OrdinaryITPostAd

শিক্ষাক্ষেত্রে আসছে ব্যাপক পরিবর্তন

শীঘ্রই নতুন পাঠ্যক্রমের সাথে পরিচিত হতে চলেছে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা। প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে বেরিয়ে শিক্ষার্থীদের আধুনিক ও বাস্তবসম্মত শিক্ষার সাথে পরিচিত করিয়ে দিতেই যুগান্তকারী এই সিদ্ধান্তে সরকার। গতানুগতিক ধারার শিক্ষার একঘেয়েমি দূর করে শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দ ঘন শিক্ষাঙ্গন তৈরি করাই এর মূল লক্ষ্য। 



চুড়ান্ত হল সিদ্ধান্ত 

১৩ সেপ্টেম্বর, রোজ সোমবার দুপুরে অনুষ্ঠিত মন্ত্রীসভার বৈঠকে শিক্ষা ব্যবস্থা ও পাঠ্যক্রম পরিবর্তন ও পরিমার্জন প্রসঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা সম্পন্ন হয়। আলোচনায় শিক্ষাকে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে পরিমার্জনের গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে। বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাপক প্রসারের দরুন আইটি ভিত্তিক ও দক্ষতামূলক শিক্ষা প্রয়োজনীয় হয়ে উঠছে। এরই অংশ হিসেবে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রকল্পে সরকারের নেয়া পদক্ষেপ বাস্তবায়নে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিমার্জন এখন সময়ের দাবি। তাই শিক্ষার্থীদের জীবনের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাকে বিবেচনায় নিয়ে পাঠ্যক্রম তথা সম্পূর্ণ শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত চুড়ান্ত হয়েছে। সিদ্ধান্তটি আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

কোন কোন খাতে আসছে পরিবর্তন? 

নতুন প্রস্তাবিত শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবমুখী করার পরিকল্পনা করছে সরকার। ফলে গতানুগতিক ধারার পরীক্ষা পদ্ধতির পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হয়েছে। নতুন পাঠ্যক্রমে প্রথম থেকে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত থাকছে না কোন পরীক্ষা। এছাড়া পাবলিক পরীক্ষার ভারও কমে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের কাধ থেকে। পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পিইসি ও জেএসসি বাতিল করা হচ্ছে ২০২৩ সাল থেকে। ২০২৫ সাল থেকে এ সিদ্ধান্ত পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য সরকার সবধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

এছাড়া এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় পদ্ধতিগত পরিবর্তন আসছে। নবম ও দশম শ্রেনিতে পৃথক পৃথক পরীক্ষা গ্রহণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার আনুষ্ঠানিকতা হবে দুইবার। একাদশে  দ্বাদশ শ্রেণির প্রনীত সিলেবাসের ওপর নেয়া হবে বলে জানান শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। এসএসসি লেভেলে বিভাগ বিভাজন থাকছে না। একাদশ শ্রেনিতে একজন শিক্ষার্থীকে নিজ দক্ষতা ও জীবনের লক্ষ্য অনুযায়ী বিভাগ বেঁছে নেওয়ার সুযোগ দেয়া হবে।

নতুন শিক্ষানীতির রূপরেখা বাস্তবায়ন 

২০২৩ সালে পরীক্ষামূলক ভাবে নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নের কার্যক্রম শুরু হবে। প্রাথমিক ভাবে ১ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নতুন পাঠ্যক্রমে অভ্যস্ত করা হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য শ্রেনীগুলোকে এর আওতায় আনা হবে। ফলে ২০২৩ সাল থেকে বাতিল হয়ে যাচ্ছে পিইসি ও জেএসসি সমমান পরীক্ষা। ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থীরা নতুন শিক্ষানীতিতে অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া ২০২৬ ও ২০২৭ সালে এইচএসসি ১ম ও২য় পর্বের পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে নতুন পাঠ্যক্রম অনু্যায়ী। 



পরিবর্তন হবে নম্বর ও বিষয় বিভাজন

নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়িত হলে নম্বর বন্টনে আসবে পরিবর্তন। চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেনির ৬০ শতাংশ নম্বর দেবেন শিক্ষকরা। বাকি ৪০ শতাংশ নম্বরের জন্য ৫ টি আবশ্যিক বিষয়ে (বাংলা, ইংরেজি, গনিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান) পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের ৬০ ভাগ নম্বর আসবে নিজ প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের থেকে। বাকি ৪০ ভাগ সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। অন্যান্য বিষয়গুলো শিক্ষার্থীর সারাবছরের উন্নতি অনুযায়ী শিক্ষকরা নিজেরাই মূল্যায়ন করবেন। 

এছাড়া এসএসসি পরীক্ষার মোট ১০০ নম্বরের ৫০ নম্বর মূল্যায়ন হবে নিজ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দ্বারা। বাকি ৫০ নম্বরের জন্য পাবলিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। তবে পরীক্ষার বিষয় সংখ্যা নেমে আসবে চলমান পদ্ধতির অর্ধেক এ। ফলে এসএসসির আগে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের দিতে হচ্ছে না কোন পাবলিক পরীক্ষা।

একইভাবে এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের জন্য একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেনীতে দুটি পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হবে। সেক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মূল্যায়নের দায়িত্ব পালন করবে স্ব স্ব কলেজ কর্তৃপক্ষ। বাকি ৭০ ভাগ পাবলিক পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। একাদশ ও দ্বাদশ এর দুটি পাবলিক পরীক্ষার ফলাফলের সমন্বয়ে চুড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হবে। 

পাঠ্য বিষয় থাকছে যেগুলো

প্রাক প্রাথমিকের শিশুদের জন্য থাকছে না কোন পাঠ্যবই। শিক্ষকদের জন্য আলাদা শিক্ষা নীতিমালা বা 'শিক্ষাগাইড' প্রদান করা হবে। প্রাথমিকে আটটি পাঠ্য বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এগুলো হল- বাংলা, ইংরেজি, গনিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান, ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। তবে ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ে থাকছে না কোন পাঠ্যবই। 

৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির কারিকুলাম অনু্যায়ী প্রতিটি শিক্ষার্থীকে পড়তে হবে ১০ টি অভিন্ন পাঠ্যবই। এর মধ্যে রয়েছে- বাংলা, ইংরেজি, গনিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান,  ধর্মশিক্ষা, ভালো থাকা, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি এবং শিল্প ও সংস্কৃতি। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, গনিত, বিজ্ঞান, সামাজিক বিজ্ঞান বিষয়গুলোতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। বাকিগুলোতে কারিগরি দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর জোর দেয়া হবে। 

শিক্ষাঙ্গনে আসছে পাশ্চাত্যের ছোয়া 

বাংলাদেশের গতানুগতিক পরীক্ষাভিত্তিক শিক্ষাপদ্ধতির পরিবর্তে অধিক দক্ষতা ভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন করা হচ্ছে। ফলে শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবমুখী করার পথ সুগম হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশগুলোতে দক্ষতাকে অধিক মূল্যায়ন করা হয়৷ ব্রিটিশ এ লেভেল এবং ও লেভেল এর আলোকে পরীক্ষা পদ্ধতির পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। এ লেভেল, ও লেভেলের মত প্রতি পাঠ্যক্রমেই দক্ষতা যাচাইয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। নতুন শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিকে বছরে ১৮৫ দিন শ্রেণি  কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হবে যা ব্রিটিশসহ ইউরোপীয় দেশগুলোর পাঠ্যক্রমে প্রায় ১৮১ দিন হয়ে থাকে। 

ক্লাস পাঠদানে আসছে ভিন্নতা

নতুন শিক্ষানীতিতে ক্লাসে পাঠদানের ওপর বিশেষ জোর দেয়া হয়েছে। এরই লক্ষ্যে বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য বাৎসরিক কর্মঘণ্টার খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ে বাৎসরিক ৬৮৪ ঘণ্টা পাঠদানের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেনীতে ৮৫৫ ঘণ্টা, ৬ষ্ঠ থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ১০৫০ ঘণ্টা, নবম ও দশম শ্রেণিতে ১১১৭ ঘণ্টা ৩০ মিনিট বাৎসরিক পাঠদানের সময় নির্ধাবণ করা হয়েছে।

নব্য শিক্ষানীতি নিয়ে বিশেষজ্ঞ অভিমত 

নতুন এ শিক্ষানীতিতে দক্ষতাকে যথাযথ মূল্যায়ণ করায় ইতোমধ্যে এই সিদ্ধান্ত শিক্ষাবিদদের নিকট প্রশংসা পেয়েছে। এতে করে শিক্ষার্থীদের কারিগরি মেধার পরিপূর্ণ বিকাশ ঘটবে বলে আশা বিশ্লেষকদের। তবে নতুন এই শিক্ষাব্যবস্থার সাথে শিক্ষকদের পাঠদানে দক্ষতা বৃদ্ধি ও আধুনিকায়নের ওপর জোর দিতে আহ্বান জানিয়েছেন অভিভাবক ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিবর্গরা।

শেষ কথা 

নব্য প্রস্তাবিত দক্ষতাভিত্তিক ও বাস্তবসম্মত শিক্ষানীতি আগামী প্রজন্মের আধুনিক মনন বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। শিক্ষাব্যবস্থার এই পরিবর্তন নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ ও শিক্ষার্থীবান্ধবও বটে। চিরায়িত বাংলা প্রবাদবাক্য, "ছাত্রজীবন সুখের হইতো যদি না থাকতো পরীক্ষা" – যেন বাস্তবায়নের দ্বারপ্রান্তে সল্প পরীক্ষার আলোকে গড়া এই শিক্ষাব্যবস্থা। এতে করে শিশু শ্রেনিতে কোমলমতি শিশুদের মস্তিষ্কে পরীক্ষা ভীতির অবসান ঘটবে, শিক্ষার্থীরা বেড়ে উঠবে জীবন দক্ষতাকে পুঁজি করে। ফলে এগিয়ে যাবে আমাদের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ। 

মো. এমদাদুর রহমান উদয়

স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইন্সটিটিউট 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় 

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • MD Abdullah Al Mamun
    MD Abdullah Al Mamun September 14, 2021 at 7:29 AM

    অনেক সুন্দর লিখেছো

    • মো. এমদাদুর রহমান উদয়
      মো. এমদাদুর রহমান উদয় September 14, 2021 at 10:45 AM

      ধন্যবাদ বন্ধু...

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url