিনি দিয়ে জ্বাল দিয়ে রেখে দেওয়ার নির্দেশ দিলেন। পরবর্তীতে যখন সে জাল দেওয়া স্বাদ নেওয়া হলো, তখন বোঝা গেল যে চিনি দিয়ে জ্বাল দেওয়া সানা অসম্ভব সুস্বাদু হয়েছে। পরবর্তীতে আশ ছানা দিয়ে তৈরি এই মিষ্টান্নের জনপ্রিয়তার প্রচার বাড়তে থাকল এবং যেহেতু এটি একদম কাঁচা ছানা থেকে তৈরি করা হয় তাই এর নামকরণ করা হলো কাঁচা গোল্লা। এর সর্বপ্রথম উৎপত্তিস্থল নাটোর হয় এটি সারা বাংলাদেশের নাটোরের কাঁচাগোল্লা নামে পরিচিত।

নাটোর জেলার বিখ্যাত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম কী? 

2020 সালের 20 মে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর  প্রকাশিত গেজেট অনুসারে নাটোরে মোট 29 জন মুক্তিযোদ্ধা গেজেট এর অন্তর্ভুক্ত হয়। নাটোরে সেই সকল মুক্তিযোদ্ধারা গেজেট এর অন্তর্ভুক্ত হয় তাদের নাম নিম্নরূপ-

  • মোঃ সোলায়মান আলী, বাগাতিপাড়া
  • মোঃ আব্দুর রাজ্জাক , বাগাতিপাড়া
  • মোঃ শাহাবুদ্দিন, লালপুর
  • শহীদ মজিবর রহমান, লালপুর
  • মোঃ আমজাদ হোসেন, লালপুর
  • মোহাম্মদ শাবান বিশ্বাস, লালপুর
  • মৃত জমশেদ আলী প্রামানিক, লালপুর
  • মরহুম রুস্তম আলী সরকার, লালপুর
  • মৃত জাহাঙ্গীর আলম, লালপুর
  • মৃত পিয়ার উদ্দিন, লালপুর
  • মৃত অমরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য, নাটোর সদর
  • মোঃ ফজলুর রহমান, নাটোর সদর
  • মোহাম্মদ ভাদু মন্ডল, নাটোর সদর
  • মৃত অফিসার ফকির, নাটোর সদর
  • ইব্রাহিম প্রাং একদেল, নাটোর সদর
  • মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম, নাটোর সদর
  • আশরাফুল আলম, নাটোর সদর
  • মৃত মকবুল হোসেন, নাটোর সদর
  • সুলতান আহমেদ, নাটোর সদর
  • মোঃ আমজাদ হোসেন, নাটোর সদর
  • মোহাম্মদ শরিয়তউল্লাহ, নাটোর সদর
  • মোঃ মজিবুর রহমান, নাটোর সদর
  • মৃত রফিক উদ্দিন, নাটোর সদর
  • অঞ্জলি রানী সরকার, নাটোর সদর
  • মৃত মফিজউদ্দিন, নাটোর সদর
  • শেখর দত্ত, নাটোর সদর
  • মৃত শাহ নজরুল ইসলাম ,নাটোর সদর
  • মৃত হাসেন আলী মন্ডল, নাটোর সদর।

নাটোরের বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গ

  • এএইচএম কামরুজ্জামান, মুজিবনগর সরকারের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রী
  • জুনায়েদ আহমেদ পলক রাজনীতিবিদ
  • শেখ এমদাদুল হক আল মামুন, রাজনীতিবিদ
  • ফজলুর রহমান পটল, সাবেক মন্ত্রী
  • মমতাজ উদ্দিন, রাজনীতিবিদ
  • শেফালী মমতাজ, রাজনীতিবিদ
  • সাইফুল ইসলাম, রাজনীতিবিদ
  • ফরিদা পারভীন, কণ্ঠশিল্পী
  • লতিফুল ইসলাম শিবলী, গীতিকার সুলতানা ইয়াসমিন লায়লা, কণ্ঠশিল্পী 
  • শরৎকুমার রায়, বাংলাদেশের প্রথম জাদুঘর বরেন্দ্র জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা
  • প্রমথনাথ বিশী, লেখক ও শিক্ষাবিদ
  • এম আব্দুস সোবহান, সাবেক উপাচার্য রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
  • তাইজুল ইসলাম, ক্রিকেটার বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল।

নাটোরে অবস্থিত উল্লেখযোগ্য নদ-নদী কী?

নাটোর জেলার আনাছে-কানাছে বয়ে চলেছে অসংখ্য নদী।এর মধ্যে হচ্ছে  নারদ নদ, বড়াল নদী, বরনই, নন্দকুজা, গুনাই, গোদাই, খলিশা ডাঙ্গা নদী ইত্যাদি।

নন্দকুজা নদীটি রাজশাহী জেলার চারঘাট, বাঘা উপজেলা, নাটোর জেলার লালপুর, বাগাতিপাড়া, বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর উপজেলার পাশ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নন্দকুজা নদীর মোট দৈর্ঘ্য 89 কিলোমিটার।

নারদ নদ নাটোর জেলার সদর হট সিংড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান। এর মধ্যকার 18 কিলোমিটার।

খলিশা ডাঙ্গা নদী নাটোর জেলার লালপুর বাগাতিপাড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান। এর মোটরকে 17 কিলোমিটার।

গদাই নদী নাটোর জেলা সদর ও সিংড়া উপজেলার মধ্য দিয়ে প্রবাহমান। এর মধ্যে ঘর 26 কিলোমিটার।

বরনই নদী নাটোর জেলার সদর, নলডাঙ্গা, সিংড়া, গুরুদাসপুর উপজেলার মধ্যে প্রবাহমান। এর মোট দৈর্ঘ্য 93 কিলোমিটার।

নাটোর জেলার মোট জনসংখ্যা, শিক্ষাব্যবস্থা ও স্বাস্থ্য সুবিধা!

2011 সালের আদমশুমারি অনুযায়ী নাটোরে জেলায় মোট জনসংখ্যা ছিল 1706673 জন।এর মধ্যে পুরুষ ছিল 854183 জন এবং  নারী ছিল 852490 জন।

নাটোর জেলায় শিক্ষা ব্যবস্থা

নাটোর জেলায় বসবাসকারী লোকজনের মধ্যে সাক্ষরতার হার 70 শতাংশ। এখানে যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তা নিম্নরূপ

  • প্রস্তাবিত একটি সরকারি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়
  • একটি বেসরকারি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
  • একটি সরকারি টেক্সটাইল ইনস্টিটিউট
  • আটটি সরকারি কলেজ
  • এবং অসংখ্য প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল কলেজ।

নাটোর জেলা চিকিৎসা ব্যবস্থা

নাটোর জেলায় বসবাসকারী মানুষদের জন্য যে সকল জায়গায় সরকারি বা বেসরকারি ভাবে চিকিৎসা ব্যবস্থার যে সকল সুযোগ রয়েছে, তা নিম্নরূপ-

জনগণের চিকিৎসার জন্য এই জেলায় হয়েছে-

  • একটি সরকারি জেলা হাসপাতাল
  • 6 টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
  • 124 টির কমিউনিটি ক্লিনিক
  • 52 ডায়াগনস্টিক সেন্টার
  • একটি সামরিক হাসপাতাল
  • দুইটি মিশন হাসপাতাল।

নাটোরের অর্থনীতি 

নাটোর জেলায় বেশকিছু শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম-

  • নাটক বিসিক শিল্প এলাকা 
  • নাটোর সুগার মিল লিঃ 
  •  নর্থ বেঙ্গল সুগার মিল 
  • পদ্মা অয়েল কোম্পানি
  • নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল 1
  • নাটোর অর্থনৈতিক অঞ্চল 2
  • নাটোর জুটমিল লিমিটেড
  • নবতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড
  • পারটেক্স এগ্রো লিমিটেড 
  • কিষোয়ান এগ্রো লিমিটেড
  • ফ্ল্যাশ ফ্ল্যাশ জুট মিলস লিমিটেড
  • যমুনা ডিস্ট্রিলারী লিমিটেড 
  • চামড়াশিল্প ইত্যাদি।

বাংলাদেশে মোট চিনিকলের সংখ্যা 16 টি। এর মধ্যে দুইটি নাটোরে অবস্থিত। নাটোরে উৎপাদিত শস্য গুলোর মধ্যে অন্যতম। এছাড়াও রসুন, ইক্ষু গম, পাট দিয়ে ভালো পরিমাণে উৎপাদিত হয়। এছাড়াও আম, লিচু, বাদাম, সুগন্ধি চাল, মুগ ডাল, আপেলকুল, বাউকুল এগুলোর জন্য বিখ্যাত নাটোর জেলা।

নাটোরের আবহাওয়া 

নাটোর জেলার সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা 37.80 সে. এবং সর্বনিম্ন গড় তাপমাত্রা 11.20 সে.। নাটোর জেলার বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 1852মিমি।

নাটোর জেলা বাংলাদেশের উষ্ণতম জেলা হিসেবে পরিগণিত হয়। নাটোর জেলার লালপুর উপজেলা বাংলাদেশ সর্বোচ্চ উষ্ণতম স্থান এবং এখানে বাংলাদেশের সব থেকে কম বৃষ্টিপাত হয়।

আশা করি, আর্টিকেলটির মাধ্যমে, নাটোর জেলা কিসের জন্য বিখ্যাত? নাটোর জেলার ইতিহাস, নাটোর জেলা সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা পেয়েছেন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url