সাকিবের রেকর্ডের রাতে লজ্জায় ডুবলো অস্ট্রেলিয়া!
অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
টানা তিন জয়ে সিরিজ নিশ্চিত। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে যে কোনো ফরম্যাটে প্রথম সিরিজ জয়। এরপর হঠাৎ ছন্দপতন! ব্যাটিং ব্যর্থতায় চতুর্থ ম্যাচে হোঁচটের পর শেষ ম্যাচে জয় নিশ্চিত করতে প্রত্যয়ী ছিল টিম টাইগার্স!
এবার আর কোন ভুল করেনি মাহমুদউল্লাহ বাহিনী। রীতিমতো ধসিয়ে দিয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। বাংলাদেশের ৮ উইকেটের বিনিময়ে করা ১২২ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে সাকিব-সাইফুদ্দিনদের বোলিং তোপে অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে গেল মাত্র ৬২ রানে!
গত ম্যাচে খরুচে বোলিং এর জন্য সমালোচিত সাকিব আল হাসান এই ম্যাচে দূর্দান্ত বোলিং করেছেন। ৩.৪ ওভারে ১ মেডেনসহ মাত্র ৯ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। দিয়েছেন ১৫টি ডট বল। হয়েছেন "ম্যান দ্যা ম্যাচ"।
এর পাশাপাশি ৫ ম্যাচে ১০০.৮৮ স্ট্রাইক রেটে ১১৪ রান এবং ৭ উইকেট নিয়ে "ম্যান অফ দ্যা সিরিজ"ও নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। এ নিয়ে ১৬ বার আন্তর্জাতিক সিরিজে "ম্যান অফ দ্যা সিরিজ" হলেন সাকিব। আর ২বার সিরিজ সেরা হলেই বিরাট কোহলিকে টপকে ২য় সর্বোচ্চ বার আন্তর্জাতিক সিরিজ সেরা হওয়া খেলোয়াড় হয়ে যাবেন সাকিব আল হাসান। সর্বোচ্চ ১৯বার আন্তর্জাতিক সিরিজে সেরা খেলোয়াড় হয়ে এ তালিকার শীর্ষে আছেন ক্রিকেট ঈশ্বর শচিন টেন্ডুলকার।
নানান শর্ত জুড়ে দিয়েও শেষে এমন লজ্জায় ডুবতে হবে, তা কি ভুলেও ভেবেছিল টিম অস্ট্রেলিয়া?
শেষ ম্যাচে হেরে দুইটি লজ্জার রেকর্ড গড়েছে অস্ট্রেলিয়া। টি-টোয়েন্টির ইতিহাসে নিজেদের দলীয় সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড করেছে অস্ট্রেলিয়া। এর পাশাপাশি শুধু টি-টোয়েন্টিই নয়; যে কোনো ফরম্যাটে নিজেদের ইতিহাসে সবচেয়ে দ্রুত সময়ে (১৩.৪ ওভার) অলআউট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া। এর আগে কম সময়ে তাদের অল-আউটের রেকর্ডটি ছিল ১৪.৩ ওভারের।
টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে উড়ন্ত সূচনা করেন দুই ওপেনার মেহেদি হাসান ও নাঈম শেখ। ৪.৩ ওভারে দলীয় ৪২ রানে সাজঘরে ফেরেন ব্যাটিংয়ে প্রমোশন নিয়ে ওপেন করা মেহেদি হাসান। সাজঘরে ফেরার আগে ১২ বলে ১৩ রান করেন এ অলরাউন্ডার। দলীয় ৫৭ রানে ফেরেন অন্য ওপেনার মোহাম্মদ নাঈমও। ২৩ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ২৩ রান করে ফেরেন তিনি।
নাঈম আউট হওয়ার পর মাত্র ৩ রান ব্যবধানে অ্যাডাম জাম্পার বলে এলবিডব্লিউ সাকিব আল হাসান। ২০ বলে ১১ রান করার সুযোগ পান এ অলরাউন্ডার। সাকিব আউট হওয়ার পর দলীয় ৮৪ রানে ফেরেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। সাজঘরে ফেরার আগে ১৪ বলে এক ছক্কায় করেন ১৯ রান।
রিয়াদ আউট হওয়ার পর ৩৪ রানের ব্যবধানে ফেরেন সৌম্য সরকার, নুরুল হাসান সোহান, আফিফ হোসেন ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন।
টাইগার ব্যাটসম্যানরা আসা-যাওয়ার মিছিলে অংশ নেয়ায় সম্মানজনক স্কোর গড়া সম্ভব হয়নি। ৮ উইকেট হারিয়ে ১২২ রান করে স্বাগতিকরা।
অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নাথান এলিস ও ডেন ক্রিস্টিয়ান দুটি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট শিকার করেন অ্যাস্টন টার্নার, অ্যাস্টন অ্যাগার ও অ্যাডাম জাম্পা।
টাইগার বোলারদের ক্ষুরধার আক্রমণ
২য় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে, ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। নিজের প্রথম ওভারের প্রথম বলে দলীয় ৩ রানে ড্যান ক্রিস্টিয়ানকে আউট করে অসিদের ওপেনিং জুটি ভাঙেন নাসুম আহমেদ।
৩.৫ ওভারে দলীয় ১৭ রানে নাসুমের দ্বিতীয় শিকার হন মিচেল মার্শ। সিরিজের আগের চার ম্যাচে ৪৫, ৪৫, ৫১ ও ১১ রান করা এ তারকা ব্যাটসম্যানকে এদিন ৪ রানের বেশি করতে দেননি নাসুম।
নাসুম আহমেদ এর পর সাকিব আল হাসান, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিনের আঘাত। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে যায় অস্ট্রেলিয়া।
পরের গল্পটা শুধুই বাংলাদেশের
এরপরের গল্পের পুরোটাই বাংলাদেশী বোলারদের। সাকিব ম্যাজিকে অস্ট্রেলিয়া দ্রুত অলআউট হয়ে যাওয়ায় সিরিজ জুড়ে দুর্দান্ত বল করা মুস্তাফিজ এদিন বেশি কিছু করে দেখানোর সুযোগ পাননি। ডেথ ওভারের জন্য তাকে রেখে দেওয়ায় মাত্র ১ ওভার বোলিং করেন মুস্তাফিজ।
সাকিব নেন ৪টি উইকেট। এছাড়া, সাইফুদ্দিন ৩টি, নাসুম আহমেদ ২টি এবং মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১টি উইকেট নেন। টাইগার বোলারদের আগ্রাসী আক্রমণে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে নিজেদের দলীয় সর্বনিম্ন ৬২ রানে অলআউট হয়ে ৬০ রানে হারে অস্ট্রেলিয়া। এর ফলে প্রথমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কোনো সিরিজ জয়ের কৃতিত্ব অর্জন করলো টাইগাররা।
স্কোর : বাংলাদেশ ৬০ রানে জয়ী।
বাংলাদেশ - ১২২/৮
(নাঈম ২৩, মাহমুদুল্লাহ ১৯, সৌম্য ১৬ ; নাথান এলিস- ২/১৬)
অস্ট্রেলিয়া - ৬২/১০
(ম্যাথু ওয়েড ২২ ; সাকিব- ৪/৯ , সাইফুদ্দিন- ৩/১২, নাসুম- ২/৮)
ম্যান অফ দ্যা ম্যাচ : সাকিব আল হাসান
ম্যান অফ দ্যা সিরিজ : সাকিব আল হাসান
ফলাফল: বাংলাদেশ ৪-১ এ সিরিজ জয়ী।
- মাকসুদুল হাসান রাব্বি
ইসলামিক স্টাডিজ,
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
Desk report r moto sundor hoise
Thank you. 💙