OrdinaryITPostAd

ঢাকার প্রথম গভর্নর,সুবাদার ইসলাম খাঁ

 বাংলার রাজধানীর প্রথম গভর্নর ইসলাম খাঁ

বাংলার রাজধানী ঢাকার প্রথম গভর্নর,সুবাদার ইসলাম খাঁ।ইসলাম খাঁর আসল নাম শেখ আলাউদ্দিন চিশতি।ইসলাম খাঁ প্রাথমিক জীবনে মোঘল সাম্রাজ্যের সেনাপতি ছিলেন।মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর শেখ আলাউদ্দিন চিশতিকে ইসলাম খাঁ উপাধি প্রদান করেন।সুবাদার ইসলাম খাঁর আমলেই ঢাকা প্রথম বাংলার রাজধানী হয়।ইসলাম খাঁ-ই প্রথম বারো ভূঁইয়াদের পুরোপুরি দমন করে বাংলায় পূর্ণরূপে মোঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করতে পেরেছিল।



ইসলাম খাঁর জন্মপরিচয় 

ইসলাম খাঁ ১৫৭০ সালে জন্মগ্রহণ করেন।ইসলাম খাঁর পিতার নাম শেখ বদরউদ্দিন চিশতি।ফতেহপুর সিক্রির দরবেশ শেখ সেলিম চিশতির পৌত্র ইসলাম খাঁ।এই ফতেহপুর সিক্রি প্রায় ১০ বছর মোঘলদের রাজধানী ছিল।ষোড়শ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে এটি মোঘলদের রাজধানীর মর্যাদা লাভ করে।ছোটবেলায় ইসলাম খাঁর খেলার সাথী ছিলেন সম্রাট জাহাঙ্গীর।ইসলাম খাঁ মোঘল ঐতিহ্যের উপর আনুষ্ঠানিক শিক্ষা লাভ করেছিল।তবে ইসলাম খাঁ কোনো সামরিক প্রশিক্ষণ পায়নি।বড় হয়ে ইসলাম খাঁ মোঘল সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন।১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর সিংহাসন আরোহন করার পর,ইসলাম খাঁকে দুই হাজার মনসবদারীতে উন্নীত করে। সম্রাট জাহাঙ্গীর-ই শেখ আলাউদ্দিন চিশতিকে ইসলাম খাঁ উপাধি প্রদান করে।পরবর্তীতে ইসলাম খাঁ নামেই তিনি সর্বত্র পরিচিতি লাভ করেন।


ইসলাম খাঁর কর্মজীবন 

ইসলাম খাঁ প্রথম জীবনে বিহার প্রদেশের সুবাদার ছিলেন।পরবর্তীতে বাংলার সুবাদারী লাভ করেন নিজ কর্মবলে।মোঘল শাসনামলে সুবা বা প্রদেশের প্রধান ছিলেন সুবাদার।  মোঘল সম্রাট আকবরের আমলে বাংলা প্রদেশ নামেমাত্র মোঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিল।সম্রাট আকবর বাংলা অঞ্চলে বারো ভূঁইয়াদের প্রতিরোধ করে নিজের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য বহুবার অভিযান প্রেরণ করলেও বারবার ব্যর্থ হন।বাংলায় বারো ভূঁইয়াদের দমন করে মোঘল শাসন প্রতিষ্ঠার কৃতিত্ব সম্রাট জাহাঙ্গীরের।তার নির্দেশে সুবাদার ইসলাম খাঁ এই কাজ সম্পন্ন করেন।১৬০৮ সালে বাংলা বিজয়ের লক্ষ্যে ইসলাম খাঁকে প্রেরণ করা হয়।তখন ইসলাম খাঁর বয়স ৩৮ বছর।ইসলাম খাঁ প্রখর বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ ছিলেন।ইসলাম খাঁর কর্মজীবনের প্রধান কীর্তি ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপন করে সেখানে সফলভাবে শাসনকার্য পরিচালনা করা।


ইসলাম খাঁ কর্তৃক বারো ভূঁইয়াদের দমন

ইসলাম খাঁ প্রথমেই বাংলার নদীমাতৃক অঞ্চলের কথা ভেবে শক্তিশালী নৌবহর তৈরি করেন।ইসলাম খাঁ জল এবং স্থল উভয় পথে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন।বারো ভূঁইয়াদের দমনের লক্ষ্যে ইসলাম খাঁ রাজমহল থেকে ঢাকায় রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেন।বারো ভূইয়াদের ঐক্য নষ্ট করার জন্য ইসলাম খাঁ কূটনীতির সাহায্য নিয়েছিল। ইসলাম খাঁ রাজমহল থেকে ঘোড়াঘাট(বর্তমান রংপুর) পৌঁছালে যশোরের জমিদার প্রতাপাদিত্য স্বেচ্ছায় তার বশ্যতা স্বীকার করেন।বিষ্ণপুর, বীরভূম, হিজলী এবং ভূষণার জমিদারগণও মোঘল আনুগত্য মেনে নেয়।

১৬০৯ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবর মাসে ইসলাম খাঁ তাঁর সৈন্যদের নিয়ে যাত্রাপুরে বারো ভূঁইয়াদের আক্রমণ করেন।তুমুল আক্রমণের স্বীকার হয়ে বারো ভূঁইয়ারা ডাকচরা দূর্গে আশ্রয় নেয়।প্রায় একমাস সংঘর্ষ ও গোলাগুলির পর ইসলাম খাঁর সৈন্যরা ১৬১০ সালের ১৫ জুলাই ডাকচরা দূর্গে প্রবেশ করতে সক্ষম হয়।সেখানে তাদের পরাজিত করে ইসলাম খাঁ ঢাকার দিকে অগ্রসর হন।এবং মহাসমারোহে শহরে প্রবেশ করেন। ইসলাম খাঁ ১৬১০ সালে ঢাকায় বাংলার রাজধানী স্থাপন করেন।ইসলাম খাঁ এর নাম দেন জাহাঙ্গীরনগর।এসময় ইসলাম খাঁ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সৈন্য ও নৌবহর রাখার ব্যবস্থা করেন।


ইসলাম খাঁর নিকট মুসা খানের আত্মসমর্পণ 

১৬১১ সালের ১২ মার্চ ইসলাম খাঁর সৈন্যদের সাথে বারো ভূঁইয়াদের আবারো সংঘর্ষ হয় এবং সেখানেও বারো ভূঁইয়ারা পরাজিত হন। এসময় বারো ভূঁইয়াদের বেশকিছু দূর্গ মোঘল সৈনয়দের হস্তগত হয়। এরপর ইসলাম খাঁ সোনারগাঁও দখল করে।এসময় বারো ভূঁইয়াদের মধ্যে অনেকেই ইসলাম খাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করেন।ইসলাম খাঁ তাদের জমিদারী জায়গীর স্বরূপ ফেরত দেন।অনন্যোপায় হয়ে বারো ভূঁইয়াদের নেতা মুসা খানও ইসলাম খানের নিকট আত্মসমর্পণ করেন,সম্রাটের আনুগত্য মেনে নিয়ে সাম্রাজ্য বিস্তারের কাজে মোঘলদের সাহায্য করেন।ইসলাম খাঁ তার প্রতি সদয় ব্যবহার করেন এবং তা্র জমিদারি জায়গির স্বরূপ দান করে।মুসা খানের আত্মসমর্পনের পর অন্যান্য জমিদাররাও মোঘল সম্রাটের বশ্যতা স্বীকার করে।

যশোরের প্রতাপাদিত্য প্রথমে বশ্যতা স্বীকার করলেও পরে বেকে বসে। ফলে তার বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করে ইসলাম খাঁ।১৬১২ খ্রিস্টাব্দে প্রতাপাদিত্য নৌযুদ্ধে পরাজিত হয় এবং ইসলাম খাঁর নিকট বন্দী হয়।ভুলুয়ার অনন্তমানিক্য ও মোঘল বস্যতা স্বীকার করেনি।অনন্তমানিক্য মোঘলদের বিরুদ্ধে লড়াই করে হেরে যান এবং আরাকানে পালিয়ে যান।পরে তার মন্ত্রী আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়।এভাবেি ইসলাম খাঁ তার বিরুদ্ধাচারীদের পরাজিত করতে থাকেন।একে একে সকলেই আনুগত্য স্বীকার করতে বাধ্য হয়।

বুকাইনগরের আফগান জমিদার উসমান লোহানী মোঘলদের আধিপত্য মেনে নিতে পারেনি।তাই ইসলাম খাঁ তার বিরুদ্ধে অভিযানে যায়।১৬১২ খ্রিস্টাব্দের ১২ মার্চ দক্ষিণ শ্রীহট্টে ইসলাম খাঁর সৈন্যদের সাথে উসমান লোহানির ঘোরতর যুদ্ধ হয়।যুদ্ধে উসমান লোহানির দুটি চোখই নষ্ট হয়ে যায়।সে অবস্থায়ও তিনি যুদ্ধ করে রাত্রে মারা যান।নেতার মৃত্যুতে আফগানরা মোঘল সম্রাটের নিকট আত্মসমর্পণ করেন।ইসলাম খাঁ তাদের সম্রাটের রে পাঠিয়ে দিয়ে বাংলা শাসনে মনোনিবেশ করেন।

বাংলায় ইসলাম খাঁর শাসনামল

বাংলায় ইসলাম খাঁ ১৬০৮ থেকে ১৬১৩ পর্যন্ত সুবাদারের দায়িত্ব পালন করেছেন।সুবাদার ইসলাম খাঁর বিচক্ষণ কর্মকুশলতার ফলে নোয়াখালী ও শ্রীহট্ট পর্যন্ত সমগ্র বাংলায় মোঘল শাসন প্রতিষ্ঠা করেন।সুবাদার ইসলাম খাঁ বাংলার জমিদারদের দমন করে এক বিশেষ মর্যাদা অর্জন করেছিলেন।যেহেতু বাংলা অঞ্চলটি সম্রাটের রাজধানী থেকে বহুদূরে অবস্থিত ছিল সেই সুযোগে ইসলাম খাঁ কিছুটা স্বেচ্ছাচারী হয়ে গিয়েছিল।ইসলাম খাঁ অন্যান্য কর্মচারীদেরকে তাকে কুর্নিশ করার নির্দেশ দিত।সম্রাটের অনুমতি ছাড়াই কর্মচারীদের কঠিন সাজা দিত।সম্রাট জাহাঙ্গীর এসব জানতে পেরে তাকে সতর্ক করে ফরমান জারি করেন। এরপর ইসলাম খাঁ বাংলার পার্শ্ববর্তী রাজ্যগুলো মোঘল সাম্রাজ্যভুক্ত করার সংকল্প করেন।১৬১৩ সালে ইসলাম খাঁ কাছার রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান প্রেরণ করে সফল হন।এরপর তার নির্দেশে শেখ কামাল পরীক্ষিতের রাজধানী গিলাহ আক্রমণ করে দখল করেন ফলে সমগ্র কামরূপ মোঘল সাম্রাজ্যভূক্ত হয়।

ঢাকায় ইসলাম খাঁর কীর্তি 

আওলাদ হোসেন লেনের মসজিদটি ঢাকা শহরের প্রাচীনতম মসজিদ।এটি নির্মান করেন ইসলাম খাঁ।ঢাকার বর্তমান কেন্দ্রীয় কারাগার ইসলাম খাঁ পুনঃনির্মান করেছেন।এটা ইসলাম খাঁর শাসনামলে দূর্গ ছিল।

ইসলাম খাঁর মৃত্যু 

ইসলাম খাঁ ১৬১৩ খ্রিস্টাব্দের ২১ আগষ্ট ঢাকার অদূরে ভাওয়াল অঞ্চলে মৃত্যুবরণ করেন। ইসলাম খাঁর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যায়নি। ইসলাম খাঁকে প্রথম সমাহিত করা হয়েছিল ঢাকার বাদশাহী বাগে বর্তমান পুরোনো হাইকোর্ট এলাকায়।পরে ইসলাম খাঁর দেহাবশেষ নিয়ে আবারো ফতেহপুর সিক্রিতে তাঁর দাদার কবরের পাশে সমাহিত করা হয়।





এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
2 জন কমেন্ট করেছেন ইতোমধ্যে
  • Unknown
    Unknown August 22, 2021 at 11:21 PM

    ঢাকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম।

  • MD Abdullah Al Mamun
    MD Abdullah Al Mamun August 23, 2021 at 3:36 AM

    আপনাকে অনেক ধন্যবাদ, পাশে থাকবেন।

মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

The DU Speech-এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন, প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়

comment url