OrdinaryITPostAd

হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলের ইতিহাস

 প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৮ টি হলের মধ্যে  অন্যতম একটি ঐতিহ্যবাহী  হল হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল। হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলের  রয়েছে নিজস্ব ইতিহাস ও ঐতিহ্য। হলটিতে রয়েছে সুন্দর, মনোরম পরিবেশ।আজকের এই আর্টিকেলে হলটির ইতিহাস ও বর্তমান পরিক্রমা জানাবো।




অনুচ্ছেদ সূচি (যে অংশ পড়তে চান তার ওপর ক্লিক করুন ) 

  1. হাজী মোহাম্মদ মহসীন হল এর ইতিহাস
  2. হাজী মুহাম্মদ মহসিন এর পরিচয় 
  3. মহসিন হলের আভ্যন্তরীণ বিষয়াবলি 
  4. মহসিন হলের বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব 
  5. হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল ছাত্র সংসদ 
  6. হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল ক্যান্টিন
  7. হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল সাহিত্য সংসদ
  8. হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল ডিবেটিং ক্লাব
  9. হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল পাঠাগার
  10. রক্ত দাতাদের সংগঠন বাঁধন
  11. মুহসিন হলের খেলার মাঠ
  12. মুহসিন হলের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা 
  13. লেখকের মন্তব্য 

হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলের ইতিহাস 

উপ মহাদেশের সর্ববৃহৎ, প্রাচীন, ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। বাংলাদেশের সেরা এই  বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ১৯ টি হল রয়েছে। ছেলেদের জন্য ১৪ টি এবং মেয়েদের জন্য ৫টি হল রয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠাকালীন তিনটি হল ছিল। শিক্ষার্থীদের আবাসিকতার জন্য কালক্রমে আরো অনেক হল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহী ও অনেক পুরনো  হল, মহসিন হল । মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে যে কয়টি হল প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তার মধ্যে অন্যতম একটি হল মুহসিন হল । তৎকালীন পাকিস্তান শাসনামলে ছাত্রদের আবাসিক সংকট কাটানোর জন্য বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ  ১৯৬৭ সালের পয়লা জানুয়ারি মুুহসিন হল প্রতিষ্ঠিত হয় । হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল তৎকালীন সর্ববৃহৎ হল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হলের  প্রথম প্রাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন প্রফেসর মোহাম্মদ ইন্নাস আলী।  হলটির নামকরণ করা হয়েছে উপমহাদেশের অন্যতম শিক্ষানুরাগী, দানবীর,বাংলার হাতেম তাই বলে খ্যাত হাজী মুহাম্মদ মুহসিন এর নামে।বাংলার ইতিহাসে হাজী মুহাম্মদ মহসিন এর অবদানকে,তার  স্মৃতিকে  চির স্মরণীয় করে রাখতে হলটির নামকরণ তার নামে করা হয়। 

হাজী মোহাম্মদ  মহসিন এর পরিচয় 

জন্ম ও বাল্যকাল 

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন ১৭৩২ সালের ৩রা জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করে । তবে হুগলির ইমামবাড়া তথ্য অনুযায়ী মহসিন এর জন্ম ১৭৩০সালে ।  পশ্চিমবঙ্গের হুগলিতে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে তার জন্ম হয়।  তার পিতার নাম আগা ফয়জুল্লাহ ও মাতার নাম জয়নাব খানম।আগা ফয়জুল্লাহ এক জমিদারের বিধবা স্ত্রীকে বিবাহ করে।তার এক কন্যাও ছিল।  জয়নাব খানম এর  প্রথম পক্ষের কন্যার নাম মন্নুজান। জমিদারের সমস্ত বিষয় সম্পত্তির মালিক হলেন মন্নুজান। ফয়জুল্লাহ ও জয়নাবের কোল আলোকিত করে জন্ম নেয় মহসিন।  তখন  মন্নুজানের বয়স ছিল ১২ বছর' । তিনি তৎকালীন নামকরা পন্ডিত সিরাজী সাহেবের কাছে আরবি, ফার্সি শিক্ষা শেষ করেন। এরপর তিনি মুর্শিদাবাদের মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করেন। 

পিতা-মাতার মৃত্যু ও বোনের অনুরোধ 

মাদ্রাসায় থাকাকালীন  মুহসিনের সুনাম  চারদিকে ছড়িয়ে পড়লো। মুহসিনের সুনামের কথা মুর্শিদাবাদের নবাবের কানে গেল, তিনি তাঁকে উচ্চ রাজপদে নিযুক্ত করার প্রস্তাব দিলেন। ইতোমধ্যে তার বাবা-মা মৃত্যুবরণ করলে মন্নুজান একা হয়ে যান।তাই  তিনি নবাবের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন।মন্নুজান হুগলিতে থেকে মহসিনকে তার সব সম্পত্তি  দেখাশোনা করার জন্য অনুরোধ করলেন। বোনের অনুরোধে তার মুর্শিদাবাদ যাওয়া হলো না। তিনি হুগলিতে থেকে তার বোনের সম্পত্তি দেখাশোনা করতে লাগলেন। এরপর তিনি হুগলির ফৌজদার মির্জা সালাউদ্দিনের সাথে তার বোনের বিয়ে দেন। 

বিদেশ ভ্রমণ ও হজ পালন 

 তিনি ১৭৬২ সালে বিশ্ব ভ্রমণে বের হন । তিনি আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ ও মুসলিম ধর্মীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করেন। তিনি তুরস্ক, ইরান, ইরাক কুফা ও কারবালা পরিদর্শন করেন। তিনি সৌদি আরবের মক্কা, মদিনা পরিদর্শনকালে হজ সম্পন্ন করেন।বিভিন্ন দেশ ও ধর্মীয় স্থান পরিদর্শন শেষে তিনি ২৮ বছর শেষে দেশে ফিরে আসেন।  

উত্তরাধিকার লাভ

তার বোন মন্নুজান নিঃসন্তান ছিলেন।তাই তিনি মুহসিনকে দেশে আসার জন্য অনুরোধ করেন।  তার বোনের অনুরোধ কল্পে দীর্ঘ ২৮ বছর পর দেশে ফিরে আসেন। দেশে এসেই তিনি বোনের সম্পত্তি দেখাশোনা শুরু করেন। 

উদারতা ও দানশীলতা 

হাজী মুহাম্মদ মহসিন এর ধনসম্পত্তি প্রতি তেমন লোভ ছিল না। তাই তিনি এসব সম্পত্তি দাতব্যকাজে ব্যয়  করেন। ৭০বছর বয়সি হাজী মুহাম্মদ মুহসিন তার সব সম্পত্তি দান সদকায় ব্যয় করেন।  গরিব-দুঃখী ও নিঃস্ব মানুষের মাঝে  তার সম্পত্তি বিলিয়ে দেন। অনেক ধন সম্পত্তির থাকলেও তিনি কখনও বিলাসী ছিলেন না।তিনি ছিলেন পর দুঃখ কাতর, সরল ও ধর্মমনা মানুষ। ইতিহাসে দানশীল হিসেবে হাজি মুহাম্মদ মুহসিন চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন। 

মহসিন ফান্ড  প্রতিষ্ঠা

 হাজী মুহাম্মদ মহসিন  ১৮০৬ সালের ২০ সেপ্টেম্বর একটি তহবিল প্রতিষ্ঠা করেন ।এটি মহসিন ফান্ড নামে পরিচিত। তার সব সম্পত্তি ফাউন্ডেশন এর জন্য দান করেন। ফান্ডের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য দুইজন মুতাওয়াল্লি নিয়োগ করেন।তার ফান্ডের অর্থ দিয়ে পরবর্তীতে অনেক শিক্ষার্থীর পড়াশুনার ব্যবস্থা করা হয় ।তৎকালীন সময়ে তার ফান্ডের অর্থ দিয়ে অনেক সেবামূলক  কাজ করা হয়।১৮০৬ সালে মুসলমানদের শিক্ষার উন্নতির জন্য  তিনি ১লাখ ৫৬ হাজার টাকার সম্পত্তি  দান করেন। তিনি সারাজীবন দান করেও তার   পূর্বেও  তার প্রচুর সম্পত্তি ছিল। তিনি তার সব সম্পত্তি সেবার  কাজে ব্যয় করার জন্য মহসিন  ফান্ডে  উইল  করে  যান।১৮৪১ সালে হুগলির গংগা নদীর ধারে ইমামবাড়া নির্মাণ করা হয় মহসিন ফান্ডের অর্থ দ্বারা। এ তহবিলের অর্থ ধর্মীয় কর্মকান্ড, পেনশন, বৃত্তি, দাতব্য কাজে  ব্যয় করা হয়। 

 তার ব্যক্তিত্ব ও মৃত্যু 

তিনি প্রচুর  সম্পত্তির মালিক  হলেও কখনো  বিলাসি জীবনযাপন করেন নি।বিলাসিতা তাকে স্পর্শ করতে পারে নি।সাধু সন্ন্যাসীদের মতো তিনি সারাজীবন কাটিয়েছেন।তার মতো দানবীর মানুষ  বর্তমানে খুব কম দেখা যায়। তার দানশীলতার জন্য তাকে বাংলার দানবীর বলা হয়।ইতিহাসের পাতায় হাজি মুহাম্মদ মুহসিনএর নাম চিরস্মরণীয় হয়ে আছে।হাজি মুহাম্মদ মুহসিন ১৮১২ সালের ২৯ নভেম্বর  হুগলিতে মৃত্যুবরণ  করেন।হুগলির ইমামবাড়ায় তাকে দাফন করা হয়। 

মহসিন হলের আভ্যন্তরীণ বিষয়াবলি 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি হল মুহসিন হল।শিক্ষানুরাগী ও দানবীর হাজী মুহাম্মদ মহসিন এর নামে হলটির নামকরণ করা হয়েছে। হাজী মোহাম্মদ মহসীন হলে সর্ব মোট ৩৯৫ টি কক্ষ রয়েছে। এখানে প্রায়ই বারোশো এর অধিক শিক্ষার্থী অবস্থান করছে । যাদের মধ্যে ৬০০ এর অধিক আবাসিক ছাত্র ৮০০এর অধিক দ্বৈতাবাসিক ছাত্র রয়েছে।এছাড়াও প্রায় এক হাজারের অধিক অনাবাসিক ছাত্র রয়েছে । যাদের প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড হল এর অধীন সম্পন্ন  হয। হাজী মুহাম্মদ মহসিন হলে  রয়েছে একটি বড় খেলার মাঠ।এছাড়াও হলের অভ্যন্তরে বাহারি ফুলের গাছের সমন্বয়ে একটি  মাঠ।এছাড়াও রয়েছে একটি টিভি রুম, একটি গেমস রুম, দুইটি রিডিং রুম, একটি পত্রিকা কক্ষ, একটি মসজিদ, একটি লন্ড্রি একটি সেলুন ,গিয়াস উদ্দিন পাঠাগার নামে একটি লাইব্রেরি,  একটি সুসজ্জিত অতিথি কক্ষ, ১৩টি দোকান,ও একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে। এছাড়াও ছাত্রদের মানসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য রয়েছে একটি ক্যান্টিন ও ফয়ট্স এন্টারটেইনমেন্ট নামক একটি মেস।ছাত্রদের নেতৃত্ব ও সেবামূলক মানসিকতা বিকাশের জন্য হল এর সহযোগিতায় ডিবেটিং ক্লাব ও রক্তদাতাদের সংগঠন বাধন রয়েছে। ছাত্র রাজনীতি চর্চার জন্য রয়েছে কার্যকর হল সংসদ।প্রতিবন্ধী ছাত্রদের জন্য রয়েছে আলাদা কক্ষ। ছয়তলা ওঠানামার জন্যে আরো রয়েছে ২ টি  লিফট। শোনা যায়, বাংলাদেশের প্রথম লিফট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  মহসিন হলে চালু হয়েছিল। এটি দেখতে অনেকটা স্টিলের আলমারির মত যার দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকতে হয়। 

মুহসীন হলে অবস্থানকারী বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব 

অনেক বিখ্যাত লেখক  ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাত্রজীবনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসিন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।বাংলাদেশের প্রথিতযশা নন্দিত লেখক  হুমায়ূন আহমেদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলে অবস্থান করেছিলেন।তিনি মহসিন হলের ৫৬৪ নম্বর কক্ষে থাকতেন। শোনা যায়,  তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলের ছাত্র ছিলেন। পরে হাজী মোহাম্মদ মুহসিন হলের লিফট সুবিধার কথা জানতে পেরে তিনি মহসিন হলে চলে চলে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে তিনি মুহসীন হলে অবস্থান করেন।  এখানে বসেই তিনি তার অনেক বিখ্যাত বই লিখেছেন। এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ, আর জে গোলাম কিবরিয়া,বুদ্ধিজীবী ও বিশিষ্ট লেখক সলিমুল্লাহ খান সহ আরো অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি ছাত্রজীবনে হলে থাকতেন।হাজি মুহাম্মদ মুহসিন  হলের সাথে জড়িয়ে আছে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তির স্মৃতি। বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ছাত্রজীবনে এই হলে অবস্থান করেছিলেন।

হাজি মূহম্মদ মুহসিন হল ছাত্র সংসদ  

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের রাজনীতির আঁতুড়ঘর বলে খ্যাত। এখান থেকে বাংলাদেশের প্রথিতযশা রাজনীতিবিদরা উঠে আসে।বাংলাদেশের বেশিরভাগ বড় বড় রাজনীতিবিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উঠে এসেছে।তাই রাজনৈতিক প্রতিভাকে বের করে আনার জন্য   প্রত্যেকটি হলে রয়েছে কার্যকর  ছাত্র সংসদ। হাজী মোহাম্মদ মুহসীন হল তার ব্যতিক্রম নয়। এখান থেকে বাংলাদেশে অনেক বরেণ্য রাজনীতিবিদ উঠে এসেছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ  সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মুহসিন হল থেকে উঠে এসেছেন। এছাড়াও আরও অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব মুহসিন হল থেকে রাজনীতি করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উচ্চপর্যায়ে আসীন হয়েছেন।অনেক রাজনৈতিক প্রতিভা এখান থেকেই বিকশিত হয়েছ। ছাত্রদের মধ্যে থাকা রাজনৈতিক  প্রতিভাকে বিকশিত করার জন্য হাজি মুহাম্মদ মহসিন হল ছাত্র সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে । সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চার জন্য,সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির সাথে ছাত্রদের পরিচয় করার জন্য এবং ছাত্রদের  মধ্যে সুস্থ ধারার রাজনীতি পৌঁছে দিতে কার্যকর রয়েছে ছাত্র সংসদ। হাজি মুহাম্মদ  মুুহসিন হল ছাত্র সংসদের বর্তমান সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন শহীদুল হক  শিশির আর সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন মোহাম্মদ হোসেন। সুস্থ ধারার রাজনীতির চর্চার ক্ষেত্রে হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হল  ছাত্রসংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।  

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল ক্যান্টিন 

সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য খাবার অপরিহার্য। তাই হাজী মোহাম্মদ মহসীন হলে অবস্থানরত  ছাত্রদের মানসম্মত খাবার পরিবেশনের জন্য হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল রয়েছে একটি ক্যান্টিন। ছাত্রদের সুস্বাস্থ্যের  কথা চিন্তা করে হাজী মোহাম্মদ মহসীন হল ক্যান্টিন পুষ্টিকর ও মান সম্মত খাবার পরিবেশন করে।ক্যান্টিনের পাশাপাশি  ছাত্রদের পুষ্টিকর খাদ্য পরিবেশনের জন্য হাজী মোহাম্মদ মুহসীন হলে রয়েছে ফয়টস এন্টারটেইনমেন্ট নামক একটি মেস।  ছাত্রদের মানসম্মত খাবার পরিবেশনে ফয়টস এন্টারটেইনমেন্ট বদ্ধপরিকর।  ছাত্রদের স্বাস্থ্যের দিক বিবেচনা করে তাই হাজী মোহাম্মদ মুহসীন হল ফয়টস এন্টারটেইনমেন্ট মানসম্মত খাবার পরিবেশন করা। 

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল সাহিত্য সংসদ 

সাহিত্য একটি জাতির পরিচয় বহন করে। যুগ যুগ ধরে সাহিত্যই মানুষের মনের ভাব এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে পৌঁছে দেয়। একটি জাতি কত উন্নত  সভ্যতার পরিচয় বহন করে  তা তাদের সাহিত্য পাঠ করেই বোঝা যায় । সাহিত্য পাঠ করে আমার একটা জাতি সম্পর্কে জানতে পারি। সাহিত্য প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে  একটি জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য  পৌঁছে দেয়। সাহিত্য চর্চার গুরুত্ব বিবেচনা করে হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলে তাই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে হাজি মুহাম্মদ মহসিন হল সাহিত্য  সংসদ। ছাত্রদের মধ্যে সাহিত্য চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য এবং তাদের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভার  বিকাশের জন্য হাজী মোহাম্মদ মহসিন হল  সাহিত্য সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল  সাহিত্য সংসদ ছাত্রদের মধ্যে সুস্থধারার সাহিত্য চর্চার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এখানে কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাস, নাটক  ইত্যাদি  কিভাবে লিখতে হয় সেই বিষয়কে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়।ছাত্রদের মধ্যে থাকা সুপ্ত সাহিত্য প্রতিভা কে বের করে আনতে  হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল ছাত্র সংসদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এখানে কবিতার চর্চা, নাটকের চর্চা, প্রবন্ধের চর্চা,  উপন্যাসের চর্চা সর্বোপরি সাহিত্যের চর্চা করা হয। হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল সাহিত্য সংসদ  বেশকিছু প্রতিভাকে ইতিমধ্যে বের করে এনেছে  এবং নতুন নতুন প্রতিভাকে বিকশিত করতে বের করে আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। 

হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল ডিবেটিং ক্লাব

কোন বিষয় নিয়ে  বিতর্ক করার মধ্যেও একধরনের  প্রতিভা রয়েছে। বিতর্ক করার মাধ্যমে  একজন শিক্ষার্থীর মধ্যে আত্মবিশ্বাস,কথা বলার দক্ষতা, নেতৃত্ব দানের দক্ষতা তৈরি হয়।শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্ক চর্চা অব্যাহত রাখতে হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল ডিবেটিং ক্লাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছ। বিতর্ক আমাদের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিকশিত করেন। বিতর্কের  মাধ্যম ছাত্রদের মধ্যে যেকোনো বিষয়ে দক্ষতা বৃদ্ধি পায় । বিতর্ক চর্চা অব্যাহত রাখতে তাই হাজী মুহাম্মদ  মুহসিন হল ডিবেটিং ক্লাব অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিতর্ক সম্পর্কে ধারনা,বিতর্ক চর্চা, প্রতিভাবান  বিতার্কিক বের করে আনা, শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বৃদ্ধি, আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি ইত্যাদি ক্ষেত্রে হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল ডিবেটিং ক্লাব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল ডিবেটিং ক্লাব   সুপ্ত প্রতিভা  বের করে এনে জাতির সামনে উপস্থাপন করছে। এখান থেকেই অনেক ভালো ভালো  বিতার্কিক উঠে এসেছে। আরো সম্ভাবনাময় বিতার্কিক  তুলে আনার ক্ষেত্রে হাজী মুহাম্মদ মুহসিন হল ডিবেটিং ক্লাব কাজ করে যাচ্ছে। এখান থেকে উঠে আসা মেধাবী বিতর্কিক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় পর্যায়ে তাদের মেধার স্বাক্ষর রাখছি।হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল ডিবেটিং ক্লাব  সুপ্ত প্রতিভাগুলো  বের করে এনে জাতীয় পর্যায়ে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। 

হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল পাঠাগার

পাঠাগার হল বই পুস্তিকা ও তথ্য সামগ্রীর একটি সংগ্রহশালা।এখানে পাঠকের প্রবেশাধিকার থাকে এবং পাঠক এখানে পাঠ, গবেষণা ও অনুসন্ধান করতে পারে।বাংলা পাঠাগার শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ হল পাঠ+আগার  ও গ্রন্থাগার শব্দের সন্ধিবিচ্ছেদ হল গ্রন্থ+আগার। অর্থাৎ গ্রন্থের আগার বা জায়গাকে পাঠাগার বলে।জ্ঞানের চর্চার জন্য পাঠাগার অপরিহার্য।তাই শিক্ষার্থীদের খেলার চর্চা অব্যাহত রাখার জন্য হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলে রয়েছে একটি পাঠাগার।এখানে  সবধরনের বই রয়েছে। 

 

রক্তদাতাদের সংগঠন বাধন

রক্তদান একটি মহৎ কাজ। রক্তদানের মাধ্যমে মানুষের অনেক উপকার সাধিত হয়। রক্তদান করলে হার্ট এটাক ও লিভারের  বিভিন্ন অসুখের   ঝুঁকি হ্রাস পায়। বিশ্বজুড়ে মানুষের মৃত্যুর দ্বিতীয়  প্রধান কারণ হলো ক্যান্সার। রক্তদান ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে। নিয়মিত রক্ত দানের মাধ্যমে শরীরের অতিরিক্ত আয়রন প্রতিরোধ করা যায।  রক্তদানের মাধ্যমে নতুন রক্ত কণিকা তৈরি হয় যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। রক্তদান অকাল বার্ধক্যের ঝুঁকি কমায।  নিয়মিত রক্তদান করলে কোলেস্টেরল ও লিপিডের মাত্রা হ্রাস পায়। রক্তদানের রয়েছি  অনেক উপকারিতা। এছাড়াও রক্তদান করলে মানসিক প্রশান্তি পাওয়া যায়। আর সেজন্যই ছাত্রদের মধ্যে রক্তদান বিষয়ে উৎসাহিত করার জন্য হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলে রয়েছে রক্তদানের সংগঠন বাঁধন। বাঁধন হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে রক্তদান বিষয়ে উৎসাহিত করে। এদেশে হাজারো রোগী রক্তের অভাবে মারা যায় । তাই রক্তদানের  মাধ্যমে আমরা হাজারো মানুষের জীবন বাঁচাতে পারি। মানুষ মানুষের জন্য এই মূল মন্ত্রকে ধারণ করে, হাজারো  মানুষের জীবন রক্ষার্থে বাধন হাজী মোহাম্মদ মুহসিন হল শাখা, ছাত্রদের রক্তদানে  উৎসাহিত করে।ছাত্রদের মধ্যে রক্তদানের মানসিকতা তৈরি করে। ছাত্ররা এগিয়ে আসলেই বেছে যেতে পারে অগণিত প্রাণ।ছাত্রদেরকে তাই  মানবিক কাজে অংশগ্রহণ করতে উদ্বুদ্ধ করে বাধন।

হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল খেলার মাঠ

ছাত্রদের শরীরচর্চার জন্য  খেলাধুলার বিকল্প নেই। শিক্ষার্থীদের খেলার জন্য তাই হাজি মোহাম্মদ মুহসিন হলে রয়েছে একটি বিশাল খেলার মাঠ।ছাত্রদের খেলাধুলার জন্য এই বিশাল মাঠটি তৈরি করা হয়েছে।এখানে শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সুযোগ পায়।  যা আশেপাশের অন্য হলগুলোতে নেই।

নিয়মিত খেলাধুলা করলে ছাত্রদের শরীর ও স্বাস্থ্য ভাল থাকবে। সেদিক বিবেচনায় ইনডোর গেমস খেলার জন্য হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলে রয়েছে একটি গেমসরুম। যেখানে ইনডোর গেমস খেলা যায়।গেমস রুমে দাবা, ক্যারাম,লুডু,টেবিল টেনিস খেলা হয়ে থাকে।

হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলের অন্যান্য সুযোগ সুবিধা 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য হলগুলোর থেকে  হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলের শিক্ষার্থীরা বিশেষ সুযোগ সুবিধা  পেয়ে থাকে। হলের অভ্যন্তরে রয়েছে মনোরম ফুলের বাগান। চারদিকে বাহারি  ফুলের সমারোহে এ এক অন্যরকম পরিবেশ। বাগানে  রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ।হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হলে আগত অতিথিদের জন্য রয়েছে একটি সুন্দর গেস্ট রুম।যেখানে অতিথিরা এসে সময় কাটাতে পারেন।এছাড়াও ছাত্রদের প্রয়োজনীয় সব জিনিসই রয়েছে এক্সটেনশনের দোকানগুলোতে।এখানে শিক্ষার্থীরা নিত্যপ্র‍য়োজনীয় কেনাকাটা করতে পারেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ঐতিহ্যবাহীএকটি  হল,হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল। ছাত্রদের  কথা চিন্তা করে হাজি মুহাম্মদ মুহসিন হল প্রশাসন ছাত্রদের ব্যাপক সুযোগ সুবিধা প্রদান করছে। এখানে ক্যান্টিন,রিডিং রুম,গার্ডেন খেলার মাঠ  সহ ছাত্রদের প্রয়োজনীয় সবকিছু ব্যবস্থা  করা হয়েছে।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরনো হল গুলোর মধ্যে হাজী মুহাম্মদ মহসিন হল একটি। এই হল এর সাথে  জড়িয়ে আছে অনেক স্মৃতি । পাকিস্তানি শাসন আমল থেকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ গণঅভ্যুত্থান প্রত্যেকটি ক্ষেত্রেই হাজী মহসিন হলের অনেক স্মৃতি রয়েছে। 

লেখকের মন্তব্য 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ঐতিহ্যবাহী হল এটি কেননা এই হল থেকেই সারা বাংলাদেশে পদচারণা করছে হাজারো শিক্ষার্থী । এবং এই সকল ছাত্ররাই বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিচ্ছে। হলের মনোরম পরিবেশে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে থাকে । ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনান্য হলের মতো এই হলেও বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন আছে যাদের মাধ্যমে একজন  শিক্ষার্থী তার মানবিক, নেতৃত্ব ও মেধার বিকাশ ঘটাতে পারবে। 


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url