১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্ট্যাটাস ২৫ টি
১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্ট্যাটাস নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আর্টিকেল রাইটিং সংগঠের এই আর্টিকেল সাজিয়েছি। ২৫ টি ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্ট্যাটাস থাকছে আজকের আর্টিকেলে।
আর্টিকেল সূচীপত্র
- ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের ২৫ টি স্ট্যাটাস
- শোক দিবসের আলোচনা
- ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস এর প্রসঙ্গ
- বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পরিচয়
- লেখকের মন্তব্য
১. ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্ট্যাটাস ২৫ টি
- নরহত্যা মহাপাপ, তার চেয়ে পাপ আরও বড় করে যদি যারা তাঁর পুত্রসম বিশ্বাসভাজন জাতির জনক যিনি অতর্কিত তাঁরেই নিধন। নিধন সবংশে হলে সেই পাপ আরও গুরুতর। - অন্নদাশংকর রায়
- ধন্য সেই পুরুষ নদীর সাঁতার পানি থেকে যে উঠে আসে সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে; ধন্য সেই পুরুষ, নীল পাহাড়ের চূড়া থেকে যে নেমে আসে প্রজাপতিময় সবুজ গালিচার মত উপত্যকায়; - শামসুর রাহমান
- একটি কবিতা লেখা হবে তার জন্য অপেক্ষার উত্তেজনা নিয়ে লক্ষ লক্ষ উন্মক্ত অধীর ব্যাকুল বিদ্রোহী শ্রোতা বসে আছে ভোর থেকে জনসমুদ্রের উত্তাম সৈকতে কখন আসবে কবি? সেই কবি তো বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার বিদ্রোহে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্রের জন্ম হয়েছিল- নির্মলেন্দু গুণ
- এখনো রক্তের রং ভোরের আকাশে। যে রক্ত শুধু বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেনি হত্যা করেছে বাংলাদেশের স্বপ্নকে- সৈয়দ শামসুল হক
- এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে, সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে- ৩২ নম্বর থেকে সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে অমল রক্তের ধারা বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে। - রফিক আজাদ
- বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! থেকো নাকো নিরব দর্শক ধিক্কারে মুখর হও। হাত ধুয়ে এড়াও নরক যে হাত দিয়ে তুমি তোমার স্বপ্নকে হত্যা করেছ হত্যা করেছ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে- অন্নদাশঙ্কর রায়
- দিকে দিকে আজ অশ্রু গঙ্গা রক্ত গঙ্গা বহমান নাই নাই ভয়, হবে হবে জয়, জয় মজিবুর রহমান- অন্নদাশঙ্কর রায়
- রং বেরঙের পাখি ওড়াতে ওড়াতে। ধন্য সেই পুরুষ, কাহাতের পর মই দেওয়া ক্ষেত থেকে যে ছুটে আসে ফসলের স্বপ্ন দেখতে দেখতে।- শামসুর রাহমান
- জানি, সেদিনের সব স্মৃতি, মুছে দিতে হয়েছে উদ্যত কালো হাত। তাই দেখি কবিহীন এই বিমুখ প্রান্তরে আজ কবির বিরুদ্ধে কবি, মাঠের বিরুদ্ধে মাঠ, বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল, উদ্যানের বিরুদ্ধে উদ্যান- নির্মলেন্দু গুণ
- বোটা থেকে দেখো আজও অভিভূত রক্ত যায় ঝরে বাঙালির কলমের নিবের ভেতরে। - সৈয়দ শামসুল হক
- স্তব্ধ নয় ইতিহাস! বাংলাও শুধু দামি ১৩ শত নদীর উপরে ওই আজও তো নৌকায় রক্তমাখা জনকের উত্থান বিস্ময়। - সৈয়দ শামসুল হক
- মাঠময় শস্যও তিনি ভালোবাসতেন, আয়ত দুচোখ ছিল পাখির পিয়াসী, পাখি তার খুব প্রিয় ছিল- রফিক আজাদ
- পিতার হৃদয় ছিল, স্নেহের-আদ্র চোখ - এদেশের যা-কিছু তা হোক না নগণ্য, ক্ষুদ্র তার চোখে মূল্যবান ছিল তিনি ছিলেন বাংলার মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান- রফিক আজাদ
- নিজের জীবনই শুধু তার কাছে খুব তুচ্ছ ছিল; স্বদেশের মানচিত্র জুড়ে পড়ে আছে বিশাল শরীর.. - রফিক আজাদ
- তার রক্তে এই মাটি উর্বর হয়েছে সবচেয়ে রুপবান দীর্ঘ মঙ্গল পুরুষ তার ছায়া দীর্ঘ হতে হতে মানচিত্র ঢেকে দ্যায় সস্নেহের আদরে- রফিক আজাদ
- তার রক্তে প্রিয় মাটি উর্বর হয়েছে- তার রক্তে সবকিছু সবুজ হয়েছে। - রফিক আজাদ
- এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে, সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে- স্বপ্নের স্বদেশ বপ্যে সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে অমল রক্তের ধারা বয়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে। পূর্ব-পশ্চিম এমনই - রফিক আজাদ
- আমরা সন্ধ্যায়, হারিয়ে যাওয়া ছায়ারই মতো হয়ে যাচ্ছিলাম, আমাদের দিনগুলি থেকে যা ছিল শোকের পোশাকে, তোমার বিচ্ছেদের সংকটের দিনে... - শামসুর রাহমান
- তোমার বুক ফুঁড়ে অহংকারের মতো ফুটে আছে রক্তজবা, আর আমরা সেই পুষ্পের দিকে চেয়ে থাকি, আমাদের চোখের পলক পড়তে চায় না, অপরাধে নত হয়ে আসে আমাদের দুঃস্বপ্নময় মাথা। - শামসুর রাহমান
- দেখ, একে একে সকলেই যাচ্ছে বিপথে অধঃপাত মোহিনি নর্তকীর মতো জুড়ে দিয়েছে বিবেক-ভোলানো নাচ মনীষার মিনারে - শামসুর রাহমান
- বিশ্বস্ততা চোরা গর্ত খুঁড়ছে সুহৃদের জন্য সত্য খানখান হয়ে যাচ্ছে যখন তখন কুমরের ভাঙ্গা পাত্রের মত- শামসুর রাহমান
- সে কাল রাতে বিশ্বস্ত এক চোর গর্ত খুঁড়ে বঙ্গবন্ধুর বুক ফুঁড়ে দিয়ে বাংলাদেশকে নিস্তব্ধ করে দিয়েছিল।
- আমরা লাল গোলাপের দিকে তাকাতে পারিন, এ অলরাধে চোখ সরে আসে , তোমায় কি জবাব দেবো বলো?
- আমাদের মতোই এক বিশ্বস্ত ঘাতক সেদিন ৩২ নম্বরে বাংলাদেশের বুকে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশকে হত্যা করেছিল, সে স্মৃতি ভোলার নয়।
- এই কালো দিনে বাংলাদেশের সূর্য অস্তমিত হয় পাকিস্তানের দালালদের রক্তাক্ত হাতে। হে মহান নেতা তোমায় গভীর চিত্তে স্মরণ করে জাতি।
২. শোক দিবসের আলোচনা | ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্ট্যাটাস
৩. ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবসের প্রসঙ্গ |১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্ট্যাটাস
৪. বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পরিচয় | ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস স্ট্যাটাস
মুজিব খুন এবং বাঙালি জাতির কলঙ্ক
বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যু কোনো স্বাভাবিক ঘটনা নয়।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের খুন বাঙালি জাতির এক লজ্জার ইতিহাস।
দেশের জন্য আমি যা করেছি
কেউ তা অনুধাবন করলো না।
-বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
প্রকৃতপক্ষেই বঙ্গবন্ধুর অবদান অনেকই অনুধাবন করতে পারেনি বলে মনে হয়। পারলে হয়তো বঙ্গবন্ধুকে খুন করা সহজ হত না। স্বাধীনতা আন্দোলনের অতি প্রিয় নাম 'বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান'।যে নামের স্পর্শে অনেক অসম্ভবও সম্ভব হয়ে যেতো।বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ কোটি বাঙালিকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সারাজীবন সাধারণ জনগনের অধিকার আদায়ের কথা ভেবেছেন।তাঁকেই খুন হতে হলো এদেশের কিছু মানুষের হাতে।বঙ্গবন্ধুর খুন বাঙালি জাতির এক কলঙ্কময় অধ্যায়।১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট সপরিবারে এদেশেরই কিছু বিপথগামী সৈন্যের হাতে খুন হন বঙ্গবন্ধু।খুনিরা এদেশেরই সামরিক বাহিনির সদস্য ছিল।
এরাই খুনি
১৫ আগষ্টের কালো রাতে বঙ্গবন্ধু খুনের এ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অনুমান করা হয় ডজন খানেক সামরিক অফিসার এবং ১৭০ থেকে ৭০০ জন সাধারণ সৈনিক ছিলো।এর মধ্যে প্রধান যে সামরিক অফিসারগণ বঙ্গবন্ধুর খুনের সাথে সরাসরি জড়িত ছিল তারা হলো - কর্নেল ফারুক,কর্নেল খন্দকার আবদুর রশিদ, কে. এম. মহিউদ্দিন আহমেদ, লে.কর্নেল শরীফুল হক ডালিম, মেজর বজলুল হুদা, আজিজ পাশা, লে.আবদুল মাজেদ, মেজর সুলতান শাহরিয়ার রশীদ, মেজর রাশেদ চৌধুরী, মেজর নূর চৌধুরী, মেজর শরীফুল হোসেন, কিসমত হাসেম, লে.খায়রুজ্জামান, লে.নাজমুল হোসেন।
খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে দেশে ফিরে আসেন।এসেই পিতার খুনিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।প্রায় ২০ বছর পর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিরুদ্ধে মামলা হয়।১৯৯৬ সালে ২০জন খুনিকে আসামি করে মামলা দায়ের করে বঙ্গবন্ধুর আবাসিক সহকারী মুহিতুল ইসলাম।এরপর মামলা চলে প্রায় তেরো বছর।বিচারিক আদালতে ১৫ জন খুনিকে মৃত্যুদন্ড দেয়া হয়।পরে হাইকোর্ট ১২ জন খুনির বিরুদ্ধে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে।এর মধ্যে ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি গভীর রাতে একইসাথে বঙ্গবন্ধুর ৫ জন খুনির ফাঁসি কার্যকর হয়।খুনিরা হলো-মেজর. ফারুক,মেজর. সুলতান শাহরিয়ার রশিদ,এ কে এম মহিউদ্দিন, মেজর বজলুল হুদা এবং লে. কর্নেল মহিউদ্দিন। তখন ৭ জন খুনি পলাতক ছিল।পলাতক ৭ জন খুনির মধ্যে ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর হয়।পলাতক খুনিদের মধ্যে আজিজ পাশার মৃত্যু হয়েছে, বাকি ৫ জন খুনিকে গ্রেপ্তারের জন্য ইন্টারপোলের পরোয়ানা রয়েছে।
এর মধ্যে অন্যতম যেসব সামরিক অফিসার বঙ্গবন্ধু খুনে প্রধান ভূমিকা রেখেছে তাদের সম্পর্কে আজ আমরা জানতে পারবো।
কে এই খুনি মেজর.ফারুক?
পুরো নাম সৈয়দ ফারুক রহমান।ময়মনসিংহ জেলার জামালপুরে তার মাতুলালয়।পিতা ড.রহমান।জেনারেল স্টাফ প্রধান ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ তার মামা।১৯৭২ সালে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি এস.এইচ.খানের মেয়ে ফরিদার সাথে ফারুকের বিবাহ হয়।বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করার পর সে লেফটেন্যান্ট কর্নেল পদে উন্নীত হয়।১৯৮০ সালে ফারুক সেনাবাহিনী থেকে অপসৃত হয় এবং অবসরে যায়।১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান খুন হওয়ার পর ফারুক বাংলাদেশ ফ্রিডম পার্টি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে।ফারুক ১৯৮৬ সালে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।২০১০ সালে সুপ্রিম কোর্ট যে পাঁচজন সামরিক অফিসারকে বঙ্গবন্ধুকে খুন করার দায়ে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করে তার মধ্যে মেজর. ফারুক অন্যতম খুনি।২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি রাত ১২টায় বঙ্গবন্ধু খুনের অন্যতম এই আসামির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়।
বঙ্গবন্ধুকে খুনের দৃঢ় পরিকল্পনা ফারুকের
"আমি ১৫ তারিখে তা ঘটাতে যাচ্ছি;
মুজিবকে আমি চিরতরে সরিয়ে দিচ্ছি।"
_মেজর.ফারুক রহমান।
বঙ্গবন্ধুকে খুন করার পরিকল্পনা বহু আগে থেকেই করছিল মেজর ফারুক।বঙ্গবন্ধুকে খুন করার জন্য তীক্ষ্ণ বুদ্ধি এবং উদ্দীপ্ত শক্তি কাজে লাগিয়েছিল সে।সেনাবাহিনীর প্রতি বঙ্গবন্ধুর আচরণ তার পছন্দ ছিল না।বহুদিনের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটান ১৫ ই আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে খুন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে।
মনে করা হয় বঙ্গবন্ধুর খুনের পরিকল্পনা গ্রহণ করার পর সময় ঠিক করার জন্য তিনি চট্টগ্রামের এক পীর আন্ধা হাফিজের স্মরনাপন্ন হয়েছিলো।আন্ধা হাফিজের দেখানো তারিখেই তিনি বঙ্গবন্ধুকে খুন করেন। বঙ্গবন্ধুকে খুন করার আগেরদিন ফারুক স্বীয় স্ত্রী ফরিদাকে চট্টগ্রামে আন্ধা হাফিজের কাছে পাঠিয়েছিল।ফরিদা আন্ধা হাফিজের দেয়া আদেশ টেলিফোনর মাধ্যমে ফারুকের কাছে প্রেরণ করে।
বঙ্গবন্ধু খুনে ফারুকের চূড়ান্ত প্রস্তুতি
৩রা জুলাই ১৯৭৫ থেকে মেজর ফারুক তার খুন করার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিচ্ছিলো।তার সামনে লক্ষ্য ছিল একটাই মুজিবকে খুন করা। ৩য় বিবাহবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে তার ভায়রা মেজর রশিদকে ১৫ আগষ্ট পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা জানান।এবং এ ও বলে যদি তাকে সঙ্গ না দেয় তবুও সে বঙ্গবন্ধুকে খুনের পরিকল্পনায় অটল থাকবে।
১লা সেপ্টেম্বর 'বাকশাল' পদ্ধতি কার্যকর করার কথা ছিল।তার আগেই ফারুক বঙ্গবন্ধুকে খুনের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করতে চাইছিলো। বঙ্গবন্ধুকে খুন করার পরিকল্পনায় তার প্রধান সঙ্গী ছিল ভায়রা মেজর.রশিদ।১৫ই আগষ্ট ফারুক বঙ্গবন্ধুকে খুনের অপারেশনের সর্বময় নেতৃত্ব দেয়।অপারেশনের আগে ফারুক সৈন্যদেরকে বঙ্গবন্ধুকে খুনের কারণ এবং প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করে এবং সবাই রাজী কিনা জানতে চাইলে সকলেই সম্মতি দেয়।
১৫ আগষ্ট ছিল শুক্রবার।ফারুকের জন্য শুক্রবার ছিল সবসময় সুপ্রসন্ন।এরকম এক শুক্রবারেই ফারুকের জন্ম হয়েছিল এবং আরেক শুক্রবারে ফরিদার সাথে বিয়ে হয়েছিল।ফজরের আজান দেয়ার সময় ফারুক তার ফাঁকা ট্যাংকবহর নিয়ে রাস্তায় বের হয়। উদ্দেশ্য ছিল ফাঁকা ট্যাংক দিয়ে রক্ষীদের ধোঁকা দেয়া।এবং ফারুক তা করতে পেরেছিল।
ফারুক এভাবে নির্দেশ দিয়েছিল যে সবাই ব্যর্থ হলেও তার ল্যান্সার এ খুনের ব্যাপারে ব্যর্থ হতো না।ফারুকের নির্দেশ ছিল প্রধানত শেখ মুজিব,আবদুর রব সেরনিয়াবাত এবং শেখ মনিকে খুন করার এবং যদি কেউ বাধা দিতে আসে তাহলে তাকেও খুন করার আদেশ দেয়া হয়েছিল।এ কথার প্রেক্ষিতেই শেখ কামাল এবং শেখ জামালকে গ্রেপ্তার করার কথা থাকলেও তাদেরকে খুন করা হয়।এবং বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব তার দুই পুত্রবধূ সুলতানা কামাল, পারভিন জামাল রোজি এবং ছোট রাসেলকেও নির্মমভাবে খুন করা হয়।
অবশেষে ফারুকের নেতৃত্বেই বাঙালি জাতির মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পুরো পরিবার খুন হয় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট ভোরবেলায়।খুনিদের বুলেটে ঝাঝড়া হয় বাঙালির মহান নেতার শরীর।
মেজর.রশিদ
পুরো নাম খন্দকার আবদুর রশিদ।১৯৪৬ সালে কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার ছয়ফরিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করে।তার পিতা প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক ছিল।তিনি খন্দকার মোশতাক আহম্মদের দূর সম্পর্কের আত্মীয় ছিল।রশিদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অসমাপ্ত রেখেই ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনিতে যোগ দেয়।পাঞ্জাবের রিসালপুর মিলিটারি একাডেমিতে ট্রেনিং এর সময় সখ্যতা গড়ে উঠে মেজর ফারুকের সাথে। ফারুক তার সিনিয়র ছিল।১৯৬৮ সালে চট্টগ্রামের বিশিষ্ট শিল্পপতি এস. এইচ. খানের বড় মেয়ে টিংকুর সাথে তার বিবাহ হয়।মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে তিনি জিয়াউর রহমানের 'জেড' ফোর্সে যোগ দেন।১৯৭২ সালে মেজর.ফারুকের সাথে তার আবারও দেখা হয়।বঙ্গবন্ধু খুনের মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে রশিদ একজন।বঙ্গবন্ধুর এই খুনি এখনও পলাতক রয়েছে।
রশিদের পরিকল্পনা
মেজর রশিদ বঙ্গবন্ধু খুনের পরিকল্পনায় তার তীক্ষ্ণ বুদ্ধি কাজে লাগিয়েছিল।ফারুকের সাথে বঙ্গবন্ধু খুনের পরিকল্পনা ঠিক করার পর রশিদই অন্যসব প্রাক্তন সামরিক অফিসারদের দলে ভেরানোর কথা মনে করে। তার উদ্দেশ্য ছিল বঙ্গবন্ধুর খুনের পর তার উত্তরসূরী ঠিক করা।যাতে পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু খুনের কারণে উদ্ভব বিভিন্ন সমস্যা সামলানো সহজ হয়।ভেবে চিন্তে তিনি মোশতাককে বঙ্গবন্ধুর যোগ্য উত্তরসূরি ঠিক করে। এছাড়া রশিদ এটাও বুঝতে পেরেছিল যে খন্দকার মোশতাককে তারা পুতুলের মতো ব্যবহার করতে পারবে।
বুদ্ধি কাজে লাগিয়ে রশিদ ২রা আগষ্ট খন্দকার মোশতাকের সাথে দেখা করে বঙ্গবন্ধুকে খুন করার পরিকল্পনা কিছুটা জানায়। এবং তাতে মোশতাক মৌন সম্মতি জ্ঞাপন করে।এরপর রশিদ এমন আর্মি অফিসারদের খুঁজছিল যাদের আক্রোশ রয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের প্রতি।এবং যারা বঙ্গবন্ধুকে খুন করতে দুবার ভাববে না। রশিদ আগষ্টের ১৩ তারিখ অবসরপ্রাপ্ত মেজর ডালিমের সাথে দেখা করে এবং খুনের পরিকল্পনা জানায়।ডালিম তার বন্ধু প্রাক্তন মেজর নূরকে জানানোর অভিপ্রায় ব্যক্ত করে। নূরেরও বঙ্গবন্ধুর প্রতি ব্যক্তিগত আক্রোস ছিল।ওই দিনই নূরকে নিয়ে ডালিম রশিদের বাসায় দেখা করে। এবং নূরকে বঙ্গবন্ধুকে খুনের পরিকল্পনা বিস্তারিত জানানো হয়।তখন নূর খন্দকার মোশতাকের সম্মতি সম্পর্কে সন্দেহ পোষণ করে।তাই রশিদ তাকে পরদিন খন্দকার মোশতাকের সাথে দেখা করানোর কথা বলে। ওইদিন দেখা করতে যাওয়ার সময় নূর অফিসার সুলতান শাহরিয়ার রশিদকে নিয়ে আসে।রশিদ ঝামেলায় না জড়িয়ে তাকে বঙ্গবন্ধু খুনের ষড়যন্ত্রে যুক্ত করে।
সেনা অভ্যুত্থানের দিন রশিদের মূল কাজ ছিল রাজনৈতিক ব্যাপারগুলো সামলানোর।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে খুন করার পরই খন্দকার মোশতাককে রেডিও স্টেশনে নিয়ে এসে মুজিব হত্যার ঘোষনা দেয়া।এবং খন্দকার মোশতাককে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করা ছিল রশিদের দায়িত্ব। এছাড়া বঙ্গবন্ধুকে খুন করার পর ব্রিগেড হেড কোয়ার্টারের উচ্চ পদস্থ সামরিক অফিসারদের সমর্থন আদায় করাও রশিদের উদ্দেশ্য ছিল।
মেজর. বজলুল হুদা
মেহেরপুর জেলার গাংনী উপজেলায় বজলুল হুদার জন্ম।১৯৭৩ সালে প্রথম ফিল্ড আর্টিলারি রেজিমেন্টে মেজর হুদার পোস্ট হয়েছিল।খুব শীগ্রই হুদা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে কমিশন পেয়েছিল। তবে ১৯৭৫ সালে উচ্ছৃঙ্খলতার অভিযোগে মেজর.হুদা কমিশন হারিয়েছিল। বজলুল হুদা ১৯৭৫ সালের ১৪ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু খুনের মূল পরিকল্পনার ষড়যন্ত্রকারীদের সাথে বৈঠক করেছিল।১৫ আগষ্ট হুদাও বঙ্গবন্ধুর বাসায় আক্রমণকারী খুনি সৈন্যদের একজন ছিল।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় এইচ. এম.বি.নূর চৌধুরীর সাথে বজলুল হুদাও গুলি করে।অর্থাৎ, বজলুল হুদার গুলিতে খুন হয় বঙ্গবন্ধু।খুন করার পরপরই ফারুক তাকে ওই বাড়িতেই মেজর পদোন্নতি দিয়েছিল।
পরবর্তীতে বজলুল হুদাও ফ্রিডম পার্টির সদস্য ছিল এবং ১৯৮৮ সালে মেহেরপুর-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়।২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু খুনের অন্যতম আসামি বজলুল হুদার ফাঁসি কার্যকর হয়।
কর্নেল ডালিম
পুরো নাম লে.কর্নেল শরিফুল হক ডালিম।১৯৪৬ সালে ডালিম জন্মগ্রহণ করে। কর্নেল ডালিমের স্ত্রীর নাম নিম্মি ডালিম।ডালিম প্রথমে ১৯৬৪ সালে পাকিস্তান বিমানবাহিনিতে যোগ দেন।১৯৬৫ সালে তিনি সেনাবাহিনিতে যোগ দেন। পাকিস্তান সেনাবাহিনিতে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল পাকিস্তান থেকে পালিয়ে ভারতে আসেন এবং মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। মুক্তিযুদ্ধে বীর উত্তম খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা এই কর্নেল ডালিম।১৯৭৫ সালে পূনরায় সেনাবাহিনিতে নিয়োগ হন।১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে খুন করার সাথে জড়িত ছিলেন।শেখ মুজিব খুন হওয়ার পর নিজেই তা বাংলাদেশ বেতারে স্বীকার করে।'৭৫ পরবর্তী বিভিন্ন সরকার তাকে বিভিন্ন বাংলাদেশি দূতাবাসে নিয়োগ দিয়েছে।গণচীন, লন্ডন,হংকং,কেনিয়া, তানজানিয়াসহ বিভিন্ন দেশে শরিফুল হক ডালিম দায়িত্ব পালন করেছে।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব খুনের মামলায় মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত খুনিদের একজন। বঙ্গবন্ধুর এই খুনি এখনও পলাতক রয়েছে।
১৩ আগষ্ট ১৯৭৫ সালে শরিফুল হক ডালিম রশিদের বাড়িতে দেখা করে।এবং রশিদ তাকে বঙ্গবন্ধুকে খুন করার ষড়যন্ত্রে সামিল করে। ডালিম এই খুনের কথা মেজর নূর চৌধুরীকে জানানোর ইচ্ছা পোষন করে। ওইদিনই তার বন্ধু প্রাক্তন মেজর নূরকে রাত ১টায় রশিদের বাসায় নিয়ে আসে।এবং বঙ্গবন্ধুকে খুন করার ষড়যন্ত্র বিস্তারিত আলোচনা করে।১৫ আগষ্ট ডালিমের দায়িত্ব ছিল আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাড়িতে সর্বাত্মক হামলা চালিয়ে তাকে খুন করার।সে এই খুনের দায়িত্ব নিষ্ঠুরভাবে পালন করে।
ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ
আবদুল মাজেদের জন্ম ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলার বাটামারায়।তার পিতা আলী মিয়া চৌধুরী। আবদুল মাজেদ বাংলাদেশ সেনাবাহিনিতে ক্যাপ্টেন ছিল।১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট শেখ মুজিবুর রহমানের শ্যালক আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা ও খুন করা দলের সদস্য ছিল আবদুল মাজেদ।জাতীয় চার নেতার খুনের সাথেও জড়িত ছিলেন।
পরে জিয়াউর রহমান তাকে সেনেগাল দূতাবাসে বদলি করে।১৯৮০ সালে দেশে ফিরে এসে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ পরিবহন করপোরেশনে যোগ দেন।পরে সচিব,যুব উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের পরিচালক এবং জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের পরিচালক পদে কাজ করেছে।১৯৯৭ সালে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর এই খুনি আবদুল মাজেদ আত্মগোপন করেন। অনেকদিন বিভিন্ন দেশে পলাতক থাকার পর ২০২০ সালের ১২ এপ্রিল রাত ১২টা ১ মিনিটে বঙ্গবন্ধুর এই খুনির মৃত্যুদন্ড কার্যকর হয়।